যাকাত

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযান আসলে আসম??

যাকাত ওয়াজিব হওয়া আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর। ইবন ‘আব্বাস (রা) বলেন, আবু সুফিয়ান (রাঃ) নবী (সাঃ) এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে সালাত (প্রতিষ্ঠা করা), যাকাত (আদায় করা), আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও পবিত্রতা রক্ষা করার আদেশ দেন।

 

১৩১৩। আবূ ‘আসীম যাহ্হাক ইবনু মাখলাক (রাঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সা দকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (যাকাত) উসূল করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে।

 

১৩১৪। হাফস ইবনু ‘উমর (রহঃ) ... আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে, তার কি হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার প্রয়োজন রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে।

[ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] বাহয (রহঃ) শু বা (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনু ‘উসমান ও তাঁর পিতা ‘উসমান ইবনু আবদুল্লাহ উভয়ে মূসা ইবনু তালহা (রাঃ) আবূ আইউব (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, (শু বা, রাবীর নাম বলতে ভুল করেছেন)। আমার আশংকা হয় যে, মুহাম্মদ ইবনু ‘উসমান এর উল্লেখ সঠিক নয়, বরং এখানে রাবীর নাম হবে ‘আমর ইবনু ‘উসমান।

 

১৩১৫। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মরুবাসী সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেনা, (পাঁছ ওয়াক্ত) ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি করব না। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে।

 

১৩১৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ যুর আ (রহঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

 

১৩১৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা রাবী আ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদিনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস (যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতিত নির্বিঘ্নে আসতে পারিনা। কাজেই এমন কিছু আমলের নির্দেশ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদেরকে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি।

(পালনীয় বিষয়গুলো হলঃ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একক নির্দেশক) তাঁর হাতের আঙ্গুলী বদ্ধ করেন, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে, (الدُّبَّاءِ) শুষ্ক কদু খোলস, (الْحَنْتَمِ) সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, (النَّقِيرِ) খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র, (الْمُزَفَّتِ), তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে। সুলায়মান ও আবূ নূ মান (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে الإِيمَانِ بِاللَّهِ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ এরূপ বর্ণনা করেছেন (واو ব্যতীত)।

 

১৩১৮। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফি‘ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন ‘উমর (রাঃ) [আবূ বকর (রাঃ) কে লক্ষ্য করে] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরূদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে কস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ‏ বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে, যে কেউ তা বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর) হিসাব-নিকাশ আল্লাহর যিম্মায়।

আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় আমি যুদ্ধ করবো যারা সালাত (নামায/নামাজ) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো। ‘উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবূ বকর (রাঃ) এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এই দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।

 

*যাকাত দেওয়ার বায়‘আত। ( মহান আল্লার বাণীঃ) যদি তারা তওবা করে এবং সালাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দীনী ভাই। ( ৯ : ১১)

 

১৩১৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জরীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার উপর বায়‘আত করি।

 

* যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীর গুনাহ। মহান আল্লার বাণীঃ যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করেনা…. (জাহান্নামে শাস্তি প্রদানকালে তাদেরকে বলা হবে) এখন সম্পদ জমা করে রাখার প্রতিফল ভোগ কর। (৯:৩৪-৩৫)

 

১৩২০। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফী‘ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করবে, (কিয়ামত দিবসে) সে উট দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে এবং যে ব্যাক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করবে ও শিং দিয়ে আঘাত করবে। উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট (জনসমাগম স্থলে) ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক অনাদায়জনিত কারণে শাস্তিস্বরূপ) কাঁধের উপর চিৎকাররত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলে, হে মুহাম্মদ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলবঃ তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমিতো (শেষ পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি।

 

১৩২১। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু পার্শ্ব কমড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেনঃ আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথছ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে। (৩ঃ ১৮০)

 

[রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন] হে আবূ যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেনঃ তিনটি দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণস্তূপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। [আবূ যার (রাঃ) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করবো না।

 

*সম্পদ যথাস্থানে ব্যয় করা

 

১৩২৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... ইবনু মাস ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কেবল মাত্র দু ধরনের ব্যাক্তির প্রতি ঈর্ষা রাখা যেতে পারে, একজন এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায়পথে তা ব্যয় করার মত ক্ষমতাবান বানিয়েছেন। অপরজন এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা দে

ন ও অন্যান্যকে তা শিক্ষা দেন।

 

বুখারী শরীফ 

 

 


Bonolota

106 Blog posts

Comments