কিছু বাস্তব কথা বলি, হয়ত কঠোর শোনাবে।
.
একদিন আপনি বুঝবেন,পরিবার পরিজন সবাইকে ছেড়ে একাকী দূর প্রবাসে হায়ার স্টাডি, সেটলমেন্ট এগুলো দুনিয়াবী কিছু উপার্জন, কিছু স্ট্যাটাস ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। বরং কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছুই।
.
একদিন বাসা থেকে বের হবার সময় বয়স থাকবে ত্রিশ, বাসায় ফিরে দেখবেন বয়স পঞ্চান্ন।
সরকারী চাকরি/ বিসিএস এর আশায়, বাবা মা পরিবার থেকে দূরে মেসে থেকে, না ঘুমিয়ে, মায়ের হাতের খাবার না খেতে পেরে, বিয়েতে দেরী করে, বাচ্চা নিতে দেরী করে যে সময় গুলো হারিয়ে ফেলেছেন, আজ সরকারী চাকরিজীবী হয়েও, ক্যাডার হয়েও ক্ষমতা অর্জন করেও সেই সময় গুলো আর ফিরে পাবার ক্ষমতা আপনার নেই। জীবনের শেষ পাঁচ বছরের তুলনায়, যৌবনের পাঁচ বছরকে খুব করে মিস করবেন, কারণ এখন আপনি বাঁচেন অন্যের জন্য, তখন সময় গুলো ছিল নিজের জন্য। কি ইবাদাত, কি দুনিয়াবী - যৌবনের থেকে মুল্যবান সময় নেই।
.
একদিন খুব করে বুঝবেন জীবনে পরিবারের থেকে বড় কিছু ছিলনা। পরিবারের সাথে থেকের চেয়ে উত্তম ক্যারিয়ার নেই।
.
একদিন হঠাৎ উপলব্ধি করেছেন, জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। অনর্থক অর্থ নষ্ট করেছেন, অসময়ে সময় নষ্ট করেছেন; শর্ট টার্ম হয়ত ভাল থেকেছেন, লং টার্ম না আখেরাতের না দুনিয়ার কোন ফায়দা হয়েছে।
.
একদিন এটাও বুঝবেন, আপনি মানুষকে জবাবের জন্য একটা সফল জীবন বেছে নিতে এত পরিশ্রম করেছেন, মনকে একাকী জিজ্ঞাসা করে দেখবেন - এই জীবন সন্তোষজনক ছিল না। খুব করে বুঝবেন, সন্তুষ্ট জীবন, সফল জীবনের থেকে উত্তম, কারণ আপনার সফলতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে অন্যরা, যেখানে আপনার সন্তুষ্টির সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন আপনি।
.
একদিন আপনার অনেক টাকা হবে, বাবা মা কে অনেক কিছু কিনে দেবার সামর্থ্য থাকবে, সেদিন বাবা মা কবরে। আপনি তাদের জন্য হত মিলাদ করেন, কবর বাঁধাই করেন ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু হাত পা টিপে দিতে পারেন না, নখ কেটে দিতে পারেন না, একসাথে বসে খেতে পারেন না।
.
.
আপনার বাচ্চা অনেক বড় হয়ে গেছে। সপ্তাহে বা মাসে বা কয়েকমাস পর পর আপনি তাকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন, চোখের সামনে প্রতিদিন তার হাঁটা শেখার মুহুর্ত, কথা শেখার মুহুর্ত, দুষ্টামি শেখার মুহুর্ত এগুলো আপনি মিস করে গেছেন এই চরম ক্যারিয়ারিস্ট মনসত্ত্বার জন্য।
.
হঠাত বুঝবেন - আপনি আর আপনার স্ত্রী দুজনই যৌবনের অনেক গুলো বছর পার করে এসেছেন, একটা অজানা অপ্রত্যাশিত দূরত্ব তৈরী হয়েছে।
কোন হাস্যরস নেই, ভালবাসা নেই, রোম্যান্স নেই, শুধুমাত্র জীবনে চলার জন্য যেন একসাথে চলা, রোজকার সেইম রুটিন৷ অবশ্যই দায়িত্ববোধ আগে, কিন্তু দায়িত্ব ছাড়াও দাম্পত্যে আরো ফ্যাক্টর থাকে, যেগুলো এখন নেই।
.
ছোট্ট জীবন গোছানো এত প্ল্যান প্রোগ্রাম করে হয় না।
যখন যে রিজিক পাওয়া যাবে, আল্লাহ’র রহমত কামনা করে ক্যারিয়ার শুরু করে দিতে হবে। একটু যোগ্যতা হলেই বিয়ে করে ফেলতে হবে। সব কিছু গুছিয়ে বিয়ে নয়, বরং বিয়ে করে সব কিছু গুছানো৷
যেটুকু সামর্থ্য আছে, সেটুকু দিয়েই বাবা মা পরিবার দেখভাল করতে হবে। সন্তান না নেবার কোন প্ল্যান করা যাবেনা যে অতদিন পর নিব, বরং প্রথম থেকেই আল্লাহ'র কাছে চাইতে হবে, নেবার নিয়ত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যতজন সন্তান দিবেন, যখন দিবেন তখনই নিয়ে নিতে হবে।
.
সত্য এটাই যে - যিনি মুখ দিবেন, তিনিই আহার দিবেন। এটা কুসংস্কার নয়, এটাই রিজিকের মালিকের উপর তাওয়াক্কুল।
আল্লাহ তায়ালাই আপনার জীবন উনার নিজস্ব প্ল্যানে এক্সিকিউট করে দিবেন। আপনার জীবন সাজিয়ে দিবেন। আপনার নিজের সাজানো জীবনটা বাস্তবিক অগোছালো। আপনি বুঝতে পারেন না, বা বুঝতে চান না।
.
.
একদিন বুঝবেন যে এতসবের আসলে দরকার ছিলনা৷
এতকিছু না হলেও হতো৷
এর থেকে বরং ভাড়া বাসায় একসাথে থাকা, একসাথে বড় হওয়া, একসাথে খাওয়া, বাচ্চা কাচ্চা গুলোকে চোখের সামনে বড় হতে দেখা, দাদী নাতনির খুনসুটি উপভোগ করা, সপ্তাহে একদিন আউটিং এভাবে জীবন পার করা যেত, নির্ঝঞ্ঝাট এর জীবন যাপন হতো৷
.
.
একদিন বুঝবেন যে খুব দেরী হয়ে গিয়েছে, সেদিন টা আসার পুর্বেই তাই বুঝে ফেলুন।