প্রেগন্সীর দিন গুলো।

দীর্ঘ ৯ /১০ মাস একটা মায়ের সংগ্রাম

বিয়ের ছয়মাসের মধ্যে জানতে পারলাম আমি কনসিভ করেছি।ভালোবেসে কিছুটা অসময়েই চটজলদি বিয়ে হয়ে গেছে আমার আর অভ্রর।

আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ার আর এদিকে অভ্র মাস্টার্স কমপ্লিট করে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে।

এ বাড়ির কিছুটা অমতেই বিয়ে করেছি আমরা।আসলে আমার বাসা থেকে বিয়ের চাপটা বেশি ছিলো তাই বাধ্য হয়ে এমন ডিসিশন নেওয়া।

অভ্ররা এক ভাই-বোন।ও ছোট তবে দিদির বিয়ে হয়ে গেলেও এ বাড়িতেই থাকে কারণ তার বর প্রবাসী।দিদির ৫বছরের একটা মেয়ে আছে। 

বিয়ের পর মাস খানেক ভালোই কাটছিলো সংসার কিন্তু যত দিন পার হচ্ছিল মুখের চেয়ে মুখোশের মিলটা খুঁজে পাচ্ছিলাম।

আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম যেদিন বাচ্চা পেটে আসার খবর শুনে শাশুড়ি মায়ের প্রথম বক্তব্য ছিলো এ বাচ্চা রাখা যাবে না তার কারণ ছেলের এখনো ইনকাম সোর্স হয়নি অথচ শ্বশুরের ব্যবসায় যেদিন থেকে অভ্র ঢুকেছে সেদিন থেকে উন্নতি হচ্ছে। এসব গল্প অভ্র আমার কাছে বলতো।

 

বাচ্চাটাকে আমার শাশুড়ী মেনে নিতে পারলো না কেন জানি।সবাই প্রেগ্ন্যাসিতে বমি করে মাথা ঘোরায় এমন লক্ষন থাকে অথচ এসব কিছুই আমার মধ্যে ছিলো না।আমি অন্যসময়ের মতোই কাজ করতে পারতাম।

তবে মিনিটে মিনিটে খুদা লাগতো মনে হতো সারাদিন খাই।

নিজেই বিরক্ত হয়ে যেতাম এমন হচ্ছে কেন আমার সাথে।তারপর যখন চারমাস শাশুড়ী তখন অভ্রকে বলছিলো তোর বউ তো ইদানীং এমন খাচ্ছে আস্ত হাতিটাও খেতে পারবে।বাবার বাড়ি কি খাইছে না খাইছে।এখানে এসে রাজভোগ দেখে জিহ্বা বড় হয়ে গেছে। 

তুই বরং চাকরী খোঁজ তোর বাবার ব্যবসা তোর বাবাই দেখবে।

বউ সন্তানের দায়িত্ব নিতে শিখ।

খাওয়ার খোঁটাটা আমি নিজে কানে শুনে ফেলেছিলাম আর তারপর খাইতে বসলে অরুচি আসতো।

 টুসুকে(ননদের মেয়ে)

 আগে দেখতাম মামনি ডাকতো কিন্তু বেবি পেটে আসার পর মামী বলে ডাকতে বলেছে তার মা।

একদিন অভ্রকে বলেছিলাম সন্দেশ আনার জন্য সে আমার জন্য সন্দেশ এনেছিলো আর সেটা টুসু দেখে ফেলে এবং তার মাকে বলে দেয় এরপর বাসায় আরেক অশান্তি আমি নাকি রাক্ষসী।

 

সেদিন রাতে অভ্রর বুকে শুয়ে খুব কেঁদেছিলাম আসলে অভ্রও আমায় সময় দিতে পারতো কম।

ব্যবসার সূত্রে বাইরে যেতে হতো অনেক।

প্রেগ্ন্যাসির সময় একটা মেয়ে কতটা একলা হয়ে যায় সেটা সেই মেয়েটাই বুঝে।

স্বামীর সঙ্গ পরিবারের সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি জরুরী।

 

সাতমাসের সাধের দিন টুসু আমার মেকাপ বক্সটা ভেঙে ফেলেছিল বলে তাকে ধমক দিয়েছিলাম আসলে বিয়ের আগের টিউশনি করে টাকা জমিয়ে একটাই ব্যান্ডের মেকাপ কিনেছিলাম সেটাই টুসু ভেঙে ফেলাতে আমার খুব মন খারাপ হয়।

 

সেদিন অভ্র সমেত আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

পুরো তিনটামাস শাশুড়ি মায়ের একটা ফোন কলের অপেক্ষা করতাম ননদের একটা মেসেজের অপেক্ষা করতাম কিন্তু কেউ কখনো নিজে থেকে কথা বলেনি বরং অামিই দিনে একবার করে ফোন দিতাম।

 

অভ্র প্রতি সপ্তাহে আসতো আমাকে দেখতে এটা ওটা নিয়ে কিন্তু তাতেও আমার শাশুড়ীর আপত্তি ছিলো।

 

ব্যথা উঠেছিলো বলে আমার মা প্রথমে অভ্রকে ফোন দিয়ে পায় না পরে আমার শাশুড়ীকে ফোন দেয় সে এক বাক্যে বলেছিলো মেয়েটা আপনাদের তাই সব দায়িত্ব আপনাদের। 

শুধু শুধু আমার ছেলেটাকে টানছেন কেন?

 

তারপর আমার ভাই আর মা মিলে আমাকে হসপিটালে নেয় আর হাসপাতালে পৌছায় অভ্র। 

তারপর সিজার করে যখন আমি একটা সুস্থ সন্তানের জন্ম দেই ছেলের কাছে ফোন করে তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো ছেলে হয়েছে না মেয়ে?

 

অথচ একবারও আমার কথা জিজ্ঞেস করেনি।

যখন জানতে পেরেছে আমাদের মেয়ে হয়েছে তখন নাকি গলা ছেড়ে কান্না ফোনের মধ্যে। 

এত টাকা খরচ করে নাকি একটা আপদ পৃথিবীতে এনেছে তার ছেলের বউ।

 

একটা মেয়ে হয়েও এমন কথা যে মানুষ বলতে পারে সে অন্তত কারো শ্রদ্ধা পাবার যোগ্যতা রাখে না।

আমাদের বর্তমান সমাজ এখনো ঘৃনীত।এখনো হাজারো শাশুড়ি আছে।যারা নিজের কন্যা সন্তান থাকার পর ও ছেলের বউয়ের কন্যা সন্তান পছন্দ করে না।কিছু ক্ষেত্রে ছেলে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করে।ছেলের কানে হাজারো কথা বিষাক্ত ভাবে ছড়িয়ে দেয়।

কিন্তু একটাবার ভাবে না যে সে নিজেও একজন নারী।একটি নারীর মানে একটি জান্নাত। এ সমাজ নিজের টা বুঝে আপনর আমার টা বুঝবে না।

মেয়ে তুমি শক্ত হও নিজের শক্তি নিয়ে নিজে জাগ্রত কর।

লেখাঃমীম

 


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments