দুইদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি আমার অনেক বেশি ভালো লাগে, বর্ষাকাল বরাবরই আমার খুব পছন্দের! আমি যাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আমার খুব শখ তার হাত দুটো ধরে আমি এই বাদলধারায় ভিজবো, নিজেকে বিলীন করে দিবো তার দেহের সাথে! আমি একজন পুরুষকে অসম্ভব ভালোবাসি আমি নিজে হাজারবার চেচিয়ে বলতে পারবো আমি তাকে যতটা ভালোবাসি কেউ তাকে এতটা ভালোবাসতে পারবেনা! সে ছাড়া এই পৃথিবীর সকল পুরুষকে আমার অসহ্য মনে হয়! একজন পুরুষ কতটা মায়া আর আদুরে হলে কোনো নারীর সর্বশ্ব জুড়ে বিরাজ করতে পারে! সে পুরুষটাও আমাকে যতটা ভালোবাসে, সম্মান করে, যত্ন করে তা কেউ কোনোদিন করতে পারবেনা, হয়তো সম্ভবই নাহ! আমাদের সম্পর্কটা এই দশকের সব সম্পর্কের মত নাহ! বলতে গেলে অনেক পিছিয়ে আমরা! কিন্তু ভালোবাসা, কম্প্রোমাইজ, যত্ন এসবের দিক দিয়ে সবার আগে! বলতে পারেন মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ উপরে আমি আর সে! এসবই ভাবছিলাম এতক্ষন বসে বসে! রাত প্রায় ২.৩০! আমি অন্ধকার রুমের এক কোণায় চুপটি মেরে বসে আছি! আজ খুব বিরক্ত লাগছে এই মুষলধারে বৃষ্টি! বার বার জানালার দিকে তাকাচ্ছি আর রাগ হচ্ছে আজ তো আমি বৃষ্টি চাইনি, চেয়েছিলাম কালো ঘুটঘুটে অমাবস্যা! হুট করেই দেখলাম পাশে পরে থাকা আমার মোবাইলফোন বাজচ্ছে! আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে কল করছে! কিন্তু আমি চেয়েও ধরতে পারছিনা, খুব ইচ্ছে করছে তার কল ধরে বলি, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না, কিন্তু আমি বলতে পারছিনা! সে বার বার কল দিচ্ছে, মেসেজ দিচ্ছে, এত আমার নাম ধরে মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু আমি তাও কোনো সাড়া দিতে পারছি না! আমি ফোন থেকে মুখ সড়িয়ে দেখলাম আমার বিছানারা চাদর পুরো লাল রক্তে ভেসে গিয়েছে! আকাশে মেঘের ব্জ্রপাতের আলোয় একদম আমার চোখ বন্ধ করা চেহারা দেখা যাচ্ছে! আমি আতকে উঠলাম! আমি কি মারা গিয়েছি নাকি এটা আমার ভ্রম আমার কল্পনা, আমি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারপর আবিষ্কার করলাম এটা তো আমিই কিছুক্ষন আগে ওর সাথে অভিমান করে আমি হাতের ধমনী কেটে ফেলেছি! আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম এই ভয়ে না যে আমি মারা গিয়েছি এই ভয়ে চিৎকার করেছি যে আমাকে ছাড়া ও কিভাবে থাকবে? আমি তো ওকে এই কষ্ট দিতে পারিনা, এই কষ্ট দেয়ার অধিকার আমার নেই! আমি এত বার ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করতে চাইলাম তাও পারলাম না! মুহুর্তেই মনে হচ্ছে আমি কি করেছি, আব্বু আম্মু বাবু এবং ও! ওরা কিভাবে আমাকে ছাড়া থাকবে! আমি ওর যে ভুলের জন্য নিজেকে সবসময় শেষ করার চিন্তা করতাম আজ তা করেই ফেলেছি! আমার মধ্যে কখন এই পৈশাচিক সুখ উদয় হলো যে আমাকেই হারালে যে কষ্টটা পাবে সেটাতেই আমার শান্তি লাগবে? এই সামান্য সুখের জন্য আমি সব শেষ করে ফেললাম! ও না হয় ভুল করেছিলো আমি ক্ষমা না করলেও ওর ভুল আমি মেনে নিতেই পারতাম! কিন্তু আমি পিশাচের মত সবকিছু শেষ করে দিলাম!
নিজের নিথর দেহের পাশে বসে রইলাম! তাকিয়ে দেখছি জীবনে এই ২য় বার এত বেশি আফসোস হচ্ছে যে আমার জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারতো! কাল ওর সাথে আবার দেখা হতো অফিস শেষ করে আমার কাছে চলে আসতো! কিন্তু কাল ও আমার লাশ কিভাবে দেখবে? ও তো আমাকে দেখতেই পারবেনা, ও আমাকে অনেক বেশি ঘৃনা করবে, ও আমাকে স্বার্থপর ভাববে, ও আমাকে ভুল বুঝবে এটা ভাববে আমি আমার জেদের জন্য ওর থেকে ওর ভালোবাসা আর সুখ কেড়ে নিয়ে চলে গিয়েছি! আজ আমার কান্নার কোনো শব্দ হচ্ছেনা! অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে!
হঠাৎ আকাশে অনেক জোরে ব্জ্রপাত হলো, এত্ত বিকট আওয়াজ আমি ধরফড়িয়ে উঠলাম দেখলাম বাইরে অনেক ঝড়ো হাওয়া বইছে, আর মুষলধারে বৃষ্টি! আর পাশে আমার ফোন বাজছে, ও কল দিচ্ছে! আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আর আমার লাশ নেই, পুরো বিছানা শুকনো!
এটা কি স্বপ্ন ছিলো?
আমি ওর কলটা ধরলাম, সে আমাকে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলো " জান, তুমি কি ঘুমাচ্ছিলা? কতগুলো কল দিলাম ধরলে না"?
আমি হাফ ছেড়ে বাচঁলাম! আমি নিজে চাইলেও নিজেকে ওর থেকে আলাদা করতে পারবো না!ভেজা কাক।
বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। প্রচন্ড বাতাস।। ভয়ংকর বজ্রপাত।বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটার চমৎকার সুর।এছাড়া পৃথিবী নিস্তব্ধ। অলস।ঘাবড়ি মেরে বসে আছে ইট পাথরের দালান।গাছের পাতারা কোমর দুলিয়ে নাচছে।তাদের নাচার ইচ্ছে নেই।তবু নাচাচ্ছে। জোর করে কিছু করা হলে তা সুন্দর হয়না।পাতাদের নাচ ও সুন্দর লাগছে না।যেভাবে অন্য দিন সুন্দর লাগে।নাচ দেখে আমার মন প্রশান্ত হচ্ছে না।
ভেজা কাক।ঠোঁট কে দেয়ালে ঘেঁষে ঘেঁষে কি যেন করছে। মাঝে মাঝে লেজ নাড়িয়ে শরীরে লেপটে থাকা পানি সরাচ্ছে। হয়তো ঠান্ডা লাগছে।যেমনটা আমাদের লাগে।আচ্ছা আমাদের তো ঠান্ডা লাগলে সর্দি হয়।জ্বর মাথা ব্যথা হয়।পাখি। কাক।ওদের ও কি হয়!!!! কখনো কথা হলে জানতে চাইবো।
আচ্ছা তারা যখন খুব করে অসুস্থ হয়।শরীর খারাপ লাগে।নড়তে পারেনা।তখন কি আমার মায়ের মতো তাদের মা ও তাদের যত্ন নে! মাথার উপর হাত দিয়ে কি বলে ইশশশ খুব জ্বর হয়েছে।বাবা কষ্ট হচ্ছে!! তাদের মা ও কি আমার মায়ের মতো জড়িয়ে ধরে! হ্যাঁ। হয়তো ধরে। পৃথিবীতে প্রত্যেক মা বাবা অসাধারণ হয়।তাদের সাধারণ ভাবে ভাবা যায় না।কল্পনা করা দোষের।মায়ের আলতো ছোঁয়ায় তাদের ও হয়তো ভাললাগে।মন ভাল হয়। ফুরফুরে মেজাজ ফিরে আসে।পৃথিবীর সব সুখ উড়ে আসে বুকে।আমার তো এমনি হয়।
আচ্ছা এই যে ভেজা কাক।তার ঘর কোথায়! এখানে কি করে ও! তার সাথে কেউ নেই। কেউ আসেনি। হয়তো ছিলো।এখনো হারিয়ে ফেলেছে।বৃষ্টি বাতাসের তীব্রতায়।এসব আমি ভাবছি।আচ্ছা সে কি আমার মতো খুব একা! তাই সে একা একা চলছে।এই দেখুন।তার পাশে যদি কেউ থাকতো তাহলে তার দিকে অদ্ভুত রকমের মায়ার চোখে তাকিয়ে থাকতো।হয়তো একে অপরের সাথে লেগে লেগে বসতো।ইশশশ।খুবই অভাব।শূন্যতা।তার সঙ্গীর প্রয়োজন।যেমনটা আমার প্রয়োজন। আজ। বা কাল হোক। গোপনে থাকতেও পারে আমার জানা নেই হয়তো। আচ্ছা সে যদি ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে যায় মা কি খুব বকবে? চেচাঁমেচি করবে! আমার মা তো করে।অস্থির হয়ে পড়ে।পরে আবার বুকের কাছে এনে বলবে, এত ভেজার প্রয়োজন টা কি ছিলো? দেখ শরীরটা গরম হয়ে আসছে।উফপপপপ।হা তার মা ও হয়তো তাকে এমনটা বলে।তাই সে এখন বাড়িতে যাচ্ছে না।ভয়ে ভয়ে।খুব ভয়ে।শুকিয়ে গেলে অবুঝ শিশুর মতো আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে পড়বে।মা যাতে না বুঝে।ইশশশ সে ছেলেবেলা।আমি তো ভেজার পর আমাদের ঘরের আগের ঘরের টিনের নিচে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম।কাঁপতাম থর থর করে।গায়ের লোম গুলো কেমন জানি শীতল হয়ে যেতো।মনের ভেতর থাকতো মায়ের সোহাগী বকার ভয়।
জানি এই বকা আদরের।যত্নের। স্নেহের।মায়ার।তবু ভয় লাগতো।অজান্তেই।
এখনো ছেলেবেলার মতো ছেলেমানুষীর মতো মা কে ভয় করি।মায়ের কাছে সবাই ছেলেমানুষী।
আচ্ছা এই যে কাক।সে ও কি বড় হলে আমার মতো মা কে ভয় পাবে!
পাবে হয়তো।যদি সে অশৃংখল,অবাধ্য না হয়।সে অবাধ্য না হোক।মায়ের ভালবাসা তার বুকে থাকুক।জেগে উঠুল মায়া।হারিয়ে না যাক পৃথিবীর সব স্মৃতি।আমার মতো।
বৃষ্টি থামছে।শুনশান নিরবতা।পাতারা হা করে তাকিয়ে আছে।ক্লান্ত।নুইয়ে পড়ছে। আস্তে আস্তে।ভেজা শরীরটা একটু শুকিয়ে আসছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে দিলো এক দৌড়। হয়তো ঘরে ফিরবে।না হয় প্রিয়জনের কাছে।না হয় জীবিকার আশায়।সে ফিরে যাক।
সে নেই।চলে গেছে। আমি লিখছি।ভালো থেকো।পৃথিবীকে ভালবেসো।
ফিরে যাও। তোমারো হয়তো আমার মতো মা। বাবা। ভাই। বোন আছে।থাকুক।তারা ভালো থাকুক।তাদের ভালোবেসো।ভালোবাসো।ভালবাসি।