আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনে রূপ দেওয়া হয় তাকে বলে প্রযুক্তিবিদ্যা। বিজ??

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

 

ভূমিকা : বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনে রূপ দেওয়া হয় তাকে বলে প্রযুক্তিবিদ্যা। বিজ্ঞান যখন মানুষের প্রয়োজনের সীমায় বাঁধা পড়ে তখন প্রযুক্তিবিদ্যার জন্ম হয়। আর কথ্যপ্রযুক্তি হলো, কম্পিউটার কিংবা টেলিযোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ, গ্রহণ-প্রেরণ, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির উদ্দেশ্য তথ্যের সরবরাহ সুনিশ্চিতকরণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রাকে সহজসাধ্য করা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যতিরেকে আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তা করা যায় না।

সভ্যতার বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের অগ্রগতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা। সভ্যতার অগ্রযাত্রার পেছনে কাজ করছে আধুনিক বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কার এবং সেগুলো মানবকল্যাণে ব্যবহারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে সুখ-স্বচ্ছন্দ্যময় জীবন এনে দিয়েছে। ফলে মানুষ উন্নত চিন্তা ও চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে নব নব আবিষ্কারে পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর বিজ্ঞানের সব রকম চেষ্টা, চিন্তা, আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা একই স্রোতধারায় আবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদ্যার কারিগরি জ্ঞান মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। প্রযুক্তিবিদ্যাই সভ্যতাকে আধুনিক করে তুলেছে। মানুষের যখন যান্ত্রিক শক্তি অজানা ছিল তখন জীবনসংগ্রামে মানুষ শ্রমকেই আশ্রয় করেছিল। শস্য উৎপাদনে, হাতিয়ার নির্মাণে, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন- কাপড়-চোপড়, ঘরবাড়ি, তৈজসপত্র তৈরিতে মানুষ হাতে ব্যবহার করত। পরবর্তীতে তা পরিবর্তিত হয়ে প্রযুক্তির আওতায় আসে। তখন স্বল্পশ্রমে স্বল্প সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। ধীরে ধীরে এই উৎপাদন মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে, আরও দ্রুত ঘুরতে শুরু করে সভ্যতার পরিবর্তনের চাকা। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশে পৃথিবীজুড়ে নবচেতনার সঞ্চার হয়েছে এবং তা পৃথিবীকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেই অগ্রযাত্রাকে করছে আরও গতিশীল। বিজ্ঞানে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলেই সভ্যতার ক্রমোন্নতি হতে হতে আজকের আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার : প্রযুক্তি মানুষের উপকারী বন্ধুর মতো। আর তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গ। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ যেখানে মানুষ আছে, সেখানেই পৌঁছে গেছে বিজ্ঞানের কল্যাণের আলো। মানুষের মৌল-মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগানে তথ্যপ্রযুক্তি নানাভাবে সহায়তা দান করছে। নিচে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।

 

১. কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ।

২. দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়নের অন্তরায়কে তুলে ধরা।

৩. শিশু ও মায়ের মৃত্যুরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্যাদি পরিবেশন করা।

৪. মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতামত ও পরামর্শ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা।

৫. বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে, অর্থনৈতিক লেনদেন সূচক নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।

৬. বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে সহায়তা করা।

৭. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম তথ্য সরবরাহ ও পরিবেশন করা।

৮. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অগ্রগতির মূল বিষয় সম্পর্কে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কর্মীদের সচেতন ও সহায়তা দান করা।

৯. মানুষকে কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করা।

১০. আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগানো।

১১. শিক্ষা বিস্তার, মানবীয় মূলবোধ সৃষ্টি এবং সহিষ্ণুতা বিষয়ে মানুষের মধ্যে আত্মসচেতনতাবোধ সৃষ্টি করা।

১২. অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ ইত্যাদি।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি : আদিকাল থেকেই মানুষ একজন অন্যজনের সাথে, এক দেশ অন্য দেশের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কবি কালিদাস মেঘদূতের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়ার কাছে প্রণয়বার্তা পাঠানোর কথা বলেছেন। ক্রমান্বয়ে চিঠিপত্রাদির প্রচলন হয়। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে মৌর্যের রাজত্বকাল থেকে প্রশিক্ষিত পায়রা সংবাদ বহন করত। পরে ঘোড়া, রাজদূত, রানার এ কাজ করত। চিঠি মানুষের কাছে প্রামাণ্য দলিল বিধায় এখনও টিকে আছে। একসময় আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ছিল টেলিগ্রাফ। সময়ের আবর্তে তা এখন আর টিকে নেই। বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় যোগাযোগের জন্য এসেছে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টানেট, ই-মেইল। বোতাম টিপলেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিদেশের খবর পর্যন্ত অনায়াসেই পৌঁছে যায় আমাদের কাছে। এক মুহূর্তের মধ্যেই মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে শব্দের গাঁথুনি দিয়ে নিজের কুশলাদি পৌঁছে দেওয়া যায় প্রিয়জনদের কাছে।

 

ফেসবুকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টেক্সট পাঠিয়ে যোগাযোগ করা যায়। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ রক্ষার জন্য ফোন করা যায়, কম্পিউটারে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে বক্তা ও শ্রোতার ছবি এবং তার অবস্থান, মুভমেন্ট ইত্যাদি দেখা যায়।

 

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। রাজনীতি, অর্থনীতি সবক্ষেত্রেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ অবারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে মুহূর্তেই ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বিশ্ববাসী জানতে পারছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে বই পড়ে, দেশ-বিদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে জ্ঞানের যোগাযোগ রক্ষা করছে। ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদান ও দরকারি ফাইল প্রেরণ করা যায়। এভাবে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি মানুষকে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল এক জগতে প্রবেশ করেছে।

শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি : বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তার সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। অন্যদিকে প্রযুক্তি মানবজীবনে ভোগ ও উপভোগের সমস্ত উপাদানের যোগান দিয়ে পৃথিবীকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত করার কাজ করছে এবং মানুষের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, কর্মস্পৃহা, মানবীয় বোধ ইত্যাদিকে জাগিয়ে তুলছে। সময়ের যথার্থ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলছে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক লেনদেন, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি পরিচালনা করা হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আসছে। মুহূর্তের মধ্যেই এ প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি, রোগনির্ণয় কৌশল এবং নতুন রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারছে।

 

তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করে। শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায়তায় রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অল্প সময়ে অধিক কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে, মনকে প্রফুল্ল করে। মানুষ তখন পূর্ণ উদ্যমে নিজ নিজ কাজে মনোযোগী হয়।

বিনোদনে তথ্যপ্রযুক্তি : বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রেডিওতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, গান ও খবর ইত্যাদি শোনা যায়। টেলিভিশনে নাটক, সিনেমা, গান, নাচ, ধর্ম, ব্যবসায় সংক্রান্ত আলোচনা, বিতর্ক, তথ্যচিত্র প্রভৃতি নানা অনুষ্ঠান শোনা ও দেখা যায়। বর্তমানে প্রায় সব মোবাইল সেটেই বিবিসিসহ দেশি-বিদেশি বহু রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনা যায়। ছবি তোলা যায়। মেমোরি কার্ড ব্যবহার করে গান, ভিডিও ইত্যাদি দেখা যায়। ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে দেশ-বিদেশের তথ্যচিত্র ও বিনোদন উপভোগ করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। এক কথায়, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রযোজনীয় সব রকম আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়।

গবেষণা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি : বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। এজন্য প্রতিটি দেশেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেট বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যের আন্তঃপ্রবাহ চলে আসছে। ফলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা, জার্নাল, তথ্য, ফিচার প্রভৃতি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে আমরা খুব সহজেই ঘরে বসে পেয়ে যাই। আর তা কাজে লাগিয়ে আমাদের গবেষণাধর্মী কাজ সম্পন্ন করে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও সরকারি ও বেসকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই প্রযুক্তির সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের সংস্থাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন আর্কাইভ, বিভিন্ন এনজিও, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এদেশের মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, লাইব্রেরি, জাদুঘর, ক্রিড়া সংগঠন, বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের নিজ নিজ গবেষণা কাজে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব : তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে মানুষ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো অপরের সাথে পারস্পরিক শক্তি প্রদর্শনের হীন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে মানবসভ্যতা হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষ ক্ষতিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে; দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে হানাহানি বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম প্রধান মাধ্যম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ব্যবহারকারী অনেক সময় নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এছাড়া পর্নোগ্রাফি চিত্রের মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় ঘটানো হয়। কেউ কেউ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি চর্চায় মেতে ওঠে, যা আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্ষতিকর। কাজেই ইন্টারনেটসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিকে ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ : বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। সরকার প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, টেক্সস্ট বুক সফ্টকপির ব্যবস্থা, অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি চাকরির আবেদন, ফি জমাদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন ফরম জমা দেওয়া প্রভৃতি কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে। সারাদেশের জেলাগুলোর সমস্ত তথ্য এবং প্রতিদিন ঘটে যাওয়া তথ্য জানার জন্য সরকার জেলা তথ্য বাতায়ন নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল কৃষিব্যবস্থা। ইতোমধ্যে দেশে ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজও শুরু হয়েছে। ই-কমার্স, ই-লার্নিং, ই-বুকিংয়ের পাশাপাশি ই-ভোটিং কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।

 

দেশে প্রথম আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে প্রায় ৬০টি সেবাদাতা ও সফ্টওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এক হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী এতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ঢাকার আগারগাঁওস্থ আইডিবি ভবন প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিএস কম্পিউটার সিটি। সরকার ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আইটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে।

উপসংহার : তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশে পৃথিবীর প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সাইবার মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এবং নতুন মোবাইল অ্যাপলিকেশনের হাত ধরে অনলাইন আজ বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। আগামী ২০২০ সালে এটি হবে অপরিহার্য। বিশ্বের অধিকাংশ কাজেই মোবাইলের মতো সহজে পৌঁছে যাবে ইন্টারনেটের সুফল। ব্যবসায়, বিপণন, ভার্চুয়াল যোগাযোগ এ তিন পথই এখন তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দখলে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের পুরো কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন- তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমে বিশ্বের অনুন্নত জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।


ALEX SAJJAD

82 Blog posts

Comments