ঝর্ণা: পৃথিবীতে প্রকৃতির যে সব চমৎকার নিদর্শন আছে তার মাঝে ঝর্ণা ও জলপ্রপাত অন্যতম। পাহারের গা বেয়ে জলের ধারা মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য তৈরি করে নেমে আসে! এদের কিছুকে বলা হয় ঝর্ণা, আবার কিছুকে বলা হয় জলপ্রপাত।
নামের এরকম পার্থক্য হবার কারণ কি? পার্থক্যটা কি উচ্চতায় না বিশালতায়, নাকি জলধারার তীব্রতায়? ব্যাপারটা কি এমন, যে জলরাশি বেশী উঁচু থেকে পড়ে সেটা জলপ্রপাত, আর কম উঁচু থেকে পড়লে ঝর্ণা? অথবা জলপ্রপাত আকারে বিশাল হয়, সে তুলনায় ঝর্ণা ছোট হয়ে থাকে? ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। কিছু জলপ্রপাতের পানি প্রবাহের তীব্রতা অনেক ঝর্ণার চেয়েও কম হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ঝর্ণা অনেক জলপ্রপাতের চেয়েও আকারে বড় হয়, বেশী উঁচু থেকে পতিত হত। তাহলে ঝর্ণা আর জলপ্রপাতের মাঝে মূল পার্থক্যটা কি?
ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারা যখন কোন খাড়াপ্রান্তে এসে নিচে পতিত হয় তখন তাকে জলপ্রপাত বলে। হয়তো বিশাল একটা নদী অথবা সরু একটা জলপ্রবাহ পাহাড় বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ পাহড়ের খাড়া প্রান্ত থেকে নিচে পতিত হলো, আর তখনই একটি দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
বরফের বিশাল বিশাল খন্ডের উপরিতল গলে সৃষ্ট পানি প্রবাহিত হয়ে বরফ খন্ডের কোন খাড়া প্রান্ত দিয়ে নিচে পতিত হয়েও জলপ্রপাতের জন্ম হতে পারে। অন্যদিকে, মাটির নিচে জমা হওয়া পানি পাহাড়ের কোন খাড়া অংশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসলে ঝর্ণার সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টি, বন্যা, নদীর বা বরফ গলা পানি মাটির কথা ভেদ করে ভূপৃষ্ঠের উপরিতল থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। এই পানিগুলো মাটির নিচের কোন শিলাস্তরে পৌঁছুলে সেগুলো ভেদ করে আর নিচে নামতে পারে না। তখন পানিগুলো শিলাস্তরের উপর জমা হতে হতে একসময় মাটির নীচ দিয়ে শিলাস্তরের ঢালু অংশ বরাবর সরে আসতে থাকে। পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় মাটির নীচে শিলাস্তরের উপর জমে থাকা পানি এভাবে সরতে সরতে কোন খাড়া প্রান্ত পেয়ে গেলে পানিগুলো মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে অপূর্ব ঝর্ণার সৃষ্টি করে।
বড় আর বিশাল বিশাল নদী পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে নামতে গিয়ে অনেক জলপ্রপাত তৈরি করে বলে পৃথিবীতে যেমন বিশাল বিশাল জলপ্রপাত আছে, তেমনি বিশাল বিশাল ঝর্ণা নেই। সে হিসেবে ঝর্ণারা জলপ্রপাতদের মত অত বিস্তৃত, উন্মক্ত, আর প্রবল প্রতাপশালী নয়।
আবার, কিছু কিছু জলপ্রপাত অনেক ঝর্ণার চেয়েও ছোট, খাটো আর শান্ত! হয়ত পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে চলা খুব ছোট্ট, খুব শান্ত একটি জলধারা অসংখ্য.পাথরের গা বেয়ে কলকল শব্দ করে অলস ভঙ্গিতে নেমে এসে শান্ত একটি জলপ্রপাত তৈরি করে।