ইসলামে মোট ২৫ জন নবীর নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের প্রতিটি নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, এবং তাঁদের কাজ ছিল মানুষকে একত্ববাদে আহ্বান করা এবং আল্লাহর আদেশ প্রচার করা। এখানে কুরআনে উল্লেখিত নবীদের নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
১। আদম (আঃ)
প্রথম মানব এবং প্রথম নবীঃ ইসলামিক বিশ্বাস মতে, আল্লাহ প্রথমে আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। তাঁকে পৃথিবীতে মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে পাঠানো হয়।
২। শীশ (আঃ)
আদম (আঃ)-এর পুত্র এবং নবী। শীশ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশনা পালন করতে থাকেন এবং তাঁর জাতির প্রতি দায়িত্ব পালন করেন।
৩। ইদ্রিস (আঃ)
তাঁকে বিশেষজ্ঞ এবং জ্ঞানী নবী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি প্রথম মানুষ হিসেবে লেখা এবং সেলাই শেখেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
৪। নূহ (আঃ)
মহাপ্লাবন এবং নূহের কিশতীঃ নূহ (আঃ) আল্লাহর প্রতি অবাধ্য জাতির কাছে নবী হিসেবে প্রেরিত হন। মহাপ্লাবনের সময় তাঁর নির্মিত কিশতীতে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরাই বেঁচে যান।
৫। হুদ (আঃ)
তাঁকে আদ জাতির কাছে প্রেরিত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর জাতি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়।
৬। সালেহ (আঃ)
তাঁকে সামুদ জাতির কাছে প্রেরিত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাঁর জাতিকে একটি অলৌকিক উট দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা তা হত্যা করে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখীন হন।
৭। ইবরাহিম (আঃ)
একত্ববাদের প্রতীকঃ ইবরাহিম (আঃ)-কে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদী তিন ধর্মেই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করা হয়। তিনি এক আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে কোরবানি দিতে প্রস্তুত ছিলেন।
৮। লুত (আঃ)
তিনি সদোম ও গোমরাহর জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, যাঁরা অত্যন্ত পাপী কাজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। আল্লাহ সেই জাতিকে ধ্বংস করেন।
৯। ইসমাইল (আঃ)
ইবরাহিম (আঃ)-এর পুত্র, যাঁকে আল্লাহর নির্দেশে কাবা নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
১০। ইসহাক (আঃ)
ইবরাহিম (আঃ)-এর আরেক পুত্র, যাঁর বংশধর ইসরায়েলীয় জাতি থেকে বহু নবী প্রেরিত হয়।
১১। ইয়াকুব (আঃ)
ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র এবং ইউসুফ (আঃ)-এর পিতা। তাঁকে "ইসরায়েল" নামে অভিহিত করা হয়।
১২। ইউসুফ (আঃ)
সুন্দরী এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী নবীঃ ইউসুফ (আঃ)-এর জীবন একটি উদাহরণ যা সৎ চরিত্র এবং বিশ্বাসের মূল্যকে বোঝায়।
১৩। শুআইব (আঃ)
মাদইয়ান ও আইকা জাতির কাছে প্রেরিত নবী। তাঁরা ব্যবসায় দুর্নীতি এবং মিথ্যাচারে লিপ্ত ছিল, যা আল্লাহর ক্রোধকে আহ্বান করে।
১৪। আইয়ুব (আঃ)
ধৈর্যশীলতার প্রতীকঃ আইয়ুব (আঃ) ছিলেন এক অত্যন্ত ধৈর্যশীল নবী, যিনি প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন।
১৫। জুলকিফল (আঃ)
কুরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তাঁর জীবন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় না।
১৬। মূসা (আঃ)
বনি ইসরাইলের জন্য প্রেরিত নবীঃ মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ ফিরাউন থেকে বনি ইসরাইলকে মুক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে তাওরাত নামক পবিত্র গ্রন্থ প্রেরিত হয়েছিল।
১৭। হারুন (আঃ)
মূসা (আঃ)-এর ভাই এবং সহকারী। তিনি মূসা (আঃ)-এর পর বনি ইসরাইলকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছিলেন।
১৮। দাউদ (আঃ)
একজন রাজা এবং নবীঃ তাঁকে জবুর নামে একটি পবিত্র গ্রন্থ প্রদান করা হয়েছিল। দাউদ (আঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে অনুগত এবং সৎ।
১৯। সুলাইমান (আঃ)
দাউদ (আঃ)-এর পুত্র এবং একজন জ্ঞানী রাজা, যাঁর কাছে আল্লাহ অসংখ্য ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন, যেমন: প্রাণীদের ভাষা বোঝা এবং জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণ করা।
২০। ইলিয়াস (আঃ)
ইলিয়াস (আঃ) আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত একটি জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর জাতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে।
২১। আলইয়াসা (আঃ)
তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর পর নবী হন এবং তাঁর জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেন।
২২। ইউনুস (আঃ)
মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়া নবীঃ ইউনুস (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ ছাড়াই তাঁর জাতি ছেড়ে চলে যান। ফলে তিনি একটি বিশাল মাছের পেটের মধ্যে আটকা পড়েন। পরে আল্লাহর ক্ষমায় তিনি মুক্তি পান।
২৩। জাকারিয়া (আঃ)
আল্লাহর কাছ থেকে বৃদ্ধ বয়সে পুত্র সন্তান চেয়ে আল্লাহর কাছ থেকে ইয়াহিয়া (আঃ)-এর পিতা হন।
২৪। ইয়াহিয়া (আঃ)
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছে পরিচিত জন ব্যাপটিস্ট, যিনি নবী ঈসা (আঃ)-এর আগমনের সংবাদ দিয়েছিলেন।
২৫। ঈসা (আঃ)
খ্রিস্টানদের যিশুঃ ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) ক্রুশবিদ্ধ হননি বরং আল্লাহ তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। কেয়ামতের আগে তাঁর পুনরাগমন ঘটবে।
২৬। মুহাম্মদ (সা.)
শেষ নবী: মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের শেষ নবী এবং তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহর চূড়ান্ত এবং পূর্ণাঙ্গ বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।
এছাড়াও ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ অনেক নবী প্রেরণ করেছেন, যাঁদের সংখ্যা অসংখ্য। তবে, কুরআনে উল্লিখিত ২৫ জন নবী আল্লাহর বিশেষ প্রেরিত পুরুষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।