ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এক প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক মহিমায় ভরপুর। ৫৭২টি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি, ঘন সবুজ অরণ্য, প্রাচীন উপজাতি এবং ঔপনিবেশিক যুগের স্মৃতি।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অপূর্ব। এখানে বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট, নীল জলরাশি, প্রবালপ্রাচীর, এবং ঘন ম্যানগ্রোভ বনভূমি রয়েছে। পর্যটকরা এই দ্বীপপুঞ্জে এসে স্কুবা ডাইভিং, স্নোরকেলিং এবং অন্যান্য জলক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিশেষ করে হ্যাভলক দ্বীপের রাধানগর বিচ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচিত।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় এই দ্বীপপুঞ্জে 'সেলুলার জেল' স্থাপিত হয়, যা আজও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী। এই কারাগারে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে বন্দি করা হয়েছিল, যার ফলে এটি 'কালাপানি' নামেও পরিচিত। সেলুলার জেল বর্তমানে একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে এখনও কিছু প্রাচীন উপজাতি বাস করে, যেমন জারোয়া এবং ওংগি। এদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা, বিশ্বাস এবং রীতিনীতি আজও অবিকৃত রয়ে গেছে। এই উপজাতিরা মূলত দ্বীপের বনভূমিতে বাস করে এবং আধুনিক বিশ্বের সাথে তাদের সংযোগ অত্যন্ত সীমিত।
সম্প্রতি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। নতুন নতুন হোটেল, রিসোর্ট এবং পর্যটন সুবিধা তৈরি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তবে, পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ সংরক্ষণও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ একটি প্রকৃতির অপার সৃষ্টি। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং প্রাচীন উপজাতি সংস্কৃতি মিলেমিশে এক অনন্য পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করেছে। তবে এই সৌন্দর্য এবং ইতিহাস রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই অনন্য স্থানটি উপভোগ করতে পারে।