লোভনীয় কেক??

Comments · 3 Views

কেকের আত্মকাহিনী

ভার্সিটি থেকে ফিরতে ফিরতে মোটামুটি রাত হয়ে গিয়েছে, মনে মনে আল্লাহরে ডাকতেছি আর বলতেছি, " ইয়া মাওলা আজকের মতন খালার হাত থেকে বাঁচায়ে দেও মসজিদে দশ টাকা দিয়ে দেবো "। মনে হয় দান করতে চাওয়ার পরিমান কম হয়ে গিয়েছিল, ঘরে ঢুকেই দেখি ড্রইংরুমে স্বয়ং আজরাইলের চামচা বসা৷ আমাকে দেখেই খালা শান্ত স্বরে বলে উঠলো, 

--- " কষ্ট করে বাসায় আসতে গেলেন কেন, আমারে খবর দিতেন, যে চুলায় ছিলেন সেখানেই খাওন দিতে যাইতাম "।

খালার এত সুন্দর বচন শুনে জিব্বা তো ভালোই কলিজা শুদ্ধ যেন শুকিয়ে এসেছিল। মিন মিন করে বললাম, 

---- " আসলে খালা হইছিল কি.....একটু প্রিয়াদের..... "

কথা শেষ করার আগেই ট্রাফিক পুলিশদের মতন হাত উঁচিয়ে আমার কথা মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে খালা বলল,

---- " যান কষ্ট করে ঘরে যেয়ে আমারে ধন্য করেন "।

এত অল্প ভাষনে আমারে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হতে পারে সে জিনিসটা যেন আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। প্রথমে পরান খুশিতে আইঢাই হলেও, হঠাৎই এক চিন্তা পেয়ে বসলো। বাসায় ঢুকতে ঢুকতে মনে হলো, কেমন জানি বেশিইই ঠান্ডা বাসার পরিস্থিতি। যেটা একদমই বেমানান এটলিস্ট এই বাসার জন্য। হয় ভাইয়ার গন্ডারের মতন হাসি, নয় মিলির কাউয়ার মতন চিল্লাচিল্লি, নাহয় আমার গরুর মতন ডাকাডাকি, এগুলা সবই খালার ভাষ্য। কিন্তু বিশ্বাস করেন আজ পর্যন্ত আমি গরুর সাথে আমার কোন মিল পাই নাই, ভাইয়া আর মিলিটা মানানসই। 

 

যাই হোক রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই দেখলাম এই গরমের মধ্যে সে কাঁথা আগা টু গোড়া ঢাকা দিয়ে পড়ে আছে। নট নড়ন, নট চড়ন। হাত মুখ ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখলাম সে আগের মতনই লাশ হয়ে পড়ে আছে। 

---- " এই মিলি, এই মিলি কি রে তুই কি ঘুমাইছিস?? "

---- " বাবুপু আমি ঘুমাইছি, একদম বিরক্ত করবা না বলে দিলাম "।

---- " ঘুমাইলে তুই উত্তর দিলি কেমনে.... "

---- " একদম জ্বালাবা না আমারে "।

এই বলেই ধুডুম করে উঠে বসে মিলি, ওর চোখ আর গলার স্বর শুনেই যেন মনে হলো ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। 

ওরে আর না ঘাটায়ে সোজা বারান্দায় চেয়ার টেনে বসতেই কোথা থেকে ভাবি যেন টর্নেডোর মতন ছুটে এসে বলল, 

---- " বাবু তোমার কাছে বাথরুম বন্ধের কোন ঔষধ আছে, থাকলে তাড়াতাড়ি দেও তো "।

আমি ভাবির দিক অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ভাবতেছি, আজকে সবার হইছে ডা কি!! কেউ কাঁথা মুড়ি দিয়ে লাশ হয়ে পড়ে আছে, কেউ বা বাথরুম বন্ধের ঔষধ চায়। শান্ত স্বরে বললাম, 

---- " ভাবি বাথরুম বন্ধ করতে কোন ঔষধ লাগে না, দরজা টেনে নব মোচড় দিলেই বাথরুম বন্ধ হয়ে যায় "।

আমার কথা শুনে ভাবি চেহারা দেখে মনে হলো উনি যেন সাত আসমান থেকে টুপর করে নিচে পড়েছে। ভয়ংকর এক চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 

---- " আম্মা আসলে ঠিকই বলে তোমরা এক একটা ভাইবোন আবালামির উপরে পিএইচডি করা। "

এই বলে ভাবি হনহন করে সোজা হাঁটা দিল, আর আমি ভাবতে বসলাম আমি বলদামিটা করলাম কই??

 

মিলি আস্তে করে আবার মাথা বের করে বলল, 

--- " বাবু আপু এক কাজ কর ওই হা*রামিডারে চিকা মরার ঔষধ দেও। খেয়ে একবারেই হা*গা অফ "।

এই বলেই আবার কাঁথা মুড়ি দিল সে। এবার বুঝলাম বাসায় বিশাল কোন ক্যাঁচাল লাগছে। আস্তে আস্তে বারান্দা থেকে ভাইয়ার রুমের দিকে হাটা ধরলাম, দেখি বাথরুমের দরজার কি হইছে!!!!

 

ভাইয়ার রুমের দিকে এগোতেই দেখি, ভাইয়া লুঙ্গি বুক পর্যন্ত ঢেকে দিয়ে শুয়ে আছে, খালা আর ভাবি দুইজনে দুই দিকে বসে আছে। একটু পরেই হঠাৎ ভাইয়া লুঙ্গি চেপে দৌড় দিল বাথরুমের দিকে। এর পরেই মনে হচ্ছে বাথরুমে আতশবাজি ফোটা শুরু হল, ঠাশশশ.....পুটপুট..... ভুমভুম......। এবার আমার কাছে স্পষ্ট হলো ভাবির বাথরুম বন্ধ করার ঔষধের কাহিনি। আওয়াজ শুনে খালা দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

---- " আস্ত এক একেকটা হাভাইত্তা জন্ম দিছি, কিছু দেখলে আর জ্বিব্বারে সামাল দিতে পারে না। কি দরকার ছিল ওই বা*লছাল খাওয়ার। "

---- " আম্মা আপনার ছেলের যে অবস্থা প্যাম্পাস পরানো লাগবে মনে হয় "।

পরি ভাবি গম্ভীর মুখ করে কথাটা বলা শেষ করতেই ভাইয়া বাথরুম থেকে বের হলো। আমি দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে আস্তে করে এক পাশে বসলাম, আসলে এত কিছু জানার পরেও মেইন যে কাহিনি সেটাই তো জানতে পারতেছি না। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকায়ে আসলেই প্রচুর মায়া লাগলো, চোখ মুখ গর্তে ঢুকে গেছে বেচারার। আমি আস্তে করে বললাম, 

---- " ভাইয়া কেমন ডায়রিয়া হচ্ছে, বেশিই পাতলা নাকি "।

---- " আলহামদুলিল্লাহ বিশাল ভালো ডায়রিয়া হচ্ছে। আর এমন পাতলা হচ্ছে যা দিয়ে তুই কুলি করতে পারবি।"

ভাইয়ার উত্তর শুনে পেটের নাড়ি ভুড়ি সহ গুলিয়ে আসার উপক্রম হলো আমার। খালা বেশ রাগ দেখিয়ে বলল,

---- " মরে মরে ক্ষুদের হাঁড়ি ছাড়ে না, শরীরের এই পালা তারপরও ঠেস মারতে ছাড়ে না। ও তো শুধু তোর শরীরের অবস্থা জিজ্ঞেস করতেছে।"

---- " আম্মা আপনি শুধু আমার দোষটাই দেখবেন আজীবন, একটায় পেটের এই অবস্থা করছে,আর একটায় আইছে জিগাইতে......! "

কথা শেষ করতে না করতেই ভাইয়া আবারও পেট চেপে বাথরুমে দৌড়। খালার দিকে তাকায়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

---- "খালা হইছেডা কি, আমারে একটু কন তো "।

---- " তোর গুনবতী বইন আছে না, তারে যাইয়া জিজ্ঞেস কর। কি ছাতার মাথা বানাইছিল তাই খেয়ে আমার পোলাডার এই পালা "।

 

এবার আমার কাছে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হওয়া শুরু করলো কেন জিন্দা লাশ হয়ে পড়ে আছে ওইডা ঘরের ভিতরে। নির্ঘাত উত্তম মাধ্যম পড়ছে পিঠের উপরে। আমি আর কথা না বাড়ায়ে মিলির মাথার কাছে আস্তে করে যেয়ে বসলাম। আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলায়ে দিতে দিতে বললাম,

---- " বুজান, ও বুজান কি হইছে.... এমন করে মুড়া দিয়া পড়ে থাকলে কেমনে কি.. "

এমন আহ্লাদী গলা শুনে মিলি আলগোছে আমারে জড়ায়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি আবারও গলা নরম করে বললাম, 

---- " আচ্ছা হইছেটা কি শুনি একটু..... "

---- " আমাদের বাসায় গুনের কোন কদর নাই, রান্না করলেও দোষ, না করলেও দোষ "।

---- " কে কি বলছে??? "

---- ' কেক বানাইছিলাম, সেই কেক ঠান্ডা করতে ফ্রিজে রাখছি। ভাইয়া খেয়ে ফেলছে আমার কোকনাট ফ্লেভারের কেক " 

এটুকু বলেই মিলি আবারও ফ্যাচ ফ্যাচ করে নাক টানতে থাকল। আর আমি মনে মনে সমীকরণ মিলাতে বসলাম, কেকর মধ্যে কি এমন মিশাইছে যে, ভাইয়া প্রায় বাথরুমের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছে। যাক এখন এসব জিজ্ঞেস করলে আরো হিতে বিপরীত। 

---- " উঠে বস, আমি তোর মাথায় তেল দিয়ে দেই। মন ভালো হয়ে যাবে "।

মিলিকে ঠান্ডা করার এক বহুল প্রচলিত ট্রিকস হলো, ওর মাথায় তেল মালিশ করা। যতই রাগ থাকুক না কেন বেচারা ঠান্ডা হয়ে যায়। রান্না ঘরের উপরের ডান কেবিনেট খুলতেই তেলের বোতলের দিক তাকিয়ে দেখি আড়াইশ এম এল এর পুরো বোতলই ফাঁকা। কালকে রাতে মেথি পেঁয়াজ শিকাকাই সহ আরো কত কিছু দিয়ে জ্বাল দিয়ে এই তেল বানাইছিলাম। তেলের বোতল খালি দেখে মেজাজ এত খারাপ হলো যে বলার মতন না। চিৎকার করে খালারে ডেকে বললাম, 

--- " আমার তেল কই...কত কষ্ট করে আমি তেল বানাইছিলাম "!

এটুকু বলেই আমার চোখ দিয়ে পানি আসার যোগাড়। মিলি ততক্ষনে গুটি গুটি পায়ে এসে রান্না ঘরে হাজির, মিনমিন করে বলল,

---- " আসলে বাবু আপু আমি ভাবছিলাম ওইটা রান্নার তেল, তাই কেকের মধ্যে দিয়ে দিছিলাম। "

এটুকু শোনার সাথে সাথেই যেন আমার হিতাহিতশূন্য হয়ে গেলাম। কেমনে যে ওর চুল আমার হাতে চলে আসলো সেটা নিজেও জানি না। পিঠের উপর দুই ঘা বসাতেই খালা আর ভাবি চলে আসলো মিলির চিৎকার শুনে৷ পিছনে দেখি ভাইয়াও এসে হাজির। সব শুনে খালা যেন পাথর হয়ে গেল, ভাইয়া মিন মিন কর‍তে করতে বলল, 

---- " এএএ নাম দিছে কোকনাট কেক উইথ হানি গ্লেস। ছাল নাই কু*ত্তার বাঘারাম নাম। এজন্যই তো কই খাই আর পেঁয়াজের গন্ধ আসে কি জন্য।"

---- " ছোছার ঘরের ছোছা তাও তো পুরো কেক খাইছ তুমি "।

মিলির ঝামটা শুনে ভাইয়া হাত উঁচু করে বলল, 

--- " দে তো বাবু দে, আরো দুইটা কিল দে আমার পক্ষ থেকে"।

আমি হাত উঁচু করতেই খালা আমার চুলের মুঠি ধরে বলল, 

---- " সব দোষ তোর, কে কইছিল তোরে তেল রান্না ঘরে রাখতে। না তুই তেল রান্না ঘরে রাখতি, না এই গুনবতী হনুমান কেকে ওই জিনিস ঢালতো। না এই রাক্ষসটায় ওই কেক গিলে বাথরুমে পারমানেন্ট এড্রেস বানাতো "।

 

রুমে বসে পিঠ ডলতেছি আর ভাবতেছি, আমি যে মাইরটা খাইলাম, কেন খাইলাম কিজন্য খাইলাম৷ কেক বানাইলো কে, খাইলো কে আর সেই কারণে মাইরটা খাইলো কে। আমার জীবনটাই এমন দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রীর কিছু হলেও আমারে এরা পুলিশে দিয়ে বলবে সব দোষ এর। 

 

কোকনাট কেক 

 

Comments
Read more