# বিরাজবৌ প্রথম খন্ডের আংশিক অংশের পরের পার্ট

Comments · 53 Views

অদৃশ্যে পুরাতন ঝির গলা শোনা গেল- পুঁটি বৌমা ডাকচেন,দুধ খাবে এস।

হরিমতি মুখ তুলিয়া মিনতির স্বরে বলিল,দাদা, তুমি বলে দাও না এখন দুধ খাবো না।

কেন খাবে না? দিদি। 

হরিমতি বলিল এখনও আমার একটুও খিদে পায়নি।

নীলাম্বর হাসিয়া বলিল, সে আমি বুঝলুম, কিন্তু যে গালে টিপে দিবে সে বুঝবে না।

দাসী অলক্ষ্যে থাকিয়া আবার ডাক দিলো পুঁটি! 

নীলাম্বর তাহাকে তারাতাড়ি তুলিয়া দিয়া বলিল,যা তুই কাপড় ছেড়ে দুধ খেয়ে আয় দিদি আমি বসে আছি।

হরিমতি অপ্রসন্ন মুখে ধীরে ধীরে চলিয়া গেল।

সেই দিন  দুপুরবেলা বিরাজ বৌ স্বামীকে ভাত বাড়িয়া দিয়া অদূরে বসিয়া পড়িয়া বলিল,আচ্ছা তুমিই বলে দাও,আমি কি দিয়ে রোজ রোজ তোমার পাতে ভাত দি? তুমি এ খাবে না,ও খাবে না,শেষ কালে কি না মাছ পর্যন্ত ছেড়ে দিলে! 

নীলাম্বর খাই ই তে  বসিয়া বলিল, এই কত তরকারি হয়েছে।

এত কত?ঐ থোড়- বড়ি - খাড়া, আর খাড়া বড়ি থোড়। এ দিয়ে কি পুরুষ মানুষ খেতে পারে। এ শহরে নয় যে,সব জিনিস পাওয়া যাবে; পাড়াগাঁ, এখানে সম্বলের মধ্যে ঐ পুকুর মাছ- তাও কিনা তুমি ছেড়ে দিলে?  পুঁটি, কোথায় গেলি,বাতাস করবি আয়-- সে তো হবে না -- আজ যদি একটি ভাত পড়ে থাকে  ত তোমার পায়ে মাথা খুড়ে মরব।

নীলাম্বর হাসিমুখে নিঃশব্দে আহার করতে লাগিল।

বিরাজবৌ রাগিয়া বলিল,কি হাস,আমার গা জ্বালা করে।দিন দিন তোমার খাওয়া কমে আসছে--_-সে খবর রাখ?

গলায় হাড় বেরোবার জো হচ্ছে, সেদিকে  চেয়ে দেখ।

নীলাম্বর বলিল, দেখেচি,ও তোমার মনের ভূল।

বিরাজবৌ কহিল, মনের ভূল?  তুমি গুনে একটি ভাত কম খেলে আমি বলে দিতে পারি, রতি পরিমাণ রোগা হলে  আমি গায়ে হাত দিয়ে ধরে দিতে পারি, তা জানো?

যা ত পুঁটি,, পাখা রেখে রান্না ঘর থেকে তোর দাদার দুধ নিয়ে আয়।

হরিমতি একধারে দাড়াইয়া বাতাস করিতে শুরু করিয়াছিল,পাখা রাখিয়া দুধ আনিতে গেল।

বিরাজবৌ পূর্ণরায় কহিল,ধম্মকম্ম করবার ঢের সময় আছে।আজ ও বাড়ির পিসিমা এসে ছিলেন,শুনে বললেন, এত কম বয়সে মাছ ছেড়ে দিলে চোখের জ্যোতি  কমে যায়।গায়ের জোর কমে যায়, না না না,সে হবে না, শেষকালে কি হতে হবে,,, না তোমাকে আমি মাছ ছাড়তে দিব না।

নীলাম্বর হাসিয়া ফেলিয়া বলিল,আমার হয়ে তুই বিরাজবৌ বেশি করে খাস্ তা হলেই হবে। 

বিরাজবৌ রাগিয়া গিয়া বলিল,হাড়ি কেওরার মত আবার তুইতোকারি! 

নীলাম্বর অপ্রতিভ হইয়া গিয়া বলিল, মনে থাকে নারে। ছোট বেলার অভ্যাস যেতে  চাই না। কত তোর  কান মলে দিয়েচি মনে আছে?

বিরাজবৌ মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল, মনে আবার নেই!ছোটটি পেয়ে আমার উডর কম অত্যাচার করেচ তুমি! বাবাকে লুকিয়ে, মাকে লুকিয়ে, আমাকে দিয়ে কত তামাক সাজিয়েচ! কত শয়তান তুমি!

নীলাম্বর হো হো হো হা হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিল,আজও সেইসব মনে আছে?  

কিন্তু তখন থেকেই তোকে ভালোবাসতাম,

বিরাজবৌ হাসি চাপিয়া বলিল,চুপ চুপ কর,পুঁটি আসচে।

হরিমতি দুধের বাটি পাতের কাছে রাখিয়া দিয়া পাখা লইয়া বাতাস করিতে লাগিল।

বিরাজবৌ উঠিয়া গিয়ে হাত ধুইয়া আসিয়া স্বামীর সন্নিকটে  বসিয়া পড়িয়া বলিল, আমাকে পাখাটা দে পুঁটি -- যা তুই খেলগে যা।

পুঁটি চলিয়া গেলে বিরাজবৌ বাতাস করিতে  করিতে বলিল,সত্যি বলছি , অতত ছোটবেলায় বিয়ে হওয়া ভালো নয়।

 নীলাম্বর জিজ্ঞাসা করিল, কেন নয়? আমি ত বলি,মেয়েদের খুব ছোটবেলায় বিয়ে হওয়াই ভালো।

বিরাজবৌ মাথা নাড়িয়া বলিল না।

আমার কথা আলাদা, কেননা, আমি তোমার হাতে পড়িয়া ছিলাম।তা ছাড়া আমার দুষ্ট বজ্জাত জা- ননদ ছিল না।

,-- আমি দশ বছর বয়স থেকেই গিন্নি।কিন্তু আর পাঁচজনের ঘরেও দেকেচি ঐ যে ছোট বেলা থেকে বকাঝকা  মারধর শুরু হয়ে যায়।শেষে বড় হয়ে ও সে দোস গুচে না--- বকাঝকা থামেই না।

সে জন্যই তো আমি আমার পুঁটির বিয়ের নাম গন্ধ নেই না। নইলে পরশুও রাজেশ্বরীতলার ঘোষালদের বাড়ি থেকে ঘটকী এসেছিল; সর্বাঙ্গে গহনা,,--- হাজার টাকা নগদ,,,তবুও আমি বলি, না আরও দুবছর থাক।

নীলাম্বর মুখ তুলিয়া আশ্চর্য হইয়া বলিল।তুই কি পন নিয়ে মেয়ে বেচবি নাকি রে?

বিরাজবৌ বলিল কেন নেবো না।

আজ আমার একটা ছেলে থাকলে টাকা দিয়ে  মেয়ে ঘরে আনতে হতো না? আমাকে তোমরা তিনশ টাকা দিয়ে কিনে আননি?

ঠাকুরপোর বিয়েতে পাঁচশ টাকা দিতে হয়নি?  না না তুৃমি আমার ও সব কথায় থেক না।

আমাদের নিয়মে যা যা আছে আমি তাইই করবো।

নীলাম্বর অধিকতর আশ্চর্য হইয়া বলিল,আমাদের নিয়ম মেয়ে বেচা এ খবর তোকে কে দিলো? 

আমরা পন দেই বটে,কিন্তু মেয়ের বিয়েতে এক পয়সা ও নিইনে----

আমি আমার পুঁটি দিদিকে দান করব।

বিরাজবৌ স্বামীর মুঝচোখের ভাব লক্ষ্য করিয়া  হঠাৎ হাসিয়া ফেলিয়া  বলিল আচ্ছা আচ্ছা তাই কর--- এখন খাও ছুতো করে যেন উঠে যেও না।

নীলাম্বর হাসিয়া ফেলিয়া বলিল,আমি বুঝি ছুতো করে উঠে যায়?

বিরাজবৌ কহিল না,এক দিনও না।ও দোষটি তোমার সত্তুরে ও তোমাকে দিতে পারিবে না। এজন্যে কত দিন যে আমাকে উপোস করে কাটাইতে হয়েচে, সে ছোটবৌ জানে।

ও,কি খাওয়া হয়ে গেলো নাকি?

বিরাজবৌ ব্যস্ত হইয়া পাখাটা ফেলিয়া  দিয়া দুধের  বাটি চাপিয়া ধরিয়া বলিল,মাথা খাও উঠনা-- ও পুঁটি শিগগির যা,,ছোটবৌয়ের  কাছ থেকে দুটো  সন্দেশ নিয়ে আই --না না ঘাড় নারলে হবে না--তোমার কখ্খন পেট ভরেনি---মাইরি বলচি,আমি তা হলে ভাত খাবো না। কাল রাত্রির একটা পর্যন্ত জেগে সন্দেশ তৈরি করেচি।

হরিমতি একটা রেকাবিতে সবগুলো সন্দেশ লইয়া ছুটিয়া আসিয়া পাতের কাছে রাখিয়া দিল।

নীলাম্বর হাসিয়া উঠিয়া বলিল,আচ্ছা, তুমিই বলো,এত গুলো সন্দেশ এখন খেতে পারি?

বিরাজবৌ মিষ্টান্নের পরিমান দেখিয়া মুখ নীচু করিয়া বলিল,গল্প করতে করতে অন্যমনস্ক হয়ে খাও,,পারবে।

তবুও খেতে হবে?

বিরাজবৌ কহিল হ্যা।হয় মাছ ছাড়তে পারবে না,, না হয় এ জিনিস একটু বেশি করে খেতে হবে।নীলাম্বর  রেকাবিটা টানিয়া লইয়া বলিল,তোর এ খাবার জুলুমের ভয়ে ইচ্ছে করে বন জঙ্গলে গিয়া থাকি। 

পুঁটি বলিয়া উঠিল--আমাকেও দাদা??

বিরাজবৌ দমক দিয়া উঠিল,চুপ কর পোড়ামুখী, খাবিনে ত বাঁচবি কি করে?এই নালিশ বেরুবে শুশুরবাড়ি গিয়ে।

Comments
Read more