হযরত খাদিজা রাঃ( নবীজির জন্ম ও খাদিজা রাঃ মায়ের মৃত্যু)

এক সংগ্রামী নারী বলা যায় খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহু কে।

হযরত খাদীজা (রাঃ)

করতে আসে নাই তদুপরি গির্জায় পেশাব-পায়খানা করেছে-এ খবর শুনে আবরাহা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু শাস্তি দিবে কাকে? অপরাধীকে পাওয়া গেল না। এর পর পরই মক্কার এক বেদুঈন কাফেলা গির্জার পাশে রাত কাটানোর জন্যে আস্তানা ফেললো। তারা রাতে রান্না-বান্না শুরু করে দিলো। হঠাৎ চুলার আগুন গিয়ে গির্জার গিলাফে লেগে গিলাফ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। গির্জারও বেশ ক্ষতি হলো। কাফেলার লোকেরা তো ভয়ে অস্থির। সর্বনাশ। বাদশাহ জানতে পারলে ঘাড়ে মাথা থাকবে না। ভয়ে তারা রাতেই আস্তানা গুটিয়ে পালিয়ে গেল।

 

সকালে আবরাহাকে জানান হলো-জনৈক কুরায়শ এই দুষ্কর্ম করেছে। আর যায় কোথায়, বাদশাহ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে শপথ করল : আমি কুরায়শদের কা'বা ধ্বংস না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবো না।

 

অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলো, কা'বা ঘরের স্তম্ভের সাথে শিকল বেঁধে হাতী দ্বারা টান দিলেই কা'বা ঘর ধসে পড়ে যাবে। তখন হাতী দিয়ে মাড়িয়ে সব ধূলিসাৎ করে দেয়া হবে। এ কাজ করার জন্যে সে আবিসিনিয়ার সম্রাটের নিকট অনুমতি চাইল। সম্রাট তাকে শুধু অনুমতিই দিলেন না, বরং তার বিশালকায় হাতী 'মাহমুদসহ' আরও আটটি হাতী আবরাহার নিকট পাঠিয়ে দিলেন।

 

আবরাহা সৈন্য-সামন্তসহ সুসজ্জিত হয়ে বিরাট হস্তী বাহিনী নিয়ে কা'বা ঘর ধ্বংস করার জন্যে মক্কা রওয়ানা হলো। চলতে চলতে তারা মক্কার অদূরে 'মাগমাস' নামক স্থানে এসে পৌঁছলো। এখানেই তারা আস্তানা গাড়লো। এখানেই কুরায়শদের উটের চারণভূমি ছিলো। আবরাহা হামলা করে কুরায়শদের সমস্ত উট ধরে নিয়ে এলো। এর মধ্যে আবদুল মুত্তালিবের দুইশত উট ছিল।

 

আবরাহা কুরায়শ নেতা আবদুল মুত্তালিবের নিকট হানাতা নামক এক দূতকে পাঠিয়ে দিলো। দূত এসে আব্দুল মুত্তালিবকে আবরাহার সংকল্পের কথা বলল। জবাবে আবদুল মুত্তালিব বললেন: দেখুন, আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা আমাদের নেই। কারণ, কা'বা আল্লাহ্র ঘর। এর হেফাজতের জিম্মাদারও তিনি। আবরাহা যদি আল্লাহ্ সাথে যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে করুক। দেখুক আল্লাহ্ কি করেন?

 

দূত : তাহলে আপনি আমার সাথে আমাদের বাদশাহের নিকটে চলুন। আবদুল মুত্তাািথে সাথে রওয়ানা হলেন। একটু দ্বিরুক্তি করলেন না।হযরত খাদীজা (রা)

 

আবদুল মুত্তালিবের সুন্দর সৌম্য-চেহারা দেখে আবরাহা সিংহাসন ছেড়ে নিচে বসলো এবং আবদুল মুত্তালিবকে পাশে বসালো। আবদুল মুত্তালিব বললেন: আপনার সৈন্যরা আমার কিছু উট ধরে নিয়ে এসেছে। আমি সেই উট নিতে এসেছি। উটগুলো ফেরত দিন।

 

আবরাহা আশ্চর্য হয়ে গেল। বলল: আপনি মক্কার একজন নেতা। শুধু উটের কথা বলছেন? আপনার সম্বন্ধে আমার ধারণা বদলে গেল। আপনি কি জানেন-আমি কেন এই বিরাট হাতী বাহিনী নিয়ে এসেছি?

 

আবদুল মুত্তালিব : হ্যাঁ জানি। কিন্তু এতে আমার করার কিছুই নেই। কারণ, আমি কা'বার মালিক নই। কা'বার মালিক স্বয়ং আল্লাহ্। দরকার হলে তিনি তাঁর ঘর রক্ষা করবেন। আমি উটের মালিক। তাই উট নিতে এসেছি। দয়া করে উটগুলো ফেরত দিন।

 

কথা শুনে আবরাহা হা-হা-হা করে হেসে উঠলো। তারপর বললো: আসন্ন ধ্বংস থেকে কা'বাকে রক্ষা করার ক্ষমতা কারো নেই। এটা আমি ধ্বংস করবোই। আপনারা বাঁধা দিলেও আমি করতাম। যেহেতু আপনারা বাঁধা দিচ্ছেন না, তাই আপনার উট আপনি নিয়ে যান। এই কে আছিস, ওনার উটগুলো ফেরত দে। অতঃপর আবদুল মুত্তালিব তাঁর উট নিয়ে শহরে ফিরলেন।

 

তারপর আবদুল মুত্তালিব কা'বা ঘরের চৌকাঠ ধরে দোয়া করলেন: "হে আল্লাহ্! আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। আপনার ঘর আপনিই হেফাজত করুন। কুরায়শদের বহু লোক এই দোয়াতে শরীক হলো। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আবরাহা ও তার বাহিনীর উপর নিশ্চয়ই আল্লাহ্র গজব আসবে। তাই তারা সকলে শহর ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিলেন।

 

ভোরে আবরাহা তার হস্তী বাহিনী মক্কার দিকে চালনা করলো। কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাপার। প্রধান হাতী 'মাহমুদ' কা'বাকে সিজদা করে শুয়ে পড়লো। চালক বহু চেষ্টা করলো। হাতী চলা তো দূরের কথা উঠলোই না। অবশেষে বড় বড় লোহার শলাকা দ্বারা হাতীকে পেটানো হলো। লোহার শিক নাক দিয়ে ঢুকানো হলো। হাতীর চিৎকারে

 

লগে যাওয়ার উপক্রম হলো। হাজার হলেও প্রাণী তো, লোহার শলাকার

 

হযরত খাদীজা (রা)

 

পিটুনি আর শিক ঢুকানো-একি সহ্য করার মত ? কিন্তু জালেমরা অবলা নিরীহ জানোয়ারের উপর নির্যাতন বন্ধ করলো না। হাতীর গগনফাটা চিৎকারে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। তবুও তাদের প্রাণ এতটুকু নরম হলো না। নিষ্ঠুরভাবে হাতীকে নির্যাতন করতে লাগলো।

 

এমন সময় সাগর পাড় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল নামক এক প্রকার পাখি আসতে লাগলো। পাখিগুলো ছিল ছোট্ট ছোট্ট। কিন্তু অসংখ্য। মুহূর্তের মধ্যে আবরাহার বিরাট বাহিনীর উপরিভাগ ছেয়ে গেল। মনে হলো আকাশে মেঘ করেছে বুঝি। আবরাহা ও তার লোকলস্কর আশ্চর্য হয়ে গেল। কি ব্যাপার! এত পাখি কেন? তামাম আকাশ ছেয়ে গেল।

 

একথা ভাবতে না ভাবতেই হঠাৎ শুরু হলো কংকর নিক্ষেপ। একদম বৃষ্টির মতো। প্রতিটি পাখি তিনটি করে কংকর নিয়ে এসেছে। দু'টি দু'পায়ে আর একটি ঠোঁটে। কংকরগুলো ছিল ছোলা বা মসুরের মতো। কিন্তু শক্তি ছিলো। যার উপর এর একটি কংকর পড়েছে, তার দেহ এ-ফোড় ও-ফোড় মাটিতে পুঁতে যাচ্ছে। শরীরের যেখানেই পাথর লাগছে সেখানে হাড়-গোশত পুড়ে গলে যাচ্ছে। বিষাক্ত কংকর।

 

এ অবস্থা দেখে আবরাহার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়লো। কে কোথায় কোন দিকে পালাবে তা ঠিক করতে পারছে না। চারদিক থেকে সমানে পাথর নিক্ষেপ হচ্ছে। ঊর্ধ্বশ্বাসে সব যে যেদিকে সুবিধা পেল ছুটে পালাতে লাগলো। কিন্তু নাছোড় আবাবিল তাদের ছাড়লো না। মানুষগুলো নিচ দিয়ে দৌড়াচ্ছে আর আবাবিল উপর দিয়ে উড়ে উড়ে তাদের উপর কংকর নিক্ষেপ করছে। ফলে তারা পথে পথে পড়ে মৃত্যুবরণ করলো। এত জোরে এবং এত কংকর নিক্ষেপ করলো যে, তাদের দেহ চর্বিত ঘাসের ন্যায় থ্যাশথ্যাশা হয়ে গেল।

 

আবরাহা এতক্ষণ তাঁবুতে থেকে বাঁচার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। পাথরের আঘাতে তাঁবু ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হতে লাগলো। তখন আবরাহা তাঁবু ছিঁড়ে মাথায় প্যাঁচিয়ে দৌড়িয়ে পালাতে লাগলো। তাকে এবার বাইরে পেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে তার উপর কংকর নিক্ষেপ করতে লাগলো। আবরাহা দিশেহারা হয়ে প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে ছুটলো। পাখিরাও ছুটলো তার পিছে। কংকরের আঘাতে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। কিছুদূর গিয়ে সে অজ্ঞান হয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে।

 

হযরত খাদীজা (রা)

 

সমস্ত শরীর বিষক্রিয়ায় জর্জরিত। সঙ্গে সঙ্গে শরীরের গ্রন্থিগুলো পচেগলে খসে গড়তে লাগলো। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে ইয়ামেন রওনা হলো। ইয়ামেনে পৌঁছার পর অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আবরাহা মৃত্যুবরণ করলো।

 

সবচেয়ে বড় আশ্চর্য হলো-গজব দেখে সব হাতী ছুটোছুটি করে পালিয়ে গেল। তাদের কোন ক্ষতি হলো না। শুধু একটি মাত্র হাতী ঘটনাস্থলেই নিহত হলো। আবরাহার হাতী 'মাহমুদের' সাথে দু'জন চালক মক্কাতেই রয়ে গেল। তাও অন্ধ ও বিকলাঙ্গ হয়ে।

 

হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন: আমি এই দু'জন চালককে অন্ধ ও বিকলাঙ্গ অবস্থায় দেখেছি।

 

এভাবে আল্লাহ্ পাক তাঁর ঘর রক্ষা করলেন। এই ঘটনা ঘটার পর আজ পর্যন্ত আর কেউ আল্লাহ্র ঘর কা'বা ধ্বংস করার দুঃসাহস করেনি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছরই এই ঘটনা ঘটে।হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা এখন পূর্ণ যুবতী। চারদিক থেকে তাঁর বিয়ের পয়গাম আসতে লাগলো। ধনী, গরীব, যোগ্য, অযোগ্য-সর্বস্তরের পাত্রের নিকট থেকে অসংখ্য পয়গাম আসলো। শুধু সর্বস্তরের নয়, নানা ধর্মেরও বটে। ইহুদী, খৃস্টান, মূর্তি পূজক, অগ্নি উপাসক-এরূপ নানা ধর্মের পাত্র পয়গাম পাঠালো। সকলেই খুয়ায়লিদের সঙ্গে আত্মীয়তা করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়লো। সকলেরই ভীষণ আগ্রহ।

 

এত আগ্রহের কতগুলো কারণও ছিল। কারণগুলো হলো-হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা রূপেগুণে ছিলেন অতুলনীয়া এবং বংশমর্যাদায় ছিলেন সর্বোত্তম। তাঁর পিতার ছিল অগাধ ধন-দৌলত। পিতা পরলোকগমন করলে হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহাই হবেন সব ধন-দৌলতের মালিক। কারণ হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা পিতার একমাত্র সন্তান।

 

এমন একজন পরমা সুন্দরী তরুণীকে স্ত্রীরূপে পেতে কার না সাধ জাগে। তাই যুবক শ্রেণী ছিল তার জন্যে উদগ্রীব। আর অভিভাবকরা ছিলেন ভীষণ ব্যাকুল।

 

বিচক্ষণ খুয়ায়লিদ খুব ধীরস্থিরভাবে সমস্ত পয়গাম বিচার বিবেচনা করে দেখলেন। একটি পয়গামও তিনি মনমত পেলেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তিনি একজন সুপাত্রের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

 

বহুদিন অপেক্ষা করার পর, তাঁর মনের মতো একটি পয়গাম এলো। ছেলেটি যেমন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ, তেমনি শিক্ষিত, সচ্চরিত্র ও ধর্মপরায়ণ। বংশের দিক দিয়েও শরীফ। সাংসারিক অবস্থাও সচ্ছল। চেহারা-সুরতও বেশ সুন্দর। নাম আবু হাওলা। পিতার নাম জিয়ারা তামীমী। খুয়ায়লিদ ও ফাতেমা যুবকটিকে পছন্দ করলেন।

 

আত্মীয়-স্বজনরাও পয়গামটিতে মত দিলেন। উভয় পক্ষের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে ঠিক হলো। তারপর এক শুভদিনে মহা ধুমধামে আবু হাওলার সঙ্গে হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহার বিয়ে হলো।বেশ সুখে শান্তিতে তাদের দিন কাটতে লাগলো।

 

কিন্তু এই সুখ হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহার ভাগ্যে বেশি দিন ইল না। বিয়ের পর পরপর দু'টি সন্তান হলো। বাল্যকালেই সন্তান দু'টি মারা গেলো। বয়সে হযরত খাদীজা (রা) পুত্রশোেক পেলেন। পুত্রশোক কাটতে না কাটতেই স্বামী আবূ হাওলা ইন্তিকাল করলেন। স্বামীর অকালমৃত্যুতে হযরত খাদীজা (রা) মনে ভীষণ দুঃখ পেলেন। অল্প বয়সে পর পর তিনটি বিয়োগ ব্যথায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। স্বামী এবং পুত্রের জন্যে কেঁদে কেঁদে হযরত খাদীজা (রা) বুক ভাসালেন। কিন্তু তাতে কি হবে? তাদেরকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তিনি সব বুঝেন। তবুও কেঁদে কেঁদে অবুঝ মনকে বুঝ দেন। একটু সান্ত্বনা খুঁজে পান।

 

ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন। কি আর করবেন, কোন উপায় অন্ত না দেখে হযরত খাদীজা (রা) বাবার বাড়ি চলে এলেন। বাবার বাড়িই হলো 'এখন তাঁর আশ্রয়স্থল।

হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা বিধবা।

এই বৈধব্য জীবন তাঁর আর বেশি দিন থাকলো না। কিছুদিন পর পুনরায় চারদিক থেকে হযরত খাদীজা (রা)-এর বিয়ের পয়গাম আসতে লাগলো। খুয়ায়লিদ এবারও গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে পয়গামগুলো পরখ করে দেখতে লাগলেন-কোন পাত্রটি হযরত খাদীজা (রা)-এর জন্যে উপযুক্ত। যতগুলো প্রস্তাব এসেছিলো তার মধ্যে একটি প্রস্তাবও তাঁর পছন্দ হলো না। তিনি সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।

 

কিছুদিন পর অন্য একটি পয়গাম এলো। এ পয়গামটি খুয়ায়লিদ, ফাতিমা ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা সকলেই পছন্দ করলেন। যুবকটির নাম আতীক। পিতার নাম আয়েদ মাখযূমী। ছেলেটি সৎ, ধনী, শিক্ষিত ও ধার্মিক। তাঁর বংশও সম্ভ্রান্ত। উভয় পক্ষের মতামতে বিয়ে ঠিক হলো। তারপর এক শুভদিনে আতীকের সঙ্গে হযরত খাদীজা (রা)-এর বিয়ে হলো। এ বিয়েতেও বেশ ধুমধাম, আমোদ-ফুর্তি হলো।

 

স্বামীর সঙ্গে বেশ সুখ-শান্তিতে হযরত খাদীজা (রা) দিন কাটাতে লাগলেন। কিন্তু এ সুখও তাঁর ভাগ্যে বেশি দিন সইল না। বিয়ের এক বছর পর হযরত খাদীজা (রা)-এর একটি মেয়ে সন্তান হলো। কিছুদিন পর স্বামী আতীকেরও মৃত্যু হলো। হযরত খাদীজা (রা) আবার বিধবা হলেন। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর মেয়েটিও মারা গেলো। এক শোক ভুলতে না ভুলতে আর এক শোক এসে তাঁর বুকে আঘাত হানলো। অল্প বয়সে হযরত খাদীজা (রা) শোকে শোকে শোকাতুর হয়ে পড়লেন।

 

এই কাঁচা বয়সে পর পর দু'জন স্বামী এবং তিনজন সন্তানের বিয়োগ-ব্যথা তাঁর কলিজাটা ঝাঁঝরা করে দিলো। শোকের পাহাড় বুকে নিয়ে হযরত খাদীজা (রা) আবার পিতৃগৃহে ফিরে এলেন। বিধবা হয়ে পিতৃগৃহে ফিরে আসার চেয়ে বড় দুঃখ ও দুর্ভাগ্য নারী জীবনে আর নেই।

 

বিয়ের পর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে হযরত খাদীজা (রা) পর পর দু'বার স্বামী হারা হলেন। কিন্তু তখনও তাঁর যৌবন পার হয়নি। তাঁর পূর্ব স্বামীদ্বয় খুব ধনী ছিলেন। কিন্তু তাদের কোন ওয়ারিশ ছিল না। কাজেই উভয় স্বামীর ধন-দৌলতের একমাত্র মালিক হলেন হযরত খাদীজা (রা)। এই বিপুল পরিমাণ ধন-দৌলতসহ হযরত খাদীজা (রা) পিত্রালয়ে ফিরে এলেন। তাই হযরত খাদীজা (রা)-এর বিষয়-সম্পত্তি আরও বৃদ্ধি পেলো। কিন্তু স্বামী হলো নারীর পরম সম্পদ। সেই সম্পদ থেকে হযরত খাদীজা (রা) বঞ্চিত হলেন।হযরত খাদীজা (রা) বিধবা হয়ে পিত্রালয়ে ফিরে আসার কিছুদিন পর তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অনেক চিকিৎসা করা হলো। কিন্তু তিনি আর ভালো হলেন না। একদিন তিনিও হযরত খাদীজা (রা)-কে শোক সাগরে ভাসিয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন।

 

ধৈর্যশীলা হযরত খাদীজা (রা)-এর ধৈর্যের সীমা-পরিসীমা রইলো না। তিনি মৃতা মায়ের শয্যাপাশে বসে ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। হযরত খাদীজা (রা) মায়ের মৃত্যুতে প্রায় পাগল। তাঁর মন আর বুঝ মানতে চায় না। পিতা খুয়ায়লিদও কাঁদতে লাগলেন। সব হারিয়ে হযরত খাদীজা (রা) শোকাতুর ও ব্যথিত হৃদয়ে মায়ের স্নেহ ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। মা তাঁকে নানাভাবে সান্ত্বনা দিতেন। মা-ই ছিলেন হযরত খাদীজা (রা)-এর শান্তির আধার। মায়ের স্নেহ-আদরে তিনি সমস্ত দুঃখ-বেদনা ভুলে গিয়েছিলেন। এ দরদী মাও তাঁর থাকলেন না। সে মাও তাঁকে একা ফেলে চলে গেলেন। এখন একমাত্র পিতা ছাড়া দুনিয়ায় তাঁর আর কেউ আপনজন রইলেন না। হযরত খাদীজা (রা) তাই চারদিক ঘোর অন্ধকার দেখতে লাগলেন।

 

খুয়ায়লিদ তখন বেশ বৃদ্ধ। স্ত্রীর মৃত্যুতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেলেন। মেয়েটিকে পর পর দু'বার বিয়ে দিলেন। দু'বারই বিধবা হয়ে ঘরে ফিরে এলো। অল্প বয়সে বেশ কয়েকটি শোকাঘাত পেলো। যুবতী মেয়ে ঘরে রাখাও মুশকিল। দিনকাল খারাপ। নিজের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। বিরাট ব্যবসা। অথচ দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। নিজেও ভালোভাবে ব্যবসা দেখাশোনা করতে পারছেন না। ফলে ব্যবসায় ভাটা পড়ে যাচ্ছে।

 

মেয়েটিকে পুনরায় বিয়ে দিতে পারলে হযতো জামাইকে নিয়ে এক রকম চলতে পারতো। কিন্তু হযরত খাদীজা (রা) তো আর বিয়ের কথা শুনতেই পারেন না। এই অগোছাল সংসারের কি হবে? কিভাবে এর সমাধান করা যায়-এসব চিন্তায় খুয়ায়লিদ অস্থির। রাতে ঘুম হয় না। এসব ভাবতে ভাবতে কত যে বিনিদ্র রজনী তাঁর কেটেছে, তা কেউ জানে না। ফলে ক্রমশ তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে লাগলো। অচিরেই তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন।


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments