আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, কারো ভালো লাগলেই বদনজর লেগে যায়। ইসলামে বদনজরকে একটি বাস্তব সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। হিংসা, ঈর্ষা বা অতিরিক্ত প্রশংসা থেকে উদ্ভূত এই বদনজর, মানুষের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বদনজর। রাসূল (সাঃ) এর থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। এই আর্টিকেলে আমরা জানব, ইসলামে বদনজরকে কীভাবে দেখা হয়, এর ক্ষতিকর প্রভাব কী কী এবং বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কোন কোন দোয়া ও আমল করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যথার কার্যকরী দোয়া
Content main topics List
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া
বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ঝাঁড় ফুকের সময় নিচের দোয়া গুলো পড়া যায়ঃ-
(১)
بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিং কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা ওয়া মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।
অর্থ : আল্লাহর নামে কষ্ট দানকারীর সব অনিষ্টতা থেকে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। হিংসুক ব্যক্তির কুদৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। আল্লাহ তোমাকের আরোগ্য দান করতে তারই নামে ঝাঁড়-ফুক করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
(২)
أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লিআম্মাতিন।’
অর্থ : ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (বুখারি)
(৩)
بِسْمِ اللهِ يُبْرِيْكَ ومِنْ كُلِّ داَءٍ يَشْفِيْكَ، ومِنْ شَرِّ حاِسِدٍ إذاَ حَسَدَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দাঈন ইয়াশফিকা, ওয়া মিন শাররি হাসাদিন ইজা হাসাদা, ওয়া মিন শাররি কুল্লি জি আইনিন।’
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করুন, প্রত্যেক অসুখ থেকে আরোগ্য দান করুন, প্রত্যেক হিংসুকের হিংসা থেকে এবং প্রত্যেক বদনজরের অনিষ্ট থেকে (মুক্ত করুন)।’ (মুসলিম)
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কোরআনি আমল
ইসলামে বদনজরকে একটি বাস্তব সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কোনো ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসা বা ঈর্ষা থেকে বদনজর হতে পারে। এই নেতিবাচক শক্তি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের যে উপায় শিখিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোরআনের কিছু নির্দিষ্ট সূরা পড়া।
কোন সূরাগুলো পড়তে হবে?
“সূরা ইখলাস, ফালাক এবং নাস” এই তিনটি সূরা খুবই কার্যকরী। আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি বদনজরের শিকার হন, তাহলে এই তিনটি সূরা তিনবার পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর ফুঁ দিন।
কেন এই সূরাগুলো কার্যকরী?
সূরা ইখলাস আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে বর্ণনা করে। সূরা ফালাক এবং নাস এই দুটি সূরা আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দেয়, যার মধ্যে বদনজরও অন্যতম।
হাদিস শরীফে কী বলা হয়েছে?
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, তিনি (সা.) জিন ও বদনজর থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরে যখন সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হলো, তখন তিনি (সা.) এই দুটি সূরা দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন। (তিরমিজি ২০৫৮)
কেন বদনজর হয়
যদিও এর পিছনের বিজ্ঞানসম্মত কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই, তবে সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসা, ঈর্ষা বা হিংসা করা থেকেই বদনজর হয়। ইসলামে বদনজরকে একটি বাস্তব ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। হাদীস শরীফে বদনজর সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা ও উপদেশ উল্লেখ করা হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, “চোখ লাগা সত্য।”
কেন বদনজর হয়, সে সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে:
- অতিরিক্ত প্রশংসা: যখন কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত প্রশংসা করা হয়, তখন কখনো কখনো অজান্তেই তার প্রতি নেতিবাচক শক্তি প্রেরিত হতে পারে।
- ঈর্ষা ও হিংসা: অন্যের সুখ, সম্পদ বা সৌন্দর্য দেখে কেউ যখন ঈর্ষা বা হিংসা করে, তখন তার মনে নেতিবাচক শক্তি জন্ম নেয়। এই নেতিবাচক শক্তিই কখনো কখনো বদনজরের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত আকর্ষণ: কোনো ব্যক্তি বা বস্তু যখন অতিরিক্ত সুন্দর বা আকর্ষণীয় হয়, তখন মানুষের দৃষ্টি তাতে আকৃষ্ট হয়। এই আকর্ষণ কখনো কখনো বদনজরের কারণ হতে পারে।
উপসংহার
বদনজর একটি বাস্তব সমস্যা এবং ইসলামে এর জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বদনজর থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এবং নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। কোরআনের নির্দেশিত দোয়া ও আমলগুলি আমাদেরকে এই নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলে আমরা বদনজর কেন হয়, এর ক্ষতিকর প্রভাব কী এবং বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কোন কোন দোয়া ও আমল করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।