কামরাঙা

কামরাঙা আমাদের দেশীর ফলের মাঝে আরেকটি ফল।
কামরাঙার ভালো ও খারাপ দিক বর্ণনা।

কামরাঙ্গা এর বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa carambola Linn, ইংরেজি নাম: Chinese gooseberry বা Carambola। এটি Oxalidacea পরিবারের Averrhoa গণের অন্তর্ভুক্ত ফলের গাছ। এর উৎপত্তিস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়

কামরাঙ্গা একটি চিরসবুজ ছোট মাঝারি আকৃতির গাছের টকমিষ্টি ফল। গাছ ১৫-২৫ ফুট লম্বা হয়। ঘন ডাল পালা আচ্ছাদিত, পাতা যৌগিক, ১-৩ ইঞ্চি লম্বা। বাকল মসৃন কালো রং এর। ফল ৩-৬ ইঞ্চি ব্যাসের এবং ভাজযুক্ত। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ। কামরাঙ্গা টক স্বাদযুক্ত বা টকমিষ্টি হতে পারে। কোন কোন গাছে একাধিকবার বা সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন এ ও সি এর ভাল উৎস। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়।

এ গাছের ফল থেকে বাকল সবই ঔষধিগুণ সম্পন্ন।

 

এর অ্যালজিক অ্যাসিড খাদ্য নালি (অন্ত্রের) ক্যান্সার হতে বাধা দেয়।

পাতা ও কচি ফলের রসে ট্যানিন রয়েছে যে কারণে এর রস রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

এর মূল বিষনাশক হিসেবে ব্যবহার হয়।

শুষ্ক ফল জ্বরে ব্যবহার হয়।

শীতল ও টক তাই ঘাম, কফ ও বাতনাশক হিসেবে কাজ করে। 

কামরাঙ্গার ভর্তা রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়।কামরাঙা বেশি খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। যাদের কিডনি ভাল, স্বাভাবিক পরিমাণে কামরাঙ্গা খেলে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু অনেকদিন ধরে বেশি কামরাঙ্গা খেলে কিডনি বিকল হতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তারা যদি অল্প পরিমাণ কামরাঙ্গা কামরাঙা কাঁচা, পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। এই ফলের নানা ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপকারী নানা উপাদান রয়েছে এই ফলে। কিন্তু কারও কারও জন্য এই কামরাঙা বিপদ ডেকে আনতে পারে।বা রস বা একটি বা কয়েক টুকরা কামরাঙ্গা খায়, তাহলে কিডনি বিকল হয়ে যায়।

কি পরিমাণ কামরাঙা খাওয়া নিরাপদ :

 নিরাপদযাঁদের কিডনি সুস্থ, কামরাঙা খেলে তাঁদের কোনো ক্ষতি হয় না। দিনে ১-২টা কামরাঙা খেলেও তেমন সমস্যা হবে না। তবে অত্যধিক পরিমাণে অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণে অনেক দিন কামরাঙা খেলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, কামরাঙা ফলের রস সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

কামরাঙা কি ক্ষতি করে?

অতিরিক্ত কামরাঙা খেলে প্রধানত কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কিডনির পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের আক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।

কামরাঙার অন্যতম একটি উপাদান হলো অক্সালিক অ্যাসিড। কিডনি নষ্টের প্রধান কারণ কামরাঙায় থাকা অক্সালেট ও

 নিউরোটক্সিন। ১০০ মিলিলিটার

 কামরাঙার জুসে ০.৫০ গ্রাম অক্সালিক অ্যাসিড রয়েছে। তাই অত্যধিক সেবনে অতিমাত্রায় অক্সালিক অ্যাসিড জমে গিয়ে অক্সালেট পাথর হয়ে কিডনি বিকল করে দিতে পারে। তবে খালি পেটে কামরাঙা খেলে ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

যাঁদের কিডনি দুর্বল তাঁরা এই মারাত্মক নিউরোটক্সিনকে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। তখন এটি শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে ব্রেন এবং নার্ভাস সিস্টেমের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এমনকি খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।

কাদের জন ঝুকি সবচেয়ে বেশি :যাঁদের আগে থেকেই কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে। শারীরিক স্থূলতা, কিডনিতে পাথর থাকার ইতিহাস, ডায়ালিসিসের রোগী, অন্তঃসত্ত্বা নারীর এই ফল না খাওয়াই উচিত।

জটিলতা প্রতিরোধে করনীয়:

১. কিডনির সমস্যা না থাকলে অল্প করে কামরাঙা খাওয়া যাবে।

 

২. কাঁচা বা টক কামরাঙার রস বেশি ক্ষতিকর, তাই পরিহার করুন।

 

৩. কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে ফলটি পরিহার করুন।

 

৪. গর্ভবতী নারীরা কামরাঙা পরিহার করুন। এই ফল খেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments