মোবাইল ফোনের ইতিহাস

মোবাইল ফোনের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন

মোবাইল ফোনের ইতিহাসে এমন মোবাইল যোগাযোগ ডিভাইসগুলি অন্তর্ভুক্ত যা সার্বজনীনভাবে সুইচ করা টেলিফোন নেটওয়ার্কের সাথে বেতার সংযুক্ত করে যোগাযোগের কাজ করে।সংকেত ব্যবহার করে দূরে আওয়াজ প্রেরণের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ বিষয়ক প্রাথমিক যন্ত্রগুলো বেতার, মোবাইল এবং স্ট্যান্ডার্ড টেলিফোন নেটওয়ার্কের চেয়ে পুরনো।

 

আজকের বহনযোগ্য যন্ত্রগুলোর তুলনায় প্রথমদিককার যন্ত্রগুলো বহন করা দুরুহ ছিল এবং তাদের ব্যবহার বহুল ছিল না।

 

বেতার যোগাযোগের নেটওয়ার্কিং এবং এর ব্যবহারের ব্যাপকতা উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে স্মার্টফোন বিশ্বব্যাপী সাধারণ হয়ে উঠেছে এবং ইন্টারনেট অধিগমনের বেশিরভাগই এখন মোবাইল ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

 

১৯০৮ সালে অধ্যাপক অ্যালবার্ট জাহান ও ওকল্যান্ড ট্রান্সকন্টিনেন্টাল এরিয়াল টেলিফোন অ্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি একটি বেতার টেলিফোন তৈরি করেছে বলে দাবি করে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং অভিযোগটি তখন বাতিলও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সত্যিই মোবাইল ফোন উৎপাদন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

 

১৯১৭ সালে, ফিনল্যান্ডের উদ্ভাবক এরিক টাইগারস্টেড সফলভাবে একটি "খুব পাতলা কার্বন মাইক্রোফোনবিশিষ্ট পকেট-আকারের ভাঁজ করা টেলিফোন" হিসেবে একটি যন্ত্রের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন। ১৯১৮ সালের শুরুতে জার্মান রেলপথ কর্তৃপক্ষ বার্লিন ও জোসেনের মধ্যে সামরিক ট্রেনগুলিতে বেতার টেলিফোনের পরীক্ষা চালায়।১৯২৪ সালে, বার্লিন ও হামবুর্গের মধ্যে ট্রেনে জনসাধারণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে টেলিফোন সংযোগ দেওয়া হয়। ১৯২৫ সালে, ট্রেন-টেলিফোনি সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য জাগটেলিফোনি এজি নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোম্পানিটি ১৯২৬ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য ট্রেনে টেলিফোন পরিষেবা শুরু করে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেল ল্যাবসের প্রকৌশলীরা গাড়ি মোবাইল ফোনের পরিধি সম্প্রসারিত করে টেলিফোন কল করার সুবিধা চালু করার জন্য কাজ শুরু করে, যার ফলে ১৭ জুন ১৯৪৬ সালে মিসৌরির সেন্ট লুইসে মোবাইল পরিষেবার যাত্রা শুরু হয়।১৯৪৯ সালে এটিঅ্যান্ডটি মোবাইল টেলিফোন পরিষেবাকে বাণিজ্যিকীকরণ করে। ১৯৪৬ সালে মিসৌরির সেন্ট লুইসে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মধ্যে এটিঅ্যান্ডটি ১০০টি শহর ও মহাসড়ক করিডোরে মোবাইল টেলিফোন পরিষেবা চালু করে। সে সময়ে প্রতি সপ্তাহে গড়ে মাত্র ৫,০০০ গ্রাহক প্রায় ৩০,০০০টি কল করতেন। তখনকার কলগুলি একটি অপারেটকে নিজ হাতে সেট আপ করতে হতো এবং ব্যবহারকারীকে কথা বলার জন্য হ্যান্ডসেটের একটি বোতাম চাপতে হতো, আর কথা শোনার জন্য বোতামটি ছেড়ে দিতে হতো। কল করার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামের ওজন ছিল প্রায় ৮০ পাউন্ড (৩৬ কেজি)।ইউরোপে বেশ কিছু পারস্পরিক বেমানান মোবাইল রেডিও পরিষেবা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

 

১৯৬৬ সালে নরওয়েতে ওএলটি নামে একটি ব্যবস্থা ছিল যা হস্তদ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ফিনল্যান্ডের এআরপি ১৯৭১ সালে চালু হয়, এটিও সুইডিশ এমটিডির মতো ম্যানুয়াল (হস্তদ্বারা নিয়ন্ত্রিত) ছিল। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে এই সমস্ত ব্যবস্থাগুলো স্বয়ংক্রিয় এনএমটি (নর্ডিক মোবাইল টেলিফোন) ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছি১৯৭৩ সালের আগে মোবাইল টেলিফোনি গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনে ব্যবহৃত ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

 

সেলুলার নেটওয়ার্কে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ প্রথম হাতে বহণযোগ্য সেলুলার ফোন ইএফ জনসন ও মিলিকম দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে সুইডেনে মিলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কমভিক এটি চালু করে।সময়ের সাথে প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে মোবাইল ফোনের উন্নয়ন ঘটেছে, যেগুলোকে ক্রমানুসারে "প্রজন্ম" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। "প্রজন্ম" পরিভাষাটি ৩জি চালু হওয়ার সময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু এখন পূর্ববর্তী ব্যবস্থাগুলোকে উল্লেখ করার সময়ও এটি ব্যবহৃত হয়।

 

যখন ২জি ফোনের ব্যবহার আরও ব্যাপক হয়ে উঠে ও মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে শুরু করে তখন এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে ডেটার চাহিদা (যেমন ইন্টারনেটে বিচরণ করার প্রবেশাধিকার) বাড়ছে। স্থির ব্রডব্যান্ড পরিষেবাগুলির অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে আরও বেশি গতির ডেটা পরিষেবার জন্য চাহিদা বাড়ছে।

 

তখন ৩জি নামে পরিচিত প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে ২জি প্রযুক্তি কাজ শুরু করে। ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে একটি সার্বজনীন চার্জারের মান পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল চার্জ করতে ব্যবহারকারীদের একটি অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হয় যা প্রায়শই ব্র্যান্ড বা প্রস্তুতকারকের মালিকানাধীন ছিল। পরবর্তীতে প্রধান ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনগুলি সাধারণত একটি মাইক্রো-ইউএসবি বিশিষ্ট একটি ইউএসবি কেবল ব্যবহার করতে শুরু করে। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ইউএসবি-সি ইন্টারফেস ব্যবহার শুরু হয়। অ্যাপলের আইফোন ছিল একমাত্র প্রধান ব্র্যান্ড যাদের নিজস্ব ইন্টারফেস ছিল (২০১২ সালে লাইটনিং দ্বারা প্রতিস্থাপিত)। ২০২৩ সালে অ্যাপলের আইফোন ১৫ সিরিজে প্রথম ইউএসবি-সি ব্যবহৃত হয়েছিল, তখন থেকে সমস্ত বড় ব্র্যান্ডগুলি চার্জার হিসাবে ইউএসবি-সি ব্যবহার শুরু করে।


Kumar Dulon Hajong

24 Blog posts

Comments