সূর্য (রবি নামে ডাকা হয়) সৌরজগতের কেন্দ্রের খুব কাছে অবস্থিত তারাটির নাম। প্রায় আদর্শ গোলক আকৃতির এই তারা প্রধানত প্লাজমা তথা আয়নিত পদার্থ দিয়ে গঠিত যার মধ্যে জড়িয়ে আছে চৌম্বক ক্ষেত্র।এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার যা পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুণ, ভর প্রায় ২×১০৩০ কিলোগ্রাম তথা পৃথিবীর ভরের ৩ লক্ষ ৩০ হাজার গুণ।
এই ভর সৌরজগতের মোট ভরের শতকরা ৯৯.৮৬ ভাগ।[৪] সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন, আসলে মোট ভরের তিন চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেনের পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্য্যময় মৌল হিলিয়াম। হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌল সূর্যের মাত্র ১.৬৯% ভরের জন্য দায়ী, তারপরও এদের সম্মিলিত ভর পৃথিবীর ভরের ৫,৬২৮ গুণ। এই ভারী মৌলগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন, কার্বন, নিয়ন, লোহা ইত্যাদি।সূর্য একটি জি-ধরনের প্রধান ধারার তারা যার ভর সৌর জগতের মোট ভরের শতকরা ৯৯.৮৬৩২ ভাগ। এর গঠন প্রায় নিখুঁত গোলকের মত, কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে কমলালেবুর মত একটু চাপা। এই কমলাকৃতির পরিমাণ প্রতি ৯০ লক্ষ ভাগে এক ভাগ। অর্থাৎ সূর্যের মেরু অঞ্চলীয় ব্যস বিষুবীয় ব্যসের চেয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার কম। যেহেতু সূর্য প্লাজমা তথা আয়নিত গ্যাস দিয়ে গঠিত, সেহেতু এটি বিষুবীয় অঞ্চলে মেরু অঞ্চলের চেয়ে বেশি বেগে ঘোরে।
এই পরিবর্তনশীল বেগকে বলা হয় ব্যবকলনীয় বেগ। এ ধরনের বেগের কারণ, সূর্যের মধ্যকার পরিচলন এবং কেন্দ্রের চেয়ে পৃষ্ঠের দিকে তাপমাত্রার ঢাল বেশি বাঁকা হওয়ায় ভরের স্থানান্তর। ভূ-কক্ষের উত্তর মেরু থেকে দেখলে সূর্যের যে বামাবর্তী কৌণিক ভরবেগ পর্যবেক্ষণ করা যায় তার কিছু অংশ এই ভর স্থানান্তরের কারণে পুনর্বন্টিত হয়। অর্থাৎ এক স্থানের ভরবেগ কমে গিয়ে অন্য স্থানে বেড়ে যায়। এই প্রকৃত ঘূর্ণন বেগের মান হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চলে ২৫.৫ দিন এবং মেরু অঞ্চলে ৩৩.৫ দিন। তবে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকায় আমরা এই আবর্তন বেগের মান পাই ২৮ পার্থিব দিন। দেখা যাচ্ছে, সূর্যের নিজ কক্ষের চারদিকে আবর্তন বেগ খুবই কম, এই ঘূর্ণন বেগ থেকে যে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় তা সূর্যের পৃষ্ঠ অভিকর্ষের তুলনায় ১৮০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। গ্রহগুলোর জোয়ার বলও এ তুলনায় এত নগণ্য যে তারা সূর্যের আকার-আকৃতির কোন পরিবর্তন করতে পারে না।সূর্যের বয়স বের করার কোন সরাসরি উপায় না থাকলেও পরোক্ষভাবে তা করা হয়েছে।
যেমন পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তর ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বৎসর। ধারণা করা হয়, সমগ্র সৌরজগতের সৃষ্টি একই সময়ে। সেক্ষেত্রে সূর্যেরও বয়স হয় একই।
সূর্যের কেন্দ্রের পারমাণবিক বিক্রিয়ার কারণে এর বাইরের দিকের গ্যাস (প্লাজমা) খুব বেশি তপ্ত থাকে। এটাই সূর্যের আলো বিকিরণের মূল উৎস। বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট তপ্ত হয়ে যেমন আলো ছড়ায়, ঠিক তেমনি সূর্যের বহিরাবরণের তপ্ত গ্যাস থেকে আলো আসে।
Iftekhar Rahat 13 w
joss