"আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আমরা চর্চা করি না। আমাদের স্বভাব মানুষের দোষ ধরা , অন্যের জীবন নিয়ে সমালোচনা করা আর নিজের স্বার্থে সামান্য কিছু হলেই মিথ্যা দোষারোপ দেওয়া! অবশ্য কিছু মানুষ দিনশেষে সহমত আচরণ করে অন্যায় জানা সত্বেও আর তারাই ভালো আমাদের অনেকের চোখে। নিজেকে সাধু প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করা আর সত্যিকার হওয়া দুটো ভিন্ন বিষয়। সমালোচনা অথবা নিজের ভুলটা অন্যরা ধরিয়ে দিলে সত্যিটা অনেকে নিতে পারে না। নিজেদের স্বার্থে সহমত আর স্তুতিগাথা পছন্দ করি আমরা। নিজেকে ভালো দেখানোর চেস্টা যতটা করি, নিজেকে ভালো মানুষ করার চেস্টা করা আর হয়ে উঠে না! অথচ দুটোর মধ্যে দুরত্ব আকাশপাতাল!
নিজের কাছে সৎ, স্বচ্ছ থাকাটা সবসময় সুখের হয় না ! সংসার, সমাজ ছকের বাহিরে পা ফেলতে দেখলেই তেড়ে আসে কারণ সবকিছু ছকের মধ্যে অভ্যস্ত বলে। সবচেয়ে বড় কথা সমাজ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ভালো দিতে জানে। আর জানে মানুষকে নিয়ে পোর্স্টমর্টেম করতে! এখানে ভালোর সংজ্ঞা হলো ভালো, রেজাল্ট, পেশা, পদবী! যারা এসবের বাহিরে তাদেরকে কি তকমা জুড়ে দেয় না? সনদধারী হলে ভালো মানুষের কাতারে পড়বে এমন কোন কথা নাই তবুও এই ছকের বাহিরে কল্পনা করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ । ভুরি ভুরি সনদধারী অমানুষের চিত্র স্বচক্ষে দেখলেও আমাদের টনক নড়ে না! আমাদের চিন্তাভাবনা এখনো সেই সেকেলেই।
কারো চোখে ভালো হবার চাইতে নিজের কাছে সৎ, স্বচ্ছ থাকাটা যখন প্রাধাণ্য পাবে অথবা কেউ যখন বুঝতে শিখবে লোকদেখানো ব্যাপারের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা তখন আসলে লোকদেখানো কিংবা লেবাসধারীদের থেকে দুরে একা থাকাটা সহজ হয়ে যায় । অথবা বলা যায় দ্বিতীয় কোনো অপশন আসলে থাকেও না! দুরের কেউ না আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষেরা যখন ছক কষে আচরণ করে তখন অনেক মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নেয়। নিজের করা জগতে বসবাস করেও শান্তি নাই! কথার তীরগুলো বুকের ভেতরে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে। এই যে, সবাই বলে ক্ষমা মহৎ গুণ! সবকিছুর কি ক্ষমা হয়? অথবা মহান হবার ইচ্ছে না থাকলেও জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কেন?
আত্মসম্মানের জায়গায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয়ে যে মানুষেরা গুটিয়ে নেয় তাদেরকে ক্ষমা মন থেকে না এলে জোর করা কেন? অন্যের অনুভুতিকে অসম্মান করার পর ক্ষমা মন থেকে আসে না। চাইলেই জীবনকে সহজ করা সম্ভব, জীবনকে জান্নাত বানানো সম্ভব। আপনি কিভাবে জীবনকে ব্যবহার করবেন সেই চাবিকাঠি যার যার হাতেই থাকে।
আফসোস কিছু মানুষ নিজেদের আয়নায় দেখার বদলে অন্যকে কথার ধারে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে! মানুষের কথার ভার থেকে বাঁচতে কতো মানুষ যে নিজেদের একদম গুটিয়ে নেয়!
নিজের স্বার্থে অনেক মানুষ এতটা নীচুতে নামতে পারে! কিছু মানুষের অভিনয় দেখে অনুভব করেছি --
"স্বার্থের মায়াজালে পৃথিবীটা ঘেরা
ভালো থাকে তারাই, যারা অভিনয়ে সেরা"
সমস্যা হলো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষেরা নিজেদের বিকাতে পারে না, অভিনয় জানে না কারণ পারিবারিক শিক্ষায় এসব শিখেনি! দিনশেষে পারিবারিক শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কিছু মানুষ এতোটা ভন্ড যে তাদের সত্যিকার চেহারা প্রকাশ পেলেও সে নির্বিকার হয়ে আরেকজনের গায়ে তকমা জুড়ে! তারা ভুলে যায় একদিন সবকিছু সুদসহ ফেরত আসবে।
অনেকে আবার বলেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক কিছু হজম করতে হবে! সব সম্পর্ক টিকে থাকে আস্থা, ভরসা আর যত্নে। যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায় কেবল একার সেটা কোনো সুস্থতার পরিচয় দেয় না। কথা দেবার আগে ভাবতে হবে আমি আসলেই দায়িত্ব নেবার উপযুক্ত কিনা!
আমার ক্ষমতা আছে ১০ কেজি বহনের কিন্তু ২৫ কেজি টানতে হলে এক সময় সেই বোঝা টেনে ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিবোই!
দুনিয়া কঠিন একটা জায়গা। একবার ভুল করলে অনেক সময় আর সহজ হওয়া যায় না! ভুল করলে অনেক হাতটা সরে যায় আজীবনের জন্য। শুধু এটুকু হলে ভালো ছিলো। অনবরত কথার তীব্র বাক্যবাণে আহত হবার ভয়ে অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য ই হয়! মৃতকে নিয়ে,মাতম করার আগে বুঝতে হবে কতটা অভিমানে একাকীত্বকে সংগী করেছিল! সব জায়গায় একই ঘটনা না-ও হতে পারে। কিছু মানুষ নিজের ভালো লাগাকে,প্রাধান্য দিতে গিয়ে একুল ওকুল সব হারিয়ে সর্ব শান্ত হ'য়ে যায়। আমরা যদি মানুষকে ব্যবচ্ছেদ না করতাম সম্ভবত অনেক মানুষই বেঁচে যেতো।
আমাদের ভাবতে হবে, বুঝতে হবে।
অহেতুক সম্পর্ক টেনে বোঝার দায় থেকে মুক্তি দরকার। । সম্পর্ক টিকে শ্রদ্ধা, সম্মানবোধ, ভালোবাসা, আস্থা আর বিশ্বাসে। নিজেকে ভালো রাখতে হবে, নিজের ব্যথা অন্যে বুঝবে না। যার যার পথ আলাদা, জুতো আলাদা। কেউ কারোটা পরে পথ চলে না। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না,করে সেটার সমাধানের চেষ্টা নিজেকে করতে হবে।
আশেপাশে থাকলেই যে সেসব মানুষেরা আপন মানুষ হবে এই গ্যারান্টি আসলে নাই!
আপন জন রাই স্বার্থের জন্য পর হয়ে যায়।আর যারা হুট করে এসে আপন হয় তারা যে স্বার্থের জন্য আপনকে ত্যাগ করবে না এটা ভাবে মানে বোকামি।
মানুষ পরিবর্তনশীল যখন তখন মানুঢ নিজের রুপ আচার-আচরণ পরিবর্তন করে ফেলে।
কিছু ক্ষেতে শুনি মুরব্বরা বলে মেয়েদের মন নাকি কচু পাতার মত'
তাহলে পুরুষের মন কি ডেউ টীনের মত?
নিজকে বুঝতে শিখুন কে আপন কে পর তা বুঝার চেষ্টা করুন।দিন শেষে দেখবেন তবুও আপন একা।