ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যেপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ ছয় ঋতুর মধ্যে শীতের অবস্থান হেমন্তের পর আর বসন্তের আগে। গাছের ঝরা পাতায় ঘটে শীতের আগমন আর বসন্তের নতুন পাতা জাগিয়ে ঘটে শীতের বিদায়।
শীতকাল এ দেশের প্রকৃতির অন্যরকম রূপ, যা সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে শীতের সকাল। তেমনি শীতের একটি সকাল উপভােগ করার সুযােগ হয়েছিল এবারের শীতে। ছুটির সুবাদে স্নিগ্ধ একটি সকালের স্পর্শ অনুভব করা সম্ভব হয়েছিল।
শীতের সকালে কুয়াশার চাদর পরিবেশকে মনােরম করে তুলেছিল। যখন এই কুয়াশার চাদর ভেদ করে চারদিকে রূপালি আলাে ছড়িয়ে পড়ল, তখন বাড়িঘর, গাছপালা ও প্রকৃতি ঝলমল করে ওঠল । কুয়াশার কারণে পাখিরাও নীড় ছেড়ে বের হয় না, কোলাহলে মেতে ওঠে না। চারিদিক থেকে ভেসে আসে সরষে ফুলের মধুর সৌরভ।
এভাবে ব্যস্ততাহীন, ধীর লয়ে আগমন ঘটল শীতের একটি সকালের । উত্তর দিক থেকে হিম শীতল বাতাস বইতে থাকল! যেন দীর্ঘশ্বাসের মতাে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে শির শির করে এ বাতাস বয়ে যায়। এ বাতাসে পাতাগুলাে কেঁপে কেঁপে উঠল।
শীতের সকালে বাড়িতে নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে গেল। সকাল বেলার রােদে পিঠা খাওয়ার যে আনন্দ, তা সব আনন্দকেই যেন ছাড়িয়ে যায়। এই আনন্দ চারপাশে উৎসবের সমারােহ তৈরি করলেও শীতের সকাল বেলাটা মানুষ লেপ-কাঁথার নিচেই কাটাতে ভালােবাসে।
শীতের সকাল অলস আর উৎসবের আমেজে উপভােগ্য হলেও গরিবদের জন্য যে তা কতটা কষ্টের এবার সে বিষয়টি অবলােকন করলাম। গ্রামের কৃষকেরা সকাল হতেই গরু আর লাঙল নিয়ে বের হয়ে যায় মাঠে। তারা খেতে মুগ, মশুর, ছােলা, সরিষার বীজ বােনে।
কয়দিন পর যখন সেগুলাের কচি পাতা মাথা উঁচু করে তখন চারদিকে বিরাজ করে এক অপূর্ব স্নিগ্ধতা, কোমলতা। শীতের সকালে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি নামায়। খেজুর রসের লােভনীয় মিষ্টি গন্ধে তখন সকলের মন মেতে ওঠে।
ছােট ছেলেমেয়েরা সেই সকালের মিষ্টি রােদে বসে গুড় দিয়ে মুড়ি খায়। তবে বুঝতে পারলাম শহর আর গ্রামের শীতের সকালের চিত্র ভিন্ন। গ্রামের তুলনায় শহরে শীতের প্রকোপ তুলনামূলক কম। তাই শহরের মানুষ একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে।
উঁচু উঁচু দালানকোঠায় বসবাসকারী শহরের মানুষ এজন্য শীতের সকালের স্নিগ্ধতা উপভােগ করতে পারে না। সূর্যের আলাের তীব্রতা বাড়লে দূর হয় শীতের সকালের আমেজ। শীতের সকাল প্রকৃতিকে এক পবিত্র সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে, যা ছড়িয়ে থাকে সারাবেলা।