মানি প্ল্যান্টের সকল ভ্যারাইটি চেনার উপায় ও যত্ন

মানিপ্লান্ট এর বিভিন্ন ভ্যারাইটি
পথোস এর রোগবালাই
মাটি প্রস্তুত

মানি প্ল্যান্টের সকল ভ্যারাইটি চেনার উপায় ও যত্ন:

 

সারাবিশ্বে মানিপ্লান্ট বা পথোসের ৯টি ভ্যারাইটি আছে তার মধ্যে বাংলাদেশে ৮টি ভ্যারাইটিই সচারাচর দেখা যায়। আমরা সাধারণত মানিপ্ল্যান্ট বা পথোস নামে যে গাছটিকে চিনি তার সাইন্টিফিক নাম হল (epipremnum aureum) প্রজাতি ভেদে মানিপ্লান্টের পাতা ২ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মানিপ্লান্ট কে ধরা হয়ে থাকে বিশ্বের একমাত্র গাছে সারা বিশ্বের সকল দেশে পাওয়া যায়।

 

বেশীর ভাগ গাছ রাতে অক্সিজেন গ্রহন করে ।হাতেগোনা কয়েকটি গাছ আছে যেগুলি রাতে অক্সিজ্ন ত্যাগ করে। যে গাছ গুলি রাতে অক্সিজেন ত্যাগ করে আর কার্বন ডাই অক্সাইড শোষন করে পোথোস তাদের মধ্যে অন্যতম বলে এটি ঘরের গাছ হিসাবে আদর্শ।

 

এই গাছ ঘরের দূষিত বাতাস দূর করতে সাহায্য করে। ফ্রিজ কিংবা অন্যান্য যন্ত্র যা থেকে সিএফসি গ্যাস নির্গত হয় এবং অফিসের ফটোকপি ও প্রিন্টার হতে যে ওজোন গ্যাস নির্গত হয় তা আমাদের বুকে ব্যথা এবং গলার খুসখুসে কাশির জন্য দায়ী। প্যান ষ্টেটের গবেষকদের মতে, বাসাবাড়ি এবং অফিস রুমে মানি প্ল্যান্ট রাখলে এটি ক্ষতিকারক সিএফসি এবং ওজোন গ্যাস শুষে নিয়ে আমাদের রক্ষা করে। গাছটি সংগ্রহ এবং রক্ষনাবেক্ষণ করাও খুব সহজ।

 

মানিপ্লান্টের বিভিন্ন ভ্যারাইটির মধ্যে রয়েছে

 

Manjula Pothosমনজুলা পথোস

Jessenia Pothosজেসেনিয়া পথোস

গোল্ডেন পথোস

মার্বেল কুইন পথোস

নিয়ন পথোস

এনজয় পথোস

পার্ল জেড পথোস

সেবু ব্লু পথোস

সিলভার পথোস

 

গোল্ডেন পথোস: (Golden Pothos) এই ভ্যারাইটি টিকে চিনিয়ে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মানিপ্লান্ট নাম উচ্চারণ করতেই আমাদের চোখে যে গাছের ছবি ভেসে ওঠে ওটাই হল গোল্ডেন পথস। আমাদের দেশে এই গাছটি সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা আছে তা হল এই মানিপ্লান্টের ভ্যারাইটি টি ২ ধরনের হয় বড় পাতার মানিপ্লান্ট এবং ছোট পাতার। আপনি যদি এই গাছটিকে বড় টবে বা সরাসরি মাটিতে লাগান আপনার গাছের পাতা বড় হবে ছোট টবে দিলে পাতা ছোট হয়ে থেকে যায় বড় হবার সুযোগ পায় না। গ্রোথ রেট ফাস্ট।

 

এনজয় পথস: (Njoy pothos) এটি মানিপ্লান্টের হাইব্রিড একটি ভ্যারাইটি পাতা সাধারণত 2 ইঞ্চির বেশি বড় হয় না পাতায় সাদা এবং সবুজের ভেরিগেশন থাকে। গ্রোথ রেট মিডিয়াম।

 

নিয়ন পথোস: (Neon pothos) এটিও মানিপ্লান্টের একটি হাইব্রিড ভ্যারাইটি পাতা সাধারণত দুই থেকে তিন ইঞ্চি হয়ে থাকে। এর পাতার রং হলদে-সোনালি হয়। এটি অনেকটা জেড পোথোসের এর মত একই রকম দেখতে। শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে এর রং হলদে সোনালী বা লেমন ।এর পাতায় কোন ধরনের ভেরিগেশন থাকেনা। এই ভ্যারাইটির মানিপ্লান্ট কে যত বেশি আলো পায় ততবেশি পাতার রং হলদেটে হয়। কম আলোতে পাতা সবুজ হয়ে যায় তাই সরাসরি সূর্যালোকের থেকে দূরে উজ্জ্বল স্থানে রাখা উচিত। গ্রোথ রেট মিডিয়াম।

 

জেড পথোস/গ্রীন কুইন: (Jade pothos/ Green Queen) এর এই ভ্যারাইটি অনেকটা একই রকম দেখতে শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে এর রং সবুজ এর পাতায় কোন ধরনের ভেরিগেশন বা মার্কিং থাকেনা। এই পোথোসের পাতা হার্ট শেপ এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ হয়।পাতায় কোন ভেরিগেশন বা মার্কিং থাকে না। এটির জন্য খুব বেশি সূর্যের আলো এবং উচ্চ আর্দ্রতার প্রয়োজন হয় না। গ্রোথ রেট ফাস্ট।

 

পার্ল এন্ড জেড পথোস: (Pearl jade pothos) এই ভ্যারাইটির মানিপ্ল্যান্টকে অনেকে এনজয় পথস বলে ভুল করে থাকেন। দুটির মধ্যে পার্থক্য হলো এনজয় এর পাতা বড় এবং ভেরিগেশনের সাদা অংশে কোন সবুজ বিন্দু বিন্দু মারকিং থাকে না। গ্রোথ রেট মিডিয়াম।

 

মনজুলা পথোস: (manjula pothos (happy leaf)) মানিপ্লান্ট এর সবচেয়ে সুন্দর ভ্যারাইটি গুলোর মধ্যে এটি একটি। এর পাতা অন্যান্য হাইব্রিড ভ্যারাইটি গুলোর তুলনায় বড় হয়ে থাকে এবং সামান্য কোঁকড়ানো থাকে। মঞ্জুলা পোথোস (এপিপ্রিমেনাম ‘মঞ্জুলা) হ’ল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনায় উৎপাদিত একটি পেটেন্ট জাত। এটি পোথোসের হাইব্রিড একটি ভ্যারাইটি ।এটি রুপালী , সাদা, ক্রিম , হালকা সবুজ ও গাঢ় সবুজ রঙের মিশ্রনে হার্টশেপ পাতা বিশিষ্ট। প্রতিটি পাতা আলাদা; অনেক পাতায় সবুজ রঙের বড় প্যাচ থাকে। ।সবুজ অংশে সাদা আর সাদা অংশে সবুজ ছিটা থাকে ।এর পাতা অন্যান্য হাইব্রিড ভ্যারাইটি গুলোর তুলনায় বড় হয়ে থাকে এবং সামান্য কোঁকড়ানো থাকে।এটি সরাসরি সূর্যের আলো থেকে বাইরে পরোক্ষ উজ্জ্বল আলোময় স্থানে রাখা অপরিহার্য ,নাহলে পাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় ।আবার অতিরিক্ত পরিমাণে সূর্যের আলোয় পাতা পুড়ে যায়। গ্রোথ রেট মিডিয়াম।

 

মার্বেল কুইন পথস: (Marble queen pothos) আমি মানিপ্লান্ট এর এই ভ্যারাইটিকে ডাকি ড্রামা কুইন পথোস। কারন অন্য সব মানিপ্লান্টের তুলনায় এই ভ্যারাইটি টি সবচেয়ে বেশি স্লো। এই গাছটির ধীরে বড় হয় এর ভেরিগেশন এর কারনে।এই ধরনের ভেরিগেশন কে বলা হয় এক্সট্রিম ভেরিগেশন। পাতায় ক্লোরোফিল এর পরিমাণ কম থাকার কারণে গাছ যথেষ্ট খাবার তৈরি করতে পারে নাহ তাই স্লো বড় হয়। এই গাছ যতবেশি আলো পাবে তত তারাতাড়ি বড় হবে আর ভেরিগেশন ও সুন্দর হবে।

 

সেবু ব্লু পথস: (Cebu Blue Pothos) অনান্য সব মানিপ্লান্ট এর পাতা হার্ট সেইপের হলেও এই ভ্যারাইটির পাতা লম্বাটে হয় এবং যথেষ্ট সূর্যালোক পেলে পাতা নীলাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে।

 

জেসেনিয়া পথোস: (Jessenia Pothos) মানিপ্লান্টের সকল ভ্যারাইটির মধ্যে শুধুমাত্র এই ভ্যারাইটি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এর পাতা দেখতে হলদেটে সবুজের উপর সবুজ ভেরিগেশন।

 

গ্লেসিয়ার পথোস: (Glacier Pothos) এর পাতা মন্জুলা ও এনজয় পোথোস সাদৃশ্য ।তবে মন্জুলা পোথোসের সাথে এর পার্থক্য হলো এর মন্জুলার মত সবুজ সাদার মিশ্রণের হার্ট শেপ পাতায় সবুজ বা সাদা অংশে কোন ছিটা থাকে না। এনজয় পথোসের সাথে এর পার্থক্য হলো এর পাতা এনজয় পথোসের তুলনায় বড় হয় এবং সামান্য কোঁকড়ানো থাকে।কম আলো কম আদ্রতার এটি অত্যন্ত ধীরে বাড়ে। উজ্জ্বল পরোক্ষ আলোতে ও পর্যাপ্ত আর্দ্রতায় এটি মোটামুটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

 

হাওয়াইয়ান পথোস: (Hawaiin Pothos) গোল্ডেন পথোস সদৃশ্য সবুজ সাদার মিশ্রণে হার্ট শেপ পাতা ।তুলনামূলক ভাবে গোল্ডেন পথোস থেকে অনেক বড় পাতা বিশিষ্ট পথোস।সাধারণত বড় বৃক্ষে লতিয়ে উঠতে দেখা যায়।

 

গ্লোবাল গ্রীন পথোস

 

গ্লোবাল গ্রীন পথোস: (Global Green Pothos) এর পাতায় গাঢ় সবুজর মধ্যে হাল্কা সবুজ ভেরিগেশন থাকে। পাতার চারপাশ গাঢ় সবুজ থাকে। কোন ছিটা থাকে না।

 

এমেরাল্ড পথোস

 

এমেরাল্ড পথোস: (Emerald Pothos) এর পাতায় হাল্কা সবুজের মধ্যে গাঢ় সবুজ ভেরিগেশন থাকে। পাতার চারপাশ হাল্কা সবুজ থাকে। কোন ছিটা থাকে না।

 

সিলভার সাটিনঃ

 

সিলভার পোথোস নামে পরিচিত এই গাছটি এপিপ্রিমেনাম (Epipremnum) জেনাসের অন্তরভুক্ত নয়। অর্থাৎ এটি পোথোস না। এটির জেনাস সিন্ডাপসাস যা স্ক্যানডিসপাস পিকচারাস যা অ্যারয়েড পরিবারের আরেকটি গাছ। কিন্তু যেহেতু সার্টিন পথোস ‘পথোস’ নামে পরিচিত সেহেতু সার্টিন পথোসের প্রকারভেদ নিয়ে একটু আলোচনা করি:

 

সাটিন পথোস: (Satin pothos) সাটিন পথোস চার রকমের হয়। পাতা কালচে গাড় সবুজের মধ্যে সিলভার স্পট থাকে। পাতা তুলনামূলক শক্ত, ভঙ্গুর ও পুরু। সার্টিন পথোসের চার ধরনের নাম: ১. Silver Satin Pothos, ২. Exotica Satin pothos, ৩. Argyraeus Satin pothos/ Silver Vine pothos, ৪ Silvery Ann Satin pothos।

 

পথোস এর রোগবালাই -

 

পথোসে সাধারণত দুই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ১) মিলিবাগ যা সাবান পানি স্পে করলেই চলে যায় ২) cold shock আমাদের দেশে মানিপ্লান্ট এর এই সমস্যাটি হওয়া একদমই দুর্লভ সাধারণত শীতপ্রধান দেশের হয়ে থাকে। শীতকালে সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে পাতায় থাকা পানি ( রস) ঠান্ডা হয়ে যায় যার কারণে পাতা শুকিয়ে পরে যায়। এর প্রতিকার এর উপায়ও সহজ জাস্ট সরাসরি ঠান্ডা বাতাসে গাছ রাখবেন নাহ শীত কালেপথোসে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

 

মাটি প্রস্তুত -

 

পথোসের মাটি যতটা হালকা রাখা যায় ততোই ভালো। এজন্য যখন মাটি প্রস্তুত করবেন তখন মাটির সাথে কোকোপিট, বালি, জৈব সার/ ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে মাটি তৈরি করবেন। এবং টবের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। এই গাছ পানি পছন্দ করে। তাই টবের মাটি পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই পানি দিতে হবে। প্রতিদিন গাছে পানি স্প্রে করে দিলে পাতায় জমে থাকা ধুলোবালি পরিস্কার হয়ে যায়।এতে গাছের গ্লেস বাড়ে।

 

একমুঠো ভার্মি কম্পোস্ট হাফ লিটার পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে তারপরের দিন ওই পানি গুলো গাছে দিয়ে দিতে পারবেন। ছোট টবে উদাহরণ হিসেবে ৮ ইঞ্চি টবে থাকা মানিপ্ল্যান্ট গুলোকে প্রতি দুই আড়াই বছর পর পর রিপট করা উচিত রিপটের সময় দোআঁশ মাটি ৭০% বালু মাটি ২০% আর ভার্মি কম্পোস্ট ১০% এভাবে মাটি রেডি করবেন। আপনারা চাইলে ৯০% দোআঁশ মাটি ও ১০% ভার্মি কম্পোস্ট এই রেশিওতে মাটি তৈরি করতে পারেন।


Bonolota

106 Blog posts

Comments