নীল আকাশে ইস্পাতের ডানা

বাংলাদেশের আকাশপথের গল্প

আজকের আধুনিক যুগে বিমান প্রযুক্তি এমন একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম চালিকা শক্তি। আকাশপথে যাতায়াত আজকাল দ্রুত, নিরাপদ এবং আরামদায়ক হয়ে উঠেছে, কিন্তু এই প্রযুক্তির পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সম্মিলন।

 

বিমান প্রযুক্তির শুরু হয়েছিল ১৭ শতকের মধ্যভাগে, যখন মানুষ আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখেছিল। তবে, প্রকৃত অর্থে বিমান আবিষ্কারের কৃতিত্ব যায় রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের কাছে। ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওহাইও, যুক্তরাষ্ট্রে তারা প্রথম নিয়ন্ত্রিত, চলমান, এবং ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান "ফ্লায়ার ১" সফলভাবে উড়িয়েছিলেন। এরপর থেকেই বিমান প্রযুক্তির অগ্রগতি দ্রুত ঘটতে থাকে।

 

 

বিমান আকাশে উড়ে মূলত এর বিশেষ ডিজাইন ও এর ইঞ্জিনের ক্ষমতার কারণে। বিমানের পাখা (উইং) এর বিশেষ আকৃতি ও এর উপরের এবং নিচের অংশে বায়ুর চাপের পার্থক্যের কারণে লিফট (উত্থানশক্তি) তৈরি হয়, যা বিমানকে উপরে তুলে ধরে। এছাড়া, বিমানের ইঞ্জিন জেট থ্রাস্ট তৈরি করে, যা বিমানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

 

 

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের যাত্রীবাহী ও মালবাহী বিমান চলে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বহরে বোয়িং ৭৭৭, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এবং বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ ধরনের বিমান রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের রয়েছে আধুনিক যাত্রীবাহী বিমান।

 

 

বিমান গন্তব্যের নির্ধারিত রুট বা আকাশপথ ধরে চলে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হয়। যেমন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ রুট, এবং আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালিত হয়।

 

 

প্রতিটি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করেন একজন প্রধান পাইলট (ক্যাপ্টেন) এবং একজন সহকারী পাইলট (কো-পাইলট)। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপ্টেন ফারহানা শাকিল, যিনি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একজন অভিজ্ঞ পাইলট, নিয়মিত ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন।

 

 

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (বেবিচক) দেশের বিমানবন্দরগুলো পরিচালনা করে। বিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত সুক্ষ্ম ও পেশাদারীভাবে করা হয়। এয়ারলাইন্সগুলোর নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম নিয়মিত বিমানগুলোর ইঞ্জিন, উইং, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।

 

 

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ৭টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম), এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সিলেট) সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

 

বিমান প্রযুক্তির উন্নতি, এর ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতি আজ বাংলাদেশের আকাশপথকে নিরাপদ এবং আধুনিক করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এই উন্নয়ন দেশের অর্থনীতি, ভ্রমণ, এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।


Adeel Hossain

242 Blog posts

Comments