প্রাবন্ধিকতার সমৃদ্ধির এক অনন্য প্রতীক

বাঙালি সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

শেখ ওয়াজেদ আলী, যিনি "এস ওয়াজেদ আলি" নামে বেশি পরিচিত, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নাম। ১৮৯০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার বড় তাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী শেখ ওয়াজেদ আলী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্যিক। তাঁর সাহিত্যকর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য স্থান প্রদান করেছে।

 

শেখ ওয়াজেদ আলী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ১৯১৫ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৪৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা ও শিক্ষাগত সাফল্য তাঁকে সমকালীন মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে একটি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছে।

 

তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তাঁর সাহিত্যের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি এবং কাজের প্রতি অবদানের প্রমাণ। শেখ ওয়াজেদ আলী একাধারে গল্পকার, প্রাবন্ধিক, এবং ভ্রমণলেখক হিসেবে তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর লেখা অনেক সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, এবং প্রবন্ধমূলক গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে।

 

শেখ ওয়াজেদ আলীর সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো—‘গুলদাস্তা’ (১৯২৭), ‘মাশুকের দরবার’ (১৯৩০), ‘জীবনের শিল্প’ (১৯৪১), ‘প্রাচ্য ও প্রতীচ্য’ (১৯৪৩), এবং ‘ভবিষ্যতের বাঙালী’ (১৯৪৩)। এই সব গ্রন্থে তিনি তাঁর অসামান্য সাহিত্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। 'গ্রানাডার শেষ বীর' (১৯৪০) ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে তাঁকে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে। এছাড়া, 'পশ্চিম ভারত' (১৯৪৮) এবং 'মোটর যোগে রাঁচী সফর' (১৯৪৯) তার ভ্রমণকাহিনী যা পাঠকদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

 

তার প্রবন্ধসমূহ যেমন ‘আকবরের রাষ্ট্র সাধনা’ (১৯৪৯) এবং ‘মুসলিম সংস্কৃতির আদর্শ’ সাম্প্রতিক মুসলিম সংস্কৃতি ও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়বস্তু সরবরাহ করেছে।

 

শেখ ওয়াজেদ আলীর সাহিত্যকর্ম এবং তাঁর চিন্তাভাবনা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা এবং লেখনীর মাধ্যমে তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে চিরকালীন প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাঁর কর্মজীবন এবং সাহিত্য চর্চা আজও বাঙালি পাঠকদের জন্য এক প্রেরণার উৎস, যা আমাদের সাহিত্যের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।


Adeel Hossain

242 Blog posts

Comments