গাছপালা আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা ছাড়া পৃথিবীতে আমাদের জীবন অচল। এটি একদিকে নিসর্গের শোভা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পালন করে অসাধারণ ভূমিকা।
যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। আমাদের পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার বিকল্প নেই।
জীবনের জন্য গাছপালা: বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে আমরা বাঁচি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমরা কার্বন ডাই-অক্সাইড নামের বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছাড়ি।
অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে। গাছপালা না থাকলে একসময় বাতাসের অক্সিজেন একেবারে শেষ হয়ে যেত, আর আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তাম। কাজেই গাছপালা আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।
প্রাত্যহিক জীবনে গাছপালা: বন্ধু-গাছপালা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেকভাবে সাহায্য করে থাকে। গাছপালা আমাদের নানা রকম খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে। গাছপালা থেকে আমরা পাই নানা রকম ফল, শাকসবজি, খাদ্যশস্য, চিনি, বাদাম ও তেল।
এ ছাড়া গাছপালা থেকে আমরা পেয়ে থাকি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু, আতা, বরই, জামরুল, পেঁপে, সফেদা, আপেল, নাশপাতি, আনারস, আমড়া নানা রকমের ফল। আমরা প্রতিদিনের রান্নায় যেসব মসলা ব্যবহার করে থাকি, তা-ও পাই গাছপালা থেকে। মরিচ, কালোজিরা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনে, তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি, গোল মরিচ—এসব মসলা আমরা গাছপালা থেকে পেয়ে থাকি। চা, কফি, কোকো ইত্যাদি মুখরোচক পানীয়ও আমরা পাই উদ্ভিদ বা একধরনের গাছপালা থেকে। ডাব, খেজুরের রস ইত্যাদিও গাছপালার অবদান।
গাছপালার বিভিন্ন ব্যবহার: গাছপালা বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়ে আসছে। কাঠ আমাদের অতি প্রয়োজনীয় বনজ সম্পদ। চেয়ার, টেবিল, আলমারি থেকে শুরু করে দেশলাইয়ের কাঠিসহ বহু ধরনের জিনিস তৈরিতে কাঠ আমাদের কাজে লাগে। আর এ কাঠ আমরা পেয়ে থাকি গাছপালা থেকে।
আমাদের আসবাবসহ নানা রকম কাজে মেহগনি, সেগুন, শাল, গর্জন ইত্যাদি বৃক্ষের কাঠ ব্যবহূত হয়। রাবার গাছ থেকে রাবার এবং কর্পূরগাছ থেকে কর্পূর পাই। তুলা ও পাট বহুল পরিচিত তন্তু উৎপাদনকারী গাছ। কাগজ, রেয়ন, প্লাইউড, প্লাস্টিক, তারপিন, কয়লা, মোম, রং, আঠা ইত্যাদি তৈরিতেও গাছপালা আমাদের কাজে লাগে।
ওষুধ তৈরিতে গাছপালা: আমাদের পরিবেশে কিছু গাছপালা আছে, যেগুলোকে আমরা ভেষজ উদ্ভিদ বলে থাকি। সেগুলোর লতাপাতা, ছাল কিংবা শিকড় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহূত হয়। সিঙ্কোনাগাছ ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন তৈরিতে কাজে লাগে। কালমেঘ, নয়নতারা, আসামলতা, শ্বেতচন্দন ইত্যাদি উদ্ভিদ ভেষজ গুণসম্পন্ন।
সৌন্দর্যবর্ধনে গাছপালা: বসতবাড়ির শোভা বা সৌন্দর্যবর্ধন ও উদ্যান রচনায়ও গাছের জুড়ি নেই। চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, গাঁদা, দোপাটি, চাঁপা, করবি, কাঁঠালিচাঁপা, জবা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জুঁই ইত্যাদি ফুল এবং নানা রকমের অর্কিড ও পাতাবাহারগাছ পরিবেশকে শোভন ও সুন্দর করে। কোনো কোনো গাছ আবার অঙ্গ-সৌন্দর্য ও সৌরভের জন্য বিখ্যাত। যেমন—চন্দন।
উপসংহার: মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছের তুলনা নেই। গাছপালা না থাকলে পরিবেশ হয়ে যেত উষ্ণ। পৃথিবী হয়ে উঠত মরুভূমি। মানুষের অস্তিত্ব হতো বিপন্ন। তাই ইচ্ছেমতো গাছ কাটা ও বন উজাড় করা ঠিক নয়। সর্বত্র গাছ লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। ‘গাছ লাগান, পরিবেশে বাঁচান’ স্লোগানের যথার্থতা অনুধাবন করে আমরা গাছ লাগাব এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করব।