ক্যারিয়ারে অর্জন কম নয় তার। পঞ্চম খেলোয়াড় হয়ে গ্র্যান্ডস্লামের পর অলিম্পিক জিতলেন। এর মধ্যে অলিম্পিকে সোনা জয়ের স্মৃতি সবচেয়ে তরতাজা জোকোভিচের কাছে, ‘২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে আমি দেশের পতাকা বহন করেছিলাম। এত দিন পর্যন্ত সেটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত। আজ স্বর্ণ জয়ের পর এখন এই দিনটি আমার সবচেয়ে বেশি সেরা।’
টেনিসের চার গ্র্যান্ডস্ল্যামের সঙ্গে আরও অনেক টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে জোকোভিচের। এত সব কিছু ছাপিয়ে অলিম্পিকের সোনার পদক কেন সেরা সেই জবাবও দিয়েছেন তিনি, ‘অলিম্পিকে অনেক সময় অনেকে খেলেন না এটাও ঠিক। প্রতি বছরই চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম হয় আর চার বছর পর অলিম্পিক। গ্র্যান্ডস্ল্যামগুলো ব্যক্তিগত আর অলিম্পিক-ডেভিস কাপ মানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। আমি সব সময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পছন্দ করি। তাই এটা স্মরণীয়।’
সপ্তাহ তিনেক আগেই উইম্বলডনে স্প্যনিশ আলকারেজের কাছে সরাসরি তিন সেটে হেরেছিলেন জোকোভিচ। অলিম্পিকে স্প্যানিশ তারকাকে দুই সেটে হারিয়ে অধরা অলিম্পিক সোনার পদক জিতেছেন। এই প্রত্যাবর্তনের গল্প বলতে গিয়ে জোকোভিচ জানালেন, ‘আমার বয়স এখন ৩৭। আমি নিজেই এখন নিজের প্রেরণা। ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন আমাকে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করেছে। আমি জানতাম আজ (গতকাল) না হলে আর হয়তো স্বর্ণ জেতা হবে না। এজন্য সব কিছুই করেছি সর্বোচ্চভাবে। আমার সকল সফলতার পেছনে রয়েছ অনেক পরিশ্রম ও সাধনা। সে (আলকারেজ) এখন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। আজও দারুণ খেলেছে। দু’টি সেটই দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় সেটে আমি যদি হেরে জেতাম, জানি না তৃতীয় সেটে কি হতো।’
জোকোভিচের এক সময়ের কোচ কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘নোভাক এই অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে না পারলে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকেও খেলবে।’
সেই মন্তব্য উদ্ধৃত করে প্রশ্ন করা হলে সদ্য অলিম্পিক সোনা জয়ীর উত্তর, ‘আমি খেলতে চাই, দেশের হয়ে খেলতে ভালোবাসি। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জলস অলিম্পিকও আমি খেলতে চাই। এছাড়া শুধু পদকের জন্য নয়, আমি খেলতে এমনিতে ভালোবাসি।’
হঠাৎ একজন প্রশ্ন করে বসলেন ক্যারিয়ারের প্রথম পুরস্কার নিয়ে। জোকোভিচের বিশ বছর পেছন ফিরতে সময়ও লাগেনি, ‘অবশ্যই মনে আছে। আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার নেদারল্যান্ডসের টুর্নামেন্ট থেকে পেয়েছি। সেই পুরস্কার ছিল আইপড। স্বর্ণপদক ও আইপড দু’টো একেবারে ভিন্ন অনুভূতি। তবে সেটা প্রথম পুরস্কার ছিল আমার কাছে; অবশ্যই তা স্মরণীয়।’
এক সাংবাদিক মজার ছলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, আপনি কি সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে চান ? পুরো সংবাদ সম্মেলন কক্ষ হাসির রোল পড়ে গেলো। জোকোভিচও কিছুক্ষণ হাসলেন। এরপর বললেন, ‘আমি এখন যেভাবে আছি, এতেই খুশি ও ভালো আছি। সার্বিয়ার পতাকা আমার গায়ে, অলিম্পিকের মঞ্চে সার্বিয়ার জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে। এটাই আমার কাছে বড় তৃপ্তি। ’
শেষের দিকে এসে একজন প্রশ্ন করলেন, ‘ক্যারিয়ারে আপনার অনেক অর্জন, এত সাফল্যের মধ্যে অলিম্পিক পদক কোন জায়গায় রাখবেন ?’ এই প্রশ্নের উত্তর প্রথম মন্তব্যের মধ্যেই ছিল। সেটা স্মরণ করে দিয়ে বেশ বিনয়ীভাবে জোকোভিচ বললেন, ‘এটার উত্তর শুরুতেই দিয়েছি, এরপরও আবার বেশ গর্বভরেই দিচ্ছি। অলিম্পিকের সোনার পদক সব কিছুর ওপরে আমার কাছে।’
জোকোভিচের আগে আসেন আলকারেজ। নানান প্রশ্নের উত্তর স্প্যানিশ তারকাও দিয়েছেন। প্রশ্ন উত্তর দুই পর্বে হয়েছে। ইংরেজি ও স্প্যানিশে। দুই ভাষাতেই সাবলীলভাবে উত্তর দিয়ে গেছেন টেনিস জগতের দুই তারকা।