বৃষ্টির রাত

Comments · 1 Views

ইমানের সাথে চললে জীবন সুন্দর

রাত তখন প্রায় ৩টা। বাইরে টানা বৃষ্টি ঝরছে, আর সেই বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ। শরীরে এক ধরনের ভারি ক্লান্তি অনুভব করলাম, মনে হলো যেনো অসুস্থ। 

 

প্রথমে ভাবলাম, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নেই, কিন্তু শরীর যেনো উঠতে চাইছে না।

 

কিন্তু যতবার উঠে দাঁড়াতে চাই, ততবার শরীর যেনো আরও ভারী হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো, যেনো কেউ আমাকে শুইয়ে রাখতে চায়। হঠাৎ মনে হলো, কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর পাশে আরেকজন বসে ধীরে ধীরে বলে যাচ্ছে, "শুয়ে থাকো। তোমার অসুস্থ শরীরটা বিশ্রাম চাইছে। ফজরের আগে আরও এক ঘণ্টা বাকি আছে, পরে নামাজ পড়তে পারবে। এখন আরামে ঘুমাও।"

 

এই কথাগুলো শুনে আমি হতবাক হয়ে উঠলাম। শরীরটা শক্ত করে বসে পড়লাম। আর তখনই দেখলাম, দু'জন আমার পাশে বসে আছে। 

 

একজন দেখতে অবিকল আমার মতো, আর অন্যজনের চেহারা এতই ভ/য়ানক, যেনো অন্ধকারের গভীরে হারিয়ে গেছে। 

 

ওদের হাতে হাত ধরে বসে থাকতে দেখে আমি স্তম্ভিত। ভয় আর কৌতূহল মিলে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "তোমরা কারা? আর একজনকে আমার মতো দেখতে লাগছে কেনো?"

 

আমার মতো দেখতে ব্যক্তিটি বললো, "আমি তোমার নফস, আর এই ভ/য়া/নক ব্যক্তি হলো শ/য়/তান।আমাদের মধ্যে বহুদিনের সম্পর্ক। সে আমাকে নির্দেশ দেয়, আর আমি তোমার মধ্যে থেকে তা বাস্তবায়ন করি। আমি তোমাকে খা/রা/প কাজ করাতে সাহায্য করি, নামাজের সময় তোমার মধ্যে অ-লসতা এনে দিই। আমার কাজ হলো তোমাকে গু/না/হের পথে চালোনা করা, আর সে আমার পেছন থেকে সব শিখিয়ে দেয়।" 

আমরা দু'জন বহুদিন ধরেই একসাথে আছি। 

শ/য়/তান আমাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে তোমাকে গু/না/হের পথে পরিচালিত করতে হবে, আর আমি তোমার ভিতরে থেকে সেই কাজগুলো তোমাকে দিয়ে করাই।" 

 

আমি হতবাক হয়ে বললাম, "তুমি, তো আমার নফস, তুমি কেনো শ/য়/তা/নের সাথে মিশে এক হয়ে গেলে?"

 

নফস উত্তর দিলো, 

"তুমি যতো বেশি গো/না/হের কাজে লিপ্ত হবে, আমি তত বেশি তার (শ/য়/তা/নের) আয়ত্তে চলে যাবো। আমি যা শিখিয়ে দিই, তুমি যদি তা করো, তাহলে সে খুশি হয়। -যতবার তুমি খা/রা/প কাজ করো, আমি ততবার শ/য়/তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাই। যতদিন তুমি সেই গুনাহের পথে চালতে থাকবে, আমি শ/য়/তা/নের নির্দেশ মেনে চলবো।"

 

আমি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলাম। এরপর জিজ্ঞেস করলাম তাহলে আমাকে কী করতে হবে তোমাকে শ/য়/তা/নের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে?

 

নফস বললো, 

"তুমি আমার দেওয়া খা/রা/প পরামর্শগুলো শুনবে না। 

 

আমি বলবো, 'নামাজ পড়বে পরে'; কিন্তু তুমি ঠিক তখনই নামাজ পড়বে। 

 

আমি তোমাকে বলবো, 'আরও কিছুক্ষণ ঘুমাও'; কিন্তু তুমি ঠিক তখনই উঠে পড়বে। 

 

আমি যখন বলবো তাসবীহ পরে পড়ে নিও, তুমি তখনই পড়ে নাও। 

 

আমি তোমার মাঝে যে অলসতা বা দ্বিধা তৈরি করবো, তা তুমি উপেক্ষা করে কাজ করে ফেলো।

 

আমি যতো বেশি চেষ্টা করবো তোমাকে গু/না/হের পথে ঠেলে দিতে, তুমি ততো বেশি আল্লহর পথে ফিরে আসবে, তওবা করতে থাকবে।

 

আর এভাবে ধীরে ধীরে তুমি আমাকে শ/য়/তা/নের আয়ত্ত থেকে মুক্ত করে আনতে পারবে।"

 

তারপর নফস গভীর শ্বাস ফেলে বললো:

"তুমি মানুষ হয়েও বারবার শ/য়/তা/নের কাছে হেরে যাচ্ছো। আমাকে শয়তানের দাসত্ব করতে বাধ্য করছো। তোমার কি একটুও লজ্জা করে না? এই নিয়ে চিন্তা হয় না? তুমি কি নিজে বুঝতে পারো না তুমি কোন পথে হাটছো?"

 

এ কথায় আমার ভেতরে প্রবল ধাক্কা লাগলো। আসলেই কিভাবে আমি বারবার শ/য়/তা/নের প্ররোচনায় হেরে যাচ্ছি?

 

আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেন,  

"নিশ্চয়ই শ/য়/তান তোমাদের শ'ত্রু। তাই তোমরা তাকে শ'ত্রু হিসেবে গ্রহণ করো।"

—(সূরা ফাতির, আয়াত ৬)

 

এ আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, শ/য়/তান আমাদের প'থভ্র'ষ্ট করতে সর্বদা প্রস্তুত। আর আমাদের নফস যদি তার হাতে চলে যায়, তাহলে আমাদের পক্ষে সঠিক পথে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

 

রসূলুল্লাহ (ছঁঃ) বলেছেন,  

"প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে তার নফস (আত্মা) এবং শ/য়তা/ন থাকে।"

 

সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনার সঙ্গেও আছে?"  

রসূলুল্লাহ (ছঁঃ) বললেন, "হ্যাঁ, তবে আল্লহ আমার মধ্যে থাকা শ/য়/তা/নকে ইসলাম কবুল করিয়ে দিয়েছেন, এবং সে আমাকে কেবল ভালো কাজের নির্দেশ দেয়।"

 -(মুসলিম শরীফ)

 

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে প্রত্যেক ব্যক্তির নফস এবং শ/য়/তান আছে, এবং শ/য়/তান সবসময় খা/রাপ পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু যাদের ঈমান শক্তিশালী হয়, তারা শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

 

অতঃপর আমি আল্লহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। আর প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি আর কখনো শ/য়/তান ও নফসের ফাঁদে পা দেবো না। 

আমাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচান, আমার নফসকে শুদ্ধ করুন এবং আপনাকে সন্তুষ্ট করার পথে চলতে সাহায্য করুন।?

 

আল্লহ আমাদের নফসকে শুদ্ধ করুন এবং শ/য়/তানের ধোঁকায় পড়া থেকে রক্ষা করুন।

আমাদের সবাইকে আপনার পথে দৃঢ় রাখুন এবং শয়/তা/নের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে রক্ষা করুন। (আমীন)

 

যদিও এটি একটি গল্প, তবুও এর ভেতরে শিক্ষামূলক বার্তা এবং বাস্তব জীবনের উপলব্ধি লুকিয়ে আছে। গল্পের মাধ্যমে মানুষকে ভালো কিছু শিখানো এবং আল্লহর পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা অনেক শক্তিশালী একটি মাধ্যম। 

 

#IslamicReminder #

Comments
Read more