আমলকী গাছ ৮ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে, পাতা ঝরা প্রকৃতির। হালকা সবুজ পাতা, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। হালকা সবুজ স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি ব্যাস ১/২ ইঞ্চির কম বেশি হয়। কাঠ অনুজ্জ্বল লাল বা বাদামি লাল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে ই দেখা যায়। গাছ ৪/৫ বছর বয়সে ফল দেয়। আগস্ট - নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে আমলকীর বংশবিস্তার হয়। বর্ষাকালে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।আমলকী নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কিছু কাজ করে।কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগেও আমলকি কার্যকর বলে ইঁদুরের উপর চালিত গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকী কার্যকর। আমলকীর ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে কিছু রোগ নিরাময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগ। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে
ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে (৪৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম) । তা সত্ত্বেও আরো অন্যান্য উপাদান নিয়ে মতভেদ আছে এবং আমলকির 'এন্টি-অক্সিডেন্ট'রূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা ভিটামিন-সি এর নয়, বরং 'এলাজিটানিন' নামক পদার্থসমূহের বলে মনে করা হয়। যেমন এমব্লিকানিন-এ (৩৭%), এমব্লিকানিন-বি (৩৩%), পানিগ্লুকোনিন (১২%) এবং পেডাংকুলাগিন (১৪%). এতে আরো আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ। এই ফলে অন্যান্য 'পলিফেনল'ও থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড। আমলকীর ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকী খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকী খেলে মুখে রুচি বাড়ে।স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকী ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী।
লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকী ফলটি বিবেচিত। আমলকী, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য বহুমাত্রিক উপকারী।এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকী ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকী বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কাঁচা আমলকী বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
বমি বন্ধে কাজ করে।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।
এটি দাঁত,চুল ও ত্বক ভাল রাখে।
এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল,রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।
বহুমূত্র রোগে এটি উপকারী।
চোখ উঠলে কাঁচা আমলকীর রস দিনে ২ ফোটা করে দুই বার দিলে ভাল আরাম পাওয়া যায়।
চুল ওঠা দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী।
চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকী ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।
আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।প্রতি দিন সকালে খালি পেটে ১ থেকে ২টি আমলকি খাওয়া যায়। এতে সব চেয়ে বেশি উপকার হয়। তবে দিনে দু'-একটির বেশি আমলকি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।অতিরিক্ত আমলকী খেলে গলা দিয়ে টকভাব ওঠা, প্রবল অম্বল, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। আমলকীতে থাকা ফাইবার অনেকসময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমলকী জুস করে খাওয়ার চেয়ে চিবিয়ে খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত আমলকী খেলে পায়খানা কষা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিদিন আমলকী খেলে ত্বকের যেসব উপকার হয়:
ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে আমলকী ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ...
কোলাজেন উৎপাদন করে ভিটামিন সি কোলাজেন সংশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য। ...
পিগমেন্টেশন এবং দাগ কমায় ...
সূর্য থেকে সুরক্ষা ...
আর্দ্রতা বজায় রাখে ...
প্রদাহ কমায় ...
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ...
ডিটক্সিফিকেশন