বয়স তখন আমার আঠারো উনিশ। ময়মনসিংহ শহরের একটি সিনেমা হলে দুপুরের শো ভেঙেছে। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সা। আমি একটি রিক্সায় উঠে বসলাম। ভিড়ের কারণে রিক্সা খানিক থেমে আছে, খানিক চলছে। ওই থেমে থাকবার সময় আমার ডান বাহুতে হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলাম। দেখি, একটি আধ-খাওয়া জ্বলন্ত সিগারেট আমার বাহুতে চেপে ধরেছে বারো-তেরো বছর বয়সের একটি ছেলে। পরনে শার্ট, লুঙ্গি। ছেলেটিকে আমি চিনি না, কোনওদিন দেখিনি। আমি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলাম। ছেলেটি দিব্যি হাসতে হাসতে চলে গেল। ভাবছিলাম চিৎকার করব, কাউকে ডাকব, অথবা দৌড়ে ছেলেটিকে ধরব, লোক ডেকে তার বিচার চাইব। মেয়েদের একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে, সম্ভবত সে কারণেই ছেলেটিকে শাস্তি দেবার জন্য সেদিন কোনও চেষ্টা করিনি। আমি ওই বয়সেই চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম আমি ছেলেটিকে ধরব অথবা ধরবার জন্য লোকজনের সাহায্য চাইব, সবাই আমাকে ভিড় করে দেখবে, আমার শরীরের বাঁক দেখবে, উজ্জ্বলতা দেখবে, যন্ত্রণা দেখবে, আমার আর্তস্বর, আমার ক্রোধ, আমার কান্না দেখবে। কেউ আহা উহু করবে, কেউ গায়ে পড়ে জানতে চাইবে ব্যাপারটি কী, কেউ ছেলেটিকে ধরে এনে কষে দুই থাপ্পড় মারবার কথা বলবে, কেউ আমার বাড়ি কোথায়, বাবা কে ইত্যাদির খোঁজখবর নেবে। আসলে সবাই তারা আমাকে উপভোগ করবে। আমার অসহায়ত্ব উপভোগ করবে। পোড়া বাহু দেখবার নাম করে আসলে আমার সুডোল খোলা বাহুটিই দেখবে। আমি চলে গেলে পেছনের শুভার্থীরা সমস্বরে সিটি দেবে। এসব ভেবেই আমি আমার সমস্ত যন্ত্রণা নিজের ভেতরে চেপে রেখেছিলাম।
আমার ডান বাহুতে এখনও পোড়া দাগ, আমি সেই নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে চলেছি। আমি ওই অশিক্ষিত ছেলেটিকে দোষ দেব কী, শিক্ষিতরাই যেখানে নির্দোষ নয়। আমার চোখের সামনে বান্ধবীর উরুতে চিমটি কেটে দৌড় দিয়েছে একটি ছেলে, আমার বোনের ওড়না টেনে পালিয়েছে একটি অচেনা যুবক, ভিড়ের মধ্যে স্তন ও নিতম্ব স্পর্শ করবার জন্য ওত পেতে থাকে একশ একটা অন্ধকার হাত। সেই হাতগুলো সব অশিক্ষিতের নয়, আমি জানি, ওখানের অনেক হাতই শিক্ষিত হাত।
এসবের কোনও প্রতিবাদ আমি করি না। বরং আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি, এইজন্য যে, এখনও এসিড ছুঁড়ে কেউ আমার মুখ পোড়ায়নি, আমার