পরিকল্পনা:
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায়। উক্ত কাজ গুলো সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা না থাকলে সেগুলো করতে পারবেন না। এই কারণে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসার আগে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কি আসলেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেখতে চান?
যাইহোক, বুদ্ধিমানেরা কোন কাজ শুরু করার আগে পরিকল্পনা করে নেয়। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আমাদের একটি বুলেট-প্রুফ পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে হবে। পরিকল্পনা সাজানোর সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে অনলাইনে সহজ এবং কঠিন উভয় কাজ পাওয়া যায়। এখানে কোন কাজ এক ঘণ্টায় শেষ করা যায় আবার কোন কাজ করতে ১৫ দিন লাগে।
অনলাইনের প্রতিটি কাজের মধ্যে আপনাকে এমন কাজ নির্বাচন করতে হবে যা আগামী ১০ বা ২০ বছর পর্যন্ত থাকবে। কারণ শেখার পর যদি সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেখানে দেওয়া সময় সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়ে যাবে। মোটকথা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আপনি কি কি শিখবেন, কোথায় থেকে শিখবেন এবং কত সময়ের মধ্যে শিখবেন তা নির্ধারণ করে এগোতে হবে।
কাজ শেখার আউটলাইন তৈরি:
আপনার পছন্দের টপিক নির্বাচন করার জন্য আপনাকে একটু পরিশ্রম করতে হবে। অনলাইনে পাওয়া যায় এমন প্রধান প্রধান কাজগুলো সম্পর্কে সার্চ করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এতে আপনি যে বিষয় বোঝেন সেই বিষয় নির্বাচন করতে সহজ হবে।
স্মার্ট ক্যারিয়ার তৈরি করা যাবে দেখে লোভে পড়ে কোন টপিক নির্বাচন করা যাবে না। কারণ উক্ত বিষয় শিখতে গেলে তখন মাঝপথে ইন্টারেস্ট কমে যাবে এবং শেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যাইহোক, আপনার পছন্দের বিষয় নির্বাচন করা হয়ে গেলে একটি প্রপার গাইডলাইন তৈরি করে নিতে হবে।
কাজ শেখার জন্য আউটলাইন তৈরি করলে সেই অনুযায়ী কাজ শেখা অনেক সহজ আর দ্রুত হয়। গাইডলাইন থাকার কারণে রুটিন থেকে কখনো অন্য বিষয়ে সময় নষ্ট হয় না। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেখা যায়।
প্রোজেক্ট তৈরি:
পর্যাপ্ত সময় নিয়ে কাজ শেখার পড়ে কাজ হলো কিছু বাস্তবধর্মী প্রোজেক্ট তৈরি করা। অর্থাৎ এতদিন ধরে আপনি যে বিষয়ে শিখলেন সেই বিষয়ের উপর নির্ভর করে কিছু কঠিন প্রোজেক্ট তৈরি করতে হবে। এই প্রজেক্টগুলো একাধারে আপনার স্কিল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং আপনার পোর্টফলিও স্ট্রং করবে।
প্রোজেক্ট তৈরি করার জন্য আপনি গুগল থেকে আইডিয়া নিতে পারেন অথবা কোন ভার্সিটি প্রোজেক্ট করতে পারেন। অন্যদিকে, কাজের গতি বৃদ্ধি করার জন্য ফেসবুক থেকে আপনার শেখা বিষয়ের উপর এক্সপার্ট এমন কারো সাথে ফ্রিতে কাজ করুন। এতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং সরাসরি ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার কনফিডেন্স পাবেন। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রপার রিসার্চ করার বিষয়ে রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পোর্টফোলিও তৈরি:
কাজ শেখা শেষ করে যখন প্রোজেক্ট করা হয় তখন পোর্টফোলিও এর প্রয়োজন পরে। পোর্টফোলিও হলো আপনার অভিজ্ঞতার প্রমাণ। আপনার পোর্টফোলিও তে যত কাজের প্রমাণ এবং অভিজ্ঞতা থাকবে তত তাড়াতাড়ি অনলাইনে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
অল্পকিছু অর্থ ব্যয় করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তা পোর্টফোলিও হিসেবে রাখলে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সার থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।
মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি
উপরের সকল কাজ ঠিকভাবে করার পর আপনি এখন অনলাইনে ইনকাম করার জন্য রেডি। শুরুতে কাজ পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইবার বা আপওরকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
এগুলোর পাশাপাশি লিংকডইন সহ অন্যান্য প্রফেশনাল ওয়েবসাইটে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে। বিশেষ করে মার্কেটপ্লেসে সব সময় অ্যাক্টিভ থেকে কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে। বর্তমানে ফাইবার নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অনেক সহজে ক্লাইন্ট খোঁজার সুবিধা দিয়েছে। এখানে গিগ খুলে নিজের কাজের পারদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে ক্লাইন্ট নিজেই কাজের অফার দেয়।
পেমেন্ট সিস্টেম:
পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট সেটআপ করা যতটা সহজ মনে করা হয় আসলেই ততটা সহজ। বাংলাদেশে পেপাল না থাকায় সকল ফ্রিল্যান্সারগুলো পেওনিয়ার, ওয়াইজ, ডিরেক্ট ব্যাংক ট্র্যান্সফার মেথড ব্যবহার করে।
মার্কেটপ্লেসে যখন আপনি কাজ সাবমিট করবেন তার বিনিময়ে যে টাকা পাবেন তা উল্লিখিত পেমেন্ট মেথডের মাধ্যমে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে হবে। মোটকথা অনলাইন থেকে আপনি যা যা ইনকাম করবেন তা পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে দেশে নিয়ে আসতে হবে।
এ কারণে সর্বশেষ ধাপ হিসেবে পেমেন্ট নেওয়া যাবে এমন ওয়েবসাইট বা সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
উপরে উল্লিখিত ধাপ গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় প্রবেশ করা যাবে। অন্যথায় ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে উল্টো নষ্ট হয়ে যাবে।