বুদ্ধি

মানুষের কত রকম বুদ্ধি আছে চলেন দেখি?

বিয়ের প্রথম রাতেই বউ যখন দুধের পরিবর্তে, কাঁচের গ্লাস ভর্তি সবুজ সবুজ থ্যাকথ্যাকে কিছু একটা নিয়ে এসেছিল, সেদিনই বোঝা উচিত ছিল বিবাহিত জীবনের আরেক নাম বেদনা৷ কিন্তু নতুন নতুন চুল গজাইলে নাকি মানুষ চেরাক জ্বালাইয়া দেখে, আমিও নয়া বউয়ের ভালবাসায় গ্লাস হাতে নিতেই ঝাঝালো আর তিতা গন্ধ যেন নাসিকায় বিশাল আকারে ধাক্কা দিল৷ মিষ্টি হেসে বউয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলাম,

___ " ও গো এটা কি এনেছ আমার জন্য... "

আমি তো হাসিতে চিনি ঢেলেছিলাম এক কেজি , ওদিকে বউ আমার কেজি পাঁচেক চিনির মিষ্টি হাসি ফিরায়ে দিতে দিতে বলল,

___ " এটা আমার ভালবাসা।"

ব্যাস এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট, গ্লাসের জিনিসটা ঠোঁটে নিয়ে যেই ঢক করে বড় এক ঢোঁক গিললাম, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। জিব্বা তো ভালই দাঁত, পাকস্থলি, খাদ্যনালী সবাই মিলে যেন আমার বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিতে থাকলো। তিতা আর ঝালের কম্বিনশনের সেই অদ্ভুদ পানীয় খেয়ে আমার তো আর মুখ বন্ধ হয় না। কুকুরের মতন জিব্বা ঝুলিয়ে ভালবাসাকে ধাক্কা দিয়ে সাইডে রেখে পানি খুঁজতে যেই খাটের থেকে উঠতে যাবো তখনই বউ হাত ধরে কিউট মুখ করে বলল,

___ " ওগো কই যাচ্ছ, গ্লাসের বাকিটা খাবে কে?"

পারি না নতুন বউয়ের আবদার ফেলতে না পারি কইতে, " যে বউ এই জিনিস খাইলে হয়তো বাসর রাতেই তুমি বিধবা হইয়া যাইতে পারো।"

উপায় না পেয়ে উপরওয়ালার নাম নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সেই ভয়াবহ পানীয়টা গিলে যেই বউয়ের হাতে গ্লাসটা দিলাম সেই বউয়ের মুখে যেন আটশ পাওয়ারের বাল্বের মতন জ্বলে উঠলো। মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 

___ " ও বউ কি জিনিস খাওয়াইলা আমারে একটু বলবা?, "

___ "করোল্লা, আদা, গোল মরিচ এসব মিলিয়ে একটা নতুন জুস করেছিলাম, এটাই তোমাককে খাওয়ালাম "।

বউ লাজুক হাসি দিয়ে বলল। মানুষ নাকি অল্প শোকে কাতর হয় আর অধিক শোকে পাথর। আমি এই দুই লেভেলের উপরের শোকে হজম হয়ে গেলাম, যে আমি কোন আমলে করোল্লা ভাজি খাই না সেই আমাকে বিয়ের প্রথম রাতেই করোল্লার জুস খাওয়ালো উইথ আদা এন্ড গোল মরিচ। এসব ভাবার আগেই পেটের মধ্যে মোচড় কয় কারে, বউয়ের সাথে রোমান্স বাদ দিয়ে চললাম পেটের ডাকে সাড়া দিতে। সেদিন রাত মোটামুটি বাথরুমেই কাটিয়ে ছিলাম। শেষ রাতের দিক যখন বউ ডাক দিল তখন কথা বলার শক্তিটুকুও পাচ্ছিলাম না, মিনমিন করে বললাম,

___ " ও গো কষ্ট করে একটা বালিশ দিয়ে যাবা, একটু শুইতাম আর কি।"

বউ ওদিক দিয়ে কি উত্তর দিয়েছিল সেটা আমার শোনার মতন ক্ষমতা ছিল না। 

 

পরের দিন যখন রুম থেকে বের হলাম তখন আমাকে দেখে ভাবিরা খালি মুখে কাপড় দিয়ে হাসাহাসিই করেই যাচ্ছে। চাচাতো ভাইয়ের বউ তো মুখের উপরে বলেই দিল, 

___ " ইমনরে তো এক রাতেই চুষে নেওয়া আমের মতন দেখাচ্ছে, কাহিনি কি?"

ভাবির কথা শুনে চুপ করে হেটে ডাইনিং রুমের চেয়ারে এসে বসতেই, আব্বা যেন চোখ গরম করে কিছু বলতে যেয়েও বললেন না। চোখ ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলাম আমার বউ কই? আমিই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র পুরুষ, যে কি না তার বাসর রাত বাথরুমে কাটিয়েছে। আব্বাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো আম্মার কথা, এমন সময় আমার বউ আর আমার আম্মা এসে ঢুকলো ডাইনিং রুমে, আর আমার বউয়ের হাতে ট্রে ভর্তি হাবিজাবি কি কি জানি। তা দেখেই আমার অন্তর আত্মা যেন খাঁচা ছেড়ে উড়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করল৷ আম্মা গাল ভর্তি হাসি হেসে বলল,

___ " দেখেছিস ইমন, সায়মা কত লক্ষী একটা মেয়ে। একলা হাতেই সব রান্না করেছে, আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় নি। "

মনে মনে আফসোস করলাম আম্মার জন্য, মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললাম, 

___ " আপনার পছন্দের আসলেই জুড়ি নেই আম্মা।"

আড় চোখে আব্বা দেখলাম খুশিতে গদগদ হচ্ছেন, মনে মনে বললাম, " আব্বা এই খুশি আধা ঘন্টা পরে গালিতে রুপান্তরিত হবে "।

___ " দেও বউ মা আমারে নাস্তা দেও "।

আব্বা খুব আগ্রহের সাথে বলল। সায়মা মানে আমার বউ লাজুক লতা হয়ে বলল,

___ " আম্মা আপনিও বসে পড়েন আব্বার সাথে, আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি সবাইকে।"

আম্মা পারে না দৌড়ায়ে টেবিলে বসে পড়লো। স্যুপের বাটিতে ডাইলের পানির মধ্য কয়েকটা সোলার টুকরা যেন ভেসে আছে। এই খাবার আমি তো ভালই আমার বাপ মাও মনে হয় তাদের বাপের জন্মে দেখছে কি না সন্দেহ সেটা উনাদের দুই জনের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দুজনে একসাথেই মুখে নিল জিনিসটা আর নিয়েই মাশাল্লাহ, পারতেছে না ফেলে দিতে, না পারতেছে গিলে ফেলতে। আব্বা আম্মা দুজনেই খুব কষ্টে বাটি ভর্তি জিনিসটা গিলতেই সায়মা বাটি এগিয়ে নিয়ে এসে বলল,

___ " বাবা আর একটু নেন.... "

___ " না না আর৷ না আর না... "

আব্বা আঁতকে উঠে বলল। আম্মা পানি খেতে খেতে বলল,

___ " এটা কি ছিল বউ মা,, আগে কখনও খাই নাই তো.! "

___ " আম্মা এটা বটল গার্ডেন স্যুপ উইথ স্পিনিচ জিনজার এন্ড ব্লাক পেপার।"

বউয়ের মুখে খানার নাম শুনে, আমার বাপ আর মায়ের মুখে মাছি যায় আর আসে। আমি বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছি আর ভ্যবতেছি, জিনিসটা কি আছিল। সায়মাই খোলসা করলো, 

___ " লাউ দিয়ে স্যুপ করেছি বাবা সাথে পালং শাক দিছি৷ আপনাদের বয়স হইছে এখন এসব খাবারই খাবেন!"

এটুকু বলেই সায়মা রান্না ঘরে চলল, কপাল ভাল তখনও ব্রাশ করেছিলাম না, তা না হলে এই জিনিস খেলে হসপিটালে এডমিট হতে হতো। আব্বা এখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন , আমি যে কি করেছি সেটাই তো বুঝলাম না। সায়মা ফিরে আসার আগে আমি আব্বা আম্মা সব ডাইনিং রুম থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেলাম।

 

সেদিনের পর থেকে আব্বা আম্মা বেশিভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকে, আজ এই ফুপুর বাড়ি কাল অমুক মামার বাড়ি। আমি বেচারা সকালে যাই অফিসে, আর... ফিরি গভীর রাত্রে৷ মানুষ নাকি নতুন বিয়ে হলে বাসায় আসার জন্য পাগল হয়, আর আমার কাছে সুযোগ থাকলে, আমি অফিসেই রাত পার করতাম। প্রথম দুই দিন বাসা থেকে বউ লাঞ্চ দিয়েছে দেখে, কলিগরা কাড়াকাড়ি করেছে খাওয়ার জন্য। আর এখন আমি লাঞ্চে বসলে আমার টেবিলের দুই এক কিঃমিঃ মধ্যে কেউ আসে না। আমাকে নিয়ে অফিসে সেই লেভেলের চর্চা হয়, কারো কারো মতে, আমার পেট লোহার তৈরি যা যায় তাইই হজম হয়ে যায়। একদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছি, " আচ্ছা বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে আমরা যে প্রায় মার্ডার হতে হতে বেঁচে যাচ্ছি, তাইলে ওর হাতের র‍্যন্না ও খায় কি করে "। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে, তাই ঠিক করলাম আজকে বউ কখন খায়, সে বিষয়টা তো দেখতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ পরের দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজ পরে টেবিলে একাই বসেছি খেতে, আজকের মেনু আপেল টার্ট উইথ বিফার ফুলকপির রস মালাই। তরকারির চেহারা দেখেই পেটের ভিতরের খাবার সব মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকলো। বহুত কষ্টে তাদের আটকিয়ে মুখে হাসি টেনে বললাম,

°__ " ও বউ, বউরে আসো না তুমিও আমার সাথে খাও"

বউ এবার কপাট মিষ্টি ঝাড়ি দিয়ে বলল,

___ " ধুর কি যে বলো না, তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে! "

মনে মনে আফসোস করলাম, " তাইলে আমার পেট খারাপ হইলে, তুমি কেন হাগো না বউ "।

খাওয়া কোন মতে শেষ করে রুমে যাওয়ার কথা বলে, রান্না ঘরের পাশে যেয়ে ঘাপটি মেরে রইলাম। বউ কি করে খায়, সেটা আজকে আমি সেটা উদ্ধার করবোই। বেশ কিছুক্ষন পর বউ এসে হাড়ি পাতিল ধুইলো সুন্দর করে, আব্বা গেছে তার মামার শালার ছেলের বিয়ে খেতে আম্মাও আব্বার লেজ ধরে চলে গেছে৷ তাই সব দ্বায়িত্ব সায়মায় উপরেই৷ সব ধুয়েমুছে সায়মা যখনই প্লেট বের করলো আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন সজাগ হয়ে গেল, বউরে দেখলাম এদিক ওদিক ইতিউতি করে রান্না ঘরের উপরের তাক থেকে কি যে একটা নামালো। আমি জিরাফের ভায়রা ভাই হয়ে, একটু গলা টানা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম আছেটা কি ওর ভিতরে৷ বউ আমার বাটির ঢাকনা সরাতেই আমার মাথা যেন ঘোরা আরম্ভ করলো, বাটি ভর্তি মাংস কি সুন্দর তার কালার, দেখলেই পরান জুড়ায়ে যায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেই লেভেলের মজার তরকারি, বউ আমার কি তৃপ্ত করে খাচ্ছে, আর আমি কি না আপেল টার্টের গুঁতায় অস্থির হয়ে যাচ্ছি। খাওয়া শেষে বউ সুন্দর করে বাটি প্যাকেট করে ফ্রিজে রেখে ফোন হাতে নিল। কাকে জানি কল করেই খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল,

___ " দোস্ত তোর আইডিয়াটা হেব্বিরে, এমন খাবার খাওয়াইছি, শাশুড়ী শশুর বর সব কাইত৷ এখন আর কেউ ভুলেও বাড়ি থাকে না আর আমার রান্নার চাপও একদম নেই। তুই আসলেই রক।"

বউয়ের আলাপন শুনে আমার আর কিছু মনে নাই, এখন আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি আর বিড়বিড় করে বলছি," আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায় "।

 


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments