উন্নত জাতঃ বারি মিষ্টিকুমড়া-১, বারি মিষ্টিকুমড়া-২, সুইট বল, ইয়েলো কার্ড।
পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় আছে ১৩ কিলো ক্যালরি, ৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৩৬ গ্রাম শর্করা বা চিনি, ০.৫ গ্রাম আঁশ, ০.১ গ্রাম চর্বি ও ১.০ গ্রাম প্রোটিন, ৩৬৯ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন এ, ০.০৫ মিগ্রা থায়ামিন, ০.১১ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন, ০.৬ মিগ্রা নায়াসিন, ০.০৬১মিগ্রা ভিটামিন বি৬, ৯.০০ মিগ্রা ভিটামিন সি, ১.০৬ মিগ্রা ভিটামিন ই, ২১ মিগ্রা ফসফরাস, ১.০মিগ্রা সোডিয়াম , ০.৩২মিগ্রা জিংক ও ৩৪০মিগ্রা পটাশিয়াম।পিট তৈরি করার সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, বোরণ, অর্ধেক পটাশ এবং পাঁচ ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানের ১০-১৫ দিন পর জমিতে বীজ বপন করতে হয়। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার সমান চার‘কিস্তিতে বছরব্যাপী উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
সেচঃ মিষ্টি কুমড়া পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফল ধারন ব্যাহত হবে এবং যেসব ফল ধরেছে সেগুলো আস্তে আস্তে ঝড়ে যাবে। কুমড়ার সমস্ত জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নিবে। প্রয়োজনে সেচ নালা হতে ছোট কোন পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া যায়। শুষ্ক মৌসুমে ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
আগাছাঃ জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন । সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়িয়ে আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।চারা অবস্থা থেকে রসুন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকামাকড়ঃসুড়ঙ্গকারী পোকা- সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক ( যেমন কট বা ম্যাজিক ১০ মিলি/ ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে) সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
থ্রিপস-আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
জাব পোকা-সাদা রং এর আঠালো ফাদ ব্যবহার করুন।আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রেড পামকিন বিটল/ লাল বিটল-সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বপনের সময়ঃ (দিন নিরেপেক্ষ) কার্তিক-অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) উপযুক্ত সময় ।
চাষপদ্ধতি: নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম। চারার জন্য ৮-১০ ইঞ্চি মাপের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। জমিতে ১৬-২০ দিনের চারা লাগাতে হবে।মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ৬-৮ইঞ্চি উঁচু,সোয়া ৩ ফুট চওড়া এবং লম্বায় সুবিধাজনক এমন বেড তৈরী করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়। দু’টি বেডের মাঝে পর্যায়ক্রমে ২ ফুট এবং ১ ফুট চওড়া নালা রাখতে হবে। গর্তের আকার হবে ২০ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি× ১.৫ ফুট। গর্তগুলো সোয়া ৪ হাত দূরে দূরে এক সারিতে হবে। গর্তের কেন্দ্র বেডের নিচের দিকের সেচ নালার কিনারা থেকে ২২ইঞ্চি ভিতরের দিকে হবে এবং বেডের শুরু থেকে সোয়া ৩ ফুট দূরে হবে। সরাসরি মাদায় বীজ বপণের ক্ষেত্রে মাদায় প্রয়োজনীয় সার দেয়ার ৭-১০ দিন পর ৩-৪টি বীজ বপণ করতে হবে। গভীরতা হবে ১ ইঞ্চি। বীজ বপণের ৪-৫ দিনের মধ্যেই গজাবে, ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি সুস্থ ২টি চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ৪ - ৬ গ্রাম।
রোগবালাইঃ
গামি স্টেম ব্লাইট রোগ-ম্যানকোজেব + মেটালক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ( যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে।
স্ক্যাব রোগ-ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ( যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পাতায় দাগ রোগ-রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ঢলে পড়া নেতিয়ে পড়া রোগ-কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাকনাশক ( কুপ্রাভিট ৪০ গ্রাম ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন অথবা খৈলের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন।
পাউডারি মিলডিউ রোগ-সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা মনোভিট ২০ গ্রাম) অথবা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন: গোল্ডাজিম ৫ মিলিটার বা এমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
ডাউনি মিলডিউ রোগ-ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ( যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে।
মোজাইক ভাইরাস রোগ-জমিতে সাদা মাছি দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১২০ - ২০০ কেজি।
সংরক্ষনঃ ঠান্ডা ও বাতাস চলাচল করা জায়গাতে ফল ঘষা বা চাপ খায় না এমন ভাবে সংরক্ষণ করুন। বীজ বেশিদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে নিমের তেল মিশিয়ে রাখতে পারেন। কিছুদিন পর পর বীজ হালকা রোদে শুকিয়ে নিবেন।