আমার বন্ধু হাবিবুল্লাহ
নির্বাচিত কলাম – আমার বন্ধু হাবিবুল্লাহ

হাবিবুল্লাহ নামে আমার এক বন্ধু ছিল মেডিকেল কলেজে। সে আমার তুই-তোকারি বন্ধু ছিল। দেখতে চমৎকার একটি ছেলে

হাবিবুল্লাহ নামে আমার এক বন্ধু ছিল মেডিকেল কলেজে। সে আমার তুই-তোকারি বন্ধু ছিল। দেখতে চমৎকার একটি ছেলে। আমরা ক্লাসে, ক্যান্টিনে, ওয়ার্ডে, করিডোরে যখন পাশাপাশি চলতাম, ছাত্ররা দেখে বলত—‘বন্ধুত্ব না ছাই!’

 

সবাই ভাবত দুজন ছেলেমেয়ে সারাদিন হাঁটছে, কথা বলছে, পড়ছে, তাদের মধ্যে প্রেম না হয়ে যায় না। কেউ বিশ্বাসই করত না ছেলে ছেলেতে যেমন বন্ধুত্ব হয়, আমাদেরও তেমন। আমরা পাঁচ বছর একসঙ্গে পড়েছি, এই পাঁচ বছরে হাবিবুল্লাহ্ কখনও আমার আঙুল স্পর্শ করবার লোভ করেনি।

 

সঙ্গে যেমন ঠাট্টা করতাম, হাসতাম, হাবিবুল্লাহর সঙ্গেও ঠিক তেমন তেমন করতাম। ডালিয়া যেমন আমার বাড়ি আসত, ভাত খেত, হাবিবুল্লাহও আসত, খেত।

 

আমার কেমন গর্ব হত। সবাইকে তুড়ি মেরে আমার বড় দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করত—হয়, ছেলে-মেয়েতেও বন্ধুত্ব হয়।

 

পাঁচ বছর পর একদিন হাবিবুল্লাহ আমাকে প্রথম চিঠি লেখে। চিঠির কথাগুলো এই ছিল যে, আমরা তো এতদিন কেবল বন্ধুই ছিলাম—আমরা পরস্পরকে এত ভালবাসি যে, যে কোনও বিচ্ছিন্নতা আমাদের বড় কষ্ট দেবে। একমাত্র বিয়েই আমাদের বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন রাখতে পারে। তুই কি খুব রাগ করবি যদি বিয়ের কথা বলি ?

 

মনে আছে সেদিন সারারাত কেঁদেছিলাম। কেঁদেছিলাম এই কারণে যে, আমার কেবল মনে হচ্ছিল–পাচটি বছর যাদের কাছে আমি বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিয়েছি অন্যরকম, যারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে ‘প্লেটোনিক লভ বলেও কিছু আছে জগতে, তাদের কাছে আমি কী ভীষণ হেরে গেলাম। হাবিবুল্লাহর ওপর আমার বড় রাগ হয়েছিল।

 

পরদিন থেকে তার সঙ্গে আমি কোনও কথা বলিনি, আজও না। সে পরে অনুতপ্ত হয়েছে, ক্ষমা চেয়েছে। বন্ধুত্বটিই আবার ফিরে চেয়েছে। আমি অনড়, তার সঙ্গে একটি শব্দ উচ্চারণ করতে আমার ঘৃণা হয়েছে।

 

সেই সুদৰ্শন মেধাবী যুবক হাবিবুল্লাহর কথা আমার হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে। মা মাঝে-মধ্যে বলেন–হাবিবকে ফিরিয়ে দিয়ে তুই খুব ভুল করেছিস। মা হয়ত ঠিকই বলেন। তবু আমি যা ইচ্ছা করিনি, যা স্বপ্ন দেখিনি, জীবনে তা আমি মেনে নিইনি। তবে দীর্ঘদিন না মানলেও একটি সত্য পরে আমাকে স্বীকার করতেই হয়েছে ছেলে-মেয়েতে আসলে বন্ধুত্ব হয় না। এরও আরও পরে, এখন আমি নিশ্চিত যে, ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে আসলে কোনও স্থায়ী সম্পর্ক হয় না। আত্মীয়তা এক ধরনের সংস্কার মাত্র।

 

পিতা তার পুত্রকে যে চোখে দেখে, কন্যাকে সেই চোখে দেখে না। যে অতিথি কোনও লাভে আসে না, তার কদর আর কতদিন । কন্যার সঙ্গে পিতার সম্পর্ক সামাজিক ক্ষয়-ক্ষতির। কন্যা একটু ঘোমটা খুলল তো পাড়ার লোক বাপের বদনাম করল, কন্যা একটু পা বাড়িয়ে সংস্কৃতিচর্চা করল তো পাড়ায় নির্লজ্জ মেয়ে নিয়ে টি টি পড়ে গেল। কন্যা কারও সঙ্গে প্রেম করল তো পিতা আর সমাজে মুখ দেখাতে পারল না। পিতা ও কন্যার সম্পর্কে থাকে লোক-দেখানো আদিখ্যেতা, যা আদৌ আন্তরিক নয়।

 

স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক তা অনেকটা লটারির মত ব্যাপার। চোখ বুজে যারা জুয়ো খেলায় নামে, না জানি ভাগ্যে কী আছে—একটি মেয়ের জন্য স্বামী জিনিসটি সেরকমই। বাসরঘর থেকে জুয়ো


Rx Munna

447 Blog posts

Comments