মেঘের উৎপত্তি হয় মূলত জলীয় বাষ্প থেকে, যা সূর্যের তাপের প্রভাবে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে উঠে যায়। বায়ুমণ্ডলের শীতল স্তরে পৌঁছে এই বাষ্পগুলো ক্ষুদ্র জলকণা বা বরফকণায় রূপান্তরিত হয়, যা একত্রে মেঘ তৈরি করে। মেঘের গঠনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাতাসের আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এবং বায়ুর গতিবিধি।
মেঘের রং নির্ভর করে তাদের ঘনত্ব, পুরুত্ব এবং সূর্যের আলো কতটা শোষিত বা প্রতিফলিত হচ্ছে তার উপর। সাধারণত মেঘ সাদা দেখা যায় কারণ সূর্যের আলোতে থাকা বিভিন্ন রঙ একত্রে প্রতিফলিত হয়ে সাদা আলো তৈরি করে। তবে মেঘের ঘনত্ব বেশি হলে তা সূর্যের আলো শোষণ করে এবং ধূসর বা কালো রং ধারণ করে, যা ঝড় বা বৃষ্টির পূর্বাভাস হিসেবে দেখা যায়।
মেঘের প্রকারভেদ:
মেঘের প্রকারভেদকে সাধারণত চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: সার্কাস, কিউমুলাস, স্ট্রাটাস, এবং নিম্বাস।
1. সার্কাস মেঘ: আকাশের খুব উচ্চ স্তরে গঠিত হয়, এবং এগুলো পাতলা, সুতার মতো দেখতে।
2. কিউমুলাস মেঘ: আকাশে সাদা, তুলোর মতো দেখতে হয়। এগুলো সাধারণত সুন্দর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়।
3. স্ট্রাটাস মেঘ: আকাশকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে এবং সূর্যের আলো আটকে দেয়, যা মেঘলা আবহাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
4. নিম্বাস মেঘ: বৃষ্টির মেঘ হিসেবে পরিচিত, এটি ঘন ও কালো হয় এবং ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়।
মেঘের উড়ে চলার পেছনে কাজ করে বায়ুপ্রবাহ। যখন বায়ুপ্রবাহের গতি বৃদ্ধি পায়, তখন মেঘ দ্রুতগতিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যায়। এই প্রক্রিয়ার ফলে মেঘ কখনো পাহাড়ের চূড়ায় আটকে যায়, কখনো আবার সমুদ্রের ওপরে ভেসে যায়।
মেঘ প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা সাহিত্যে অনুপ্রেরণা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মেঘের ভিন্ন ভিন্ন রূপ, যেমন- বৃষ্টির মেঘ, প্রেমের মেঘ, কিংবা বিষাদের মেঘ, সাহিত্যিকদের কল্পনায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ধারণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় যেমন মেঘের কথা এসেছে, ঠিক তেমনই কল্পনায় বোনা হয়েছে প্রেমের, বিরহের ও আনন্দের নানা রূপক।
মেঘের সাথে মানুষের মনোজগতের এক অদ্ভুত সাযুজ্য রয়েছে। যেমন, মেঘের রঙের পরিবর্তন আমাদের মনোবৃত্তির প্রতিফলন ঘটায়। সুতরাং, মেঘ প্রকৃতির একটি সরল উপাদান হয়েও, মানবিক আবেগ ও কল্পনার জগতে এক অমর প্রভাব বিস্তার করেছে।
মেঘ শুধু প্রকৃতির এক অপরূপ সজ্জা নয়, এটি মানুষের অনুভূতির এক জটিল মিশ্রণও। এর উৎপত্তি, গঠন, রং, এবং প্রকারভেদ নিয়ে যেমন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ রয়েছে, তেমনি সাহিত্যে এর প্রভাবও অসীম। মেঘ আমাদের মনের আকাশে যেমন আনন্দের আলো ছড়ায়, তেমনি বেদনার কালো ছায়াও ফেলে। এই বৈচিত্র্যই মেঘকে করে তুলেছে চিরকালের এক আকর্ষণীয় বিষয়।