আমাদের গ্রাম

কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায়-

“আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন
মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন।”

আমাদের গ্রাম

 

সূচনা : গ্রামের নাম পলাশপুর। উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তে নদী কল্ কল্ গানে বয়ে চলে নিরবধি। চিত্তহারী দৃশ্যাবলীতে সমৃদ্ধ আমাদের এ গ্রাম। কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায়-

 

“আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন 

মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন।” 

 

সত্যিই, দিগন্ত ফসলের মাঠ গ্রামের মানুষকে হাতছানি দিয়ে যেন ডাকে। সারা দিনমান কৃষকের হালচাষ, দুপুরে রাখালের বাঁশির সুর, সন্ধ্যায় ধূলি উড়িয়ে গরুর পালের ছুটাছুটি এক অপরূপ অনুভূমির সৃষ্টি করে এখানে। চারদিকে আম, জাম, নারকেল, তাল, সুপারীর বনবীথি-এ যেন আবহমান গ্রাম বাংলার একটি ছায়া ঢাকা শান্তির নীড়। পাখির কলরবে এখানে সূর্য উঠে- পাখির ডানায় ভর করে নামে সোনালী সন্ধ্যা। 

বিবরণ : জেলা শহর বরিশাল থেকে ৭/৮ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ঘন বসতিপূর্ণ আমাদের গ্রাম। পশ্চিম প্রান্তে ধরলা নদী পার হলেই গ্রামের চৌহদ্দি শেষ। দক্ষিণে মস্ত এক মাঠ- ‘রাণী বিবির মাঠ’। উত্তরে ‘মাথা ভাংগা’ নদী, পূর্ব প্রান্তে ‘কনকদিয়া ইউনিয়ন’। মোটামুটি মাঝারি ধরনের আয়তন গ্রামের। 

অধিবাসীদের জীবিকা : গ্রামের অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী। ধান ও পাট আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন ফসল। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদের গ্রাম আজ আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মতই আমাদের গ্রামে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোক বসবাস করে। গ্রামের বেশ কয়েকজন শিক্ষিত প্রবীণ ও তরুণেরা স্থানীয় কলেজ ও হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ধোপা, নাপিত, কামার, স্বর্ণকার ও ছুতারও রয়েছে আমাদের পলাশপুরে। 

প্রধান আকর্ষণ : পলাশপুরের প্রধান আকর্ষণ ধরলার তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতল অট্টালিকা- ‘পলাশপুর কলেজ’। এছাড়া রয়েছে উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয়। ডাক্তারখানা, পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ডাক ও তার অফিস, টেলিফোন ভবন, সাররেজিষ্ট্রী অফিসসহ উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারী অফিসগুলো এ গ্রামেই অবস্থিত। ফলে সমগ্র উপজেলার মধ্যে আমাদের এ গ্রামের গুরুত্ব যে সবচেয়ে বেশি তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। দক্ষিণে ‘রাণী বিবির মাঠ’টি গ্রামের অন্যতম আরেক আকর্ষণ- যদিও এর সবটাই আমাদের গ্রামের মধ্যে পড়েনি। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে বর্ধিষ্ণু হাট- পলাশপুরের হাট। শুক্রবার হাটের দিনে বহুলোকের সমাগম হয়। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা : পলাশপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটিভাবে উন্নত। গ্রামের প্রায় সব প্রান্ত থেকেই প্রধান পাকা সড়ক দিয়ে হাট ও স্কুল-কলেজে যাওয়া-আশা করা যায়। এছাড়া ইট-সুরকীর রাস্তা আছে প্রায় মাইল খানেক। ‘রাণী বিবির মাঠ’ লাগোয়া জেলা সড়ক দিয়ে জেলা শহরেও যাওয়া যায়। নদী পথে লঞ্চ চলা চল করে। হাটের দিন ভিড় জমায় দেশী নৌকো। জেলা সদরের সঙ্গে লঞ্চে নৌ-যোগাযোগ আছে। 

উপসংহার : বাংলাদেশকে বলা হয় একটি বিশাল গ্রাম। পলাশপুর সে গ্রামের একটি। আবহমান বাংলার রূপচিত্র দেখা যায় আমাদের পলাশপুর দেখলে। কবি যেমন গেয়েছেন- 

 

“ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে তারি এক পাশ দিয়া, 

কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া। 

ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী, 

পারের খবর টানাটানি করি 

বিনাসূতী মালা গাঁথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া; 

বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দু্ইটি তটের হিয়া।” 

 

-তেমনি আমাদের গ্রাম পলাশপুর। মনে প্রাণে আমরা ভালোবাসি আমাদের গ্রামকে। এ গ্রাম আমাদের চোখ জুড়ায়, আমাদের বুক জুড়ায়- মায়ের বুকেতে বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়া আমাদের সুখে-দুঃখে, মিলে-মিশে আছি প্রাণের প্রিয় পলাশপুরে। আমরা সবাই যেমন আমাদের গ্রামকে ভালবাসি তেমনি একে আদর্শ গ্রামে পরিণত করার কাজেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই স্বরচিত ছন্দে বলি- 

 

“গ্রামের নাম পলাশপুর 

প্রাণে আমার জাগায় সুর 

নিত্য সুমধুর।”

 

একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো:

 

নাম ও অবস্থান : আমাদের গ্রামটি বেশ উন্নত। এটি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। এর নাম কাছিপাড়া। এক কালে এ অঞ্চলটি বনভূমি ছিল। এ বনভূমির গভীর জঙ্গলে বাস করত অনেক বাঘ। জানি না কোন্ সাহসী লোক এ বনভূমি উজাড় করে বসবাস করার উপযুক্ত স্থান গড়ে তুলেছিল। এ গ্রাম পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় অবস্থিত। এ গ্রামেই আমার বাল্যকাল ও কৈশোর কেটেছে শান্তিতে। 

আয়তন ও লোকসংখ্যা : আমাদের এ গ্রামটি বেশি বড় নয়। দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার ও প্রস্থ আধা কিলোমিটার। এখানে তিন হাজারের বেশি লোক বাস করে। অধিবাসীদের অধিকাংশই মুসলমান। আর কিছু হিন্দু পরিবার রয়েছে। 

অধিবাসীদের পেশা : গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু লোক সরকারি চাকরি ও কিছু লোক ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ঘরবাড়ি কাঠ ও টিনের তৈরি। গরীব গ্রহস্থদের ঘর বাঁশ, গোলপাতা ও ছনের তৈরি। বেশ কিছু ধনী লোক পাকা বাড়িতে বাস করে।

 প্রাকৃতিক দৃশ্য : গ্রামের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে গেছে তেতুলিয়া নদী। এক সময় বর্ষার উদ্দামতায় নদীটিকে গ্রামের হৃদয়ে শিহরণ জাগাত। গ্রামের উত্তরে বনভুমি, দক্ষিণে বিস্তৃত মাঠ। গ্রামের মাঝে কাজল কাল জল ফুটে ওঠে প্রকাণ্ড দীঘিতে। প্রকৃতি এ গ্রামকে বছরের ছয়টি ঋতুতেই সাজায় বিশেষ সাজে। সারা গ্রামখানি লতায়-পাতায় ফুলে গন্ধে ভরে ওঠে। 

প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : আমাদের গ্রামে একটি ডাকঘর, একটি সরকারি ডাক্তারখানা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বালিকা, বিদ্যালয় ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়ে। গ্রামে একটি পাকা মসজিদ আছে। গ্রামের উত্তর দিকে বীরপাশা বাজার নামে একটি বাজার রয়েছে। 

 

একটি পাকারাস্তা গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে। এটি বাইরের সাথে এ গ্রামের যোগাযোগ রক্ষা করছে। বছরের বার মাসই রাস্তা দিয়ে বাস, ট্রাক, সাইকেল, রিকশা, ভ্যান প্রভৃতি চলাচল করে। গ্রামের মধ্যে কয়েকটি কাঁচা রাস্তাও আছে। 

উৎপন্ন দ্রব্য : আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ধান, পাট, আঁখ, ডাল, তামাক, সরিষা, মরিচ, হলুদ, শাক-সবজি প্রভৃতি শস্য। প্রতিটি বাড়িতে সারা বছর প্রচুর তরিতরকারি ও ফলমূল জন্মে। আর পুকুরে মাছের চাষ হয়। প্রতিদিন আমাদের গ্রাম থেকে সড়কপথে প্রচুর তরিতরকারি, মাছ, ডিম ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। 

উপসংহার : এত সম্পদেও অভাবের অন্ত নেই গ্রামে। শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, আর নানা অভাব, নানা রোগ, নানা ভাবনা গ্রামের সুখের নীড়ে এনেছে অশান্তি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে সকলের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তবেই আমাদের গ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ফিরে আসবে।


ALEX SAJJAD

82 blog messaggi

Commenti