উপন্যাসের শুরুতেই পরিচয় ঘটে কুটু মিয়া নামের এক রহস্যময় চরিত্রের সাথে। বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে, কুটু মিয়া একজন বাবুর্চি, যিনি বাংলা, ইংলিশ, থাই, মোগলাই সহ সব ধরনের রান্না জানেন। পাইলট স্যার তাকে একটি সার্টিফিকেট দিয়েছেন, যা নিয়েই তিনি হাজির হন আলাউদ্দিন সাহেবের বাড়িতে। প্রথমেই আলাউদ্দিন সাহেব তাকে পছন্দ না করলেও, কুটু মিয়া ধীরে ধীরে তার জীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
কুটু মিয়ার আগমনের পর থেকেই আলাউদ্দিন সাহেবের জীবন বদলে যেতে শুরু করে। একসময়ের কলেজ শিক্ষক ও লেখক আলাউদ্দিন, যিনি আগে হাজী প্রকাশনীর জন্য বই লিখতেন, কুটু মিয়ার প্রতি এক অজানা নির্ভরশীলতায় আবদ্ধ হয়ে পড়েন। কুটু মিয়ার রান্না তাকে এতটাই মুগ্ধ করে যে তিনি তার জীবনযাত্রার সমস্ত দিকেই পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে আলাউদ্দিন সাহেব তার সমস্ত স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে কুটু মিয়ার প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আলাউদ্দিন হলেও কুটু মিয়া এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কুটু মিয়া দেখতে কেমন? ঘোর কৃষ্ণবর্ণের লোকটির আকৃতি পুরনো বাড়ির খাম্বার মতো গোল, তার চুল খাবলা খাবলা, তেলতেলে মুখ আর ছোট ছোট চোখজোড়া। তার শরীর থেকে বের হয় এক অদ্ভুত বোটকা গন্ধ, যা তাকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
কুটু মিয়া কি শুধুই একজন বাবুর্চি, নাকি তার মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও কিছু? কুটু মিয়ার উপস্থিতিতে আলাউদ্দিনের জীবন কীভাবে এমন বিপর্যস্ত হয়ে উঠল? কেনই বা তিনি কুটু মিয়ার মতো একজন বাবুর্চির ওপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়লেন?
"কুটু মিয়া" শুধুমাত্র একটি হরর উপন্যাস নয়, এটি মানব মনের গভীর আতঙ্ক ও অজানা আশঙ্কার একটি চিত্র। এই উপন্যাস পাঠককে এক ভিন্নধর্মী জগতের সাথে পরিচিত করে, যা হয়তো একদিকে শিহরণ জাগায়, অন্যদিকে ফেলে যায় বহু প্রশ্নের মুখে। কুটু মিয়া চরিত্রটি যেন আমাদের সেই অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি, যা আমরা আমাদের মনে লালন করি কিন্তু কখনোই সম্মুখীন হতে চাই না।