বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী এক সৃষ্টি, বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস "পথের পাঁচালী," অপুর শৈশব ও তার জীবনের সরল অথচ গভীর গল্প নিয়ে আবর্তিত। এই উপন্যাসটি কেবল বাংলার গ্রামীণ জীবনের রূপায়ণ নয়, বরং এতে ধরা পড়েছে মানবতার এক অনন্য রূপ।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত "পথের পাঁচালী" উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। মূলত অপুর শৈশবের কাহিনী হিসেবে পরিচিত, এই উপন্যাসটি একটি গ্রামের প্রেক্ষাপটে এক বালকের বেড়ে ওঠার কাহিনীকে সুনিপুণভাবে তুলে ধরে। অপুর দৃষ্টিতে দেখা গ্রামের জীবন, তার মা সর্বজয়ার কঠিন বাস্তবতা, পিসি ইন্দিরা ঠাকুরনের প্রতি তার মায়ের রূঢ় আচরণ, এবং তার বোন দুর্গার সঙ্গে তার সম্পর্ক, সবকিছুই গ্রামীণ জীবনের চিত্রায়ণে অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে।
উপন্যাসে যে মাধুর্য এবং অনুভূতির গভীরতা রয়েছে, তা অনবদ্য। অপুর শৈশব ও কৈশোরের প্রতিটি ক্ষণ, তার জীবনের প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা, একটি গ্রামের প্রতিটি খুঁটিনাটি পাঠকের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিভূতি ভূষণ তার লেখায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, গ্রামীণ জীবনের সরলতা এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতাকে চিত্রিত করেছেন।
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় "পথের পাঁচালী" উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করেন, যা বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। এই চলচ্চিত্রে অপু ও দুর্গার জীবন কাহিনী আরও প্রানবন্ত হয়ে ওঠে, যা উপন্যাসের পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করে। বিশেষত, গ্রামের নিস্তব্ধতার মধ্যে দিয়ে বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত রেলগাড়ির দৃশ্য এবং দুর্গার মৃত্যু পরবর্তী অপুর আবেগময় প্রতিক্রিয়া দর্শকদের কাছে অপূর্ব শিল্পকর্ম হিসেবে ধরা দেয়।
বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পথের পাঁচালী" শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় নয়, এটি আমাদের সাহিত্যের এক অনন্য নিদর্শন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠকদের মনে বেঁচে থাকবে। অপুর শৈশব ও তার বেড়ে ওঠার কাহিনী বাঙালির জীবনে চিরকালীন প্রেরণা হিসেবে থাকবে।