মাছ একটি শীতল রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডী প্রাণী যার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুলকা রয়েছে। চলাচলের জন্য যুগ্ম অথবা অযুগ্ম পাখনা রয়েছে । এদের দেহে সচরাচর আঁশ থাকে। সাধারণত এরা জলকেই বসবাসের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত এদের দেহের বহির্ভাগ আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত; তবে আঁশ নেই এমন মাছের সংখ্যাও একেবারে কম নয়।
এরা সমুদ্রের লোনা জল এবং স্বাদু জলের খাল, বিল, হাওর, বাওর, নদী, হ্রদ, পুকুর, ডোবায় বাস করে। পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে শুরু করে মহাসাগরের গহীন অতল স্থানে, অর্থাৎ যেখানেই জল রয়েছে সেখানেই মাছের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র মাছ মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মাছ মানবদেহে অন্যতম আমিষ যোগানদাতা। অনেক স্থানেই মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও বিনোদন হিসাবে ছিপ/বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আবার মাছকে অ্যাকুয়ারিয়ামে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। কয়েকটি প্রাণী মাছ না হলেও এগুলো মাছ হিসাবে প্রচলিত।
আমেরিকার ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিজ্ঞানীরা ‘ওপা’ নামের উষ্ণ রক্তের মাছের সন্ধান পান। মাছটির কানসার টিস্যু এমনভাবে সাজানো যে, শিরা থেকে ঠাণ্ডা রক্ত প্রবাহিত হয়ে বিপরীতমুখী উষ্ণ রক্তের সঙ্গে মিলিত হয়। যে রক্ত কানসার দিকে আসছে তা গরম হয়।
পৃথিবীতে প্রায় ৩০-৪০ হাজার মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এবং ২৬০ প্রজাতির স্বাদু জলের মাছ পাওয়া যায়কোনো বিশেষ পরিবেশে জীবনধারণের জন্য জীবের দেহে গঠনগত ও কার্যগত বৈশিষ্ট্য লাভ হয়, ফলে জীব পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে জীবনধারণ করতে পারে একেই অভিযোজন বলা হয়। অভিযোজন সংক্ষিপ্ত পথে ঘটে না। এর জন্য দীর্ঘ কালক্ষেপের প্রয়োজন। পৃথিবীর জীব জলাশয়, সমুদ্র, নদী, হ্রদ, পাহাড় পর্বত, মরুভূমি, বনভূমি, মাটি, বায়ুমণ্ডল ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবেশের মধ্যে বসবাস করে। এইসব পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে জীবনধারণ করাই অভিযোজনের মূল লক্ষা।
মাছ জল থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করে পুষ্টি চালায়। অধিকাংশ মাছ ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ এবং জলজ প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। গৃহীত খাদ্য সুগঠিত পৌষ্টিক তন্ত্রের মাধ্যমে পাচিত হয়। পাচিত খাদ্যরস দেহের কোষগুলি গ্রহণ করে জৈবনিক কাজ চালায়।কই , শিঙি , মাগুর ইত্যাদি কয়েক রকম মাছে ফুলকা ছাড়াও দেহে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকে। এদের ক্ষেত্রে ফুলকা দিয়ে গৃহীত অক্সিজেন দেহের প্রয়োজন সম্পূর্ণ মেটাতে পারে না। তাই এরা মাঝে মধ্যে জলের উপরে এসে বায়ুমন্ডল থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই কারণে অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র-যুক্ত মাছকে জিওল মাছ বলা হয়। এইরকম মাছ ডাঙায় অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে।অনেক মাছের দেহের বাইরে আঁশ থাকে। অধিকাংশ মাছের চামড়ায় শ্লেষ্মা গ্রন্থি অবস্থান করে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত পিচ্ছিল রস বা শ্লেষ্মা আঁশের উপর বা চামড়ার উপর ছাড়িয়ে যায়। ফলে শ্লেষ্মা দিয়েই দেহের একেবারে বাইরে একটি আবরণ গঠিত।
শ্লেষ্মা থাকার জন্য এদের দেহ খুব পিচ্ছিল হয়। পিচ্ছিল দেহ আত্মরক্ষার সহায়ক, হাত দিয়ে ধরতে গেলে খুব সহজেই পিছলে হাত ফসকে বেরিয়ে যেতে পারে। এছাড়া পিচ্ছিল দেহ জলের বাধা অতিক্রম করতেও সাহায্য করে।মাছ যাতে জলে সাঁতার কাটতে পারে সেজন্য উপযুক্ত গমন অঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। এদের দেহের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাখনা গুলিই মুখ্য গমন-অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি মাছের দেহে মোট সাতটি করে পাখনা থাকে। লেজের পিছন অংশ আন্দোলিত করেও মাছ গমন করতে পারে। মাছের দেহে অবস্থিত পেশী সংকোচন-প্রসারণের ফলেই লেজের আন্দোলন সম্ভব হয়। প্রতিটি পাখনা মাছের দেহের পেশীর সঙ্গে যুক্ত থাকে। প্রকৃতপক্ষে পেশী সংকোচন-প্রসারণের ফলেই পাখনা আন্দোলিত হয়। পাখনাগুলি মাছের চলন, গমন, দিক্ পরিবর্তন এবং জলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে রীতিমতো সাহায্য করে।।