আমি বিবাহিত

Comments · 1 Views

বিবাহিত জীবন হাসি কান্নায় ঘিরা।

আমি একজন বিবাহিত নারী। বিবাহিত জীবনের ৮ বছরে আজও আমি আমার স্বামীর মনমত হয়ে উঠতে পারিনি। বলতে পারেন আমি একজন ব্যর্থ নারী। নিজেকে সবরকম সাজে তার সামনে প্রেজেন্ট করেছি কিন্তু ফলাফল শূন্য। আমি ব্যর্থ। আমার এই ব্যার্থতার দায় ভার কি শুধুই আমার? আমি তো সব ভাবেই নিজেকে তার কাছে সপে দেওয়ার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। 

বিয়ের পরদিন তার বিশ্রী অতীত জেনে, সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি তার আকর্ষণ বুঝে, তার শূণ্য পকেটে তার সাথে অভাব কাটিয়ে এতগুলো দিন পার করলাম। কিন্তু আজও আমি বুঝতে পারলাম না, সে কি এখনো তার সেই অতীতকে চায় নাকি আমাকে।

তার এতকিছু জেনেও তাকে ছেড়ে যেতে পারিনি কারণ আমার অতীত জীবন খুব বিভিষীকাময় ছিল। না আমি কোনো ডিভোর্সি ছিলাম, না আমার চারিত্রিক কোনো ত্রুটি ছিল। আমি আমার বাবার পরিবারে খুব অবহেলিত হয়ে বেড়ে উঠেছি। যেখানে ছিল কথার আঘাত, না খাইয়ে রাখার শাস্তি, লাঞ্চনা, অপমান। তাই খুব করে চেয়েছিলাম তাকে আমার ভালোবাসার মাধ্যমে ভালো পথে নিয়ে আসব। আদৌ আমি পেরেছি কিনা জানিনা। আচ্ছা পুরুষরা আসলে নারীদের ব্যক্তিত্বের কোন জিনিসটির প্রেমে পড়েন? পুরুষরা আসলে স্ত্রী হিসেবে কেমন নারী পছন্দ করে? 

 

আমি আমার সম্পর্কে যদি বলি। আমি খুব সাদাসিধে একজন নারী। তার প্রতি আমার দায়িত্ব আমি ১০০% পালন করি। শারীরিক মানসিক সব দিক দিয়েই তাকে সন্তুষ্ট রাখার ট্রাই করি। এককথায় একজন আদর্শ স্ত্রীর যা যা করা দরকার সবই করি কিন্তু তবুও আমার প্রতি তার কোন টান, মায়া, কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা প্রকাশ, যত্ন, প্রশংসা কিছুই পাইনা। আমি চাই সে আমার ক্লান্ত চেহারা দেখে আমার কাছ থেকে কিছু যেন জানতে চায়। আমি যেমনই আমার একটু প্রশংসা করুক, আমার কষ্টগুলো শুনে তার প্রেক্ষিতে স্বান্তনামূলক কিছু বলুক, আমার দ্বারা কোন ভুল হলে তা ধরিয়ে দিয়ে আমাকে ঐ ভুল শোধরানোর সুযোগ করে দিক।

 

বিশ্বাস করুন, আমার বিবাহিত জীবনের এতগুলো দিনে সে কোনদিনও আমার প্রশংসা করেনি। আমার চোখের জল কখনো তাকে ভাবায় নি। আমার কষ্টের কথাগুলো শোনার পরও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র মায়া দেখিনি। 

 

অনেকে বলতে পারেন এই বিষয়ে তার সাথে খোলাখুলি কথা বলেন। বলেছি, কোনো লাভ হয়নি। যেদিন বলি ঐদিন মনে হয় এইতো সে ভালো হয়ে গেছে কিন্তু পরের দিনই সব ভুলে যায়। 

 

তার সাথে কোনোকারণে অভিমান হলে আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা। সারারাত জেগে থাকি, তার পাশে শুয়েই এপাশ ওপাশ করি সে বুঝতে পারে কিন্তু একটি বারের জন্যেও আমার দিকে ফিরে তাকায় না। না খেয়ে ২/৩ দিন পার করে ফেলি সে আমার ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে একটি বারের জন্যেও বুঝতে পারেনা আমি না খেয়ে আছি। 

 

আমি মানুষটা দেখতে আহামরি সুন্দরী না হলেও একেবারে খারাপ না। কোনদিন সে আমাকে একটু সাজতে, বা শাড়ি পরতে বলেনা। যদিও নিজে নিজে পরি কোনোদিনও প্রশংসা করেনা। আর দেখা যায় ঐদিনই সে আমার আগে ঘুমিয়ে যায়। শাড়ি পরি, সাজি দুজনে একসাথে ছবি তুলবো বলে। কিন্তু ঐদিনই সে নানান অজুহাতে আমার আগে আগে ঘুমিয়ে পরে। তার প্রয়োজন অনুযায়ী আমার কাছে আসে। কখনো আমার দিকটা বুঝেনা। দেখা গেছে আমি তার জন্য রাত জেগে বসে থাকি একসাথে রাতের খাবার খাবো বলে কিন্তু সে বাইরে ঠিকি আড্ডা দিচ্ছে ১২/১২.৩০ টা পর্যন্ত। বাসায় আসলে আমি চাই আমাদের দুজনের মধ্যকার সারাদিনের সুখ দুঃখের গল্প একজন আরেকজনের টা শুনবো। কিন্তু সে বাসায় এসেই মোবাইল অথবা টিভি নিয়ে পড়ে থাকে। প্রয়োজন হলেই আমার কাছে আসে। এছাড়া ঘুম আসার আগ পর্যন্ত মোবাইল ঘাটে। দুপুরেও না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করি,আর সে বাসায় আসতে আসতে ৩.০০/৪.০০ টা বেজে যায়। আর যদি কোনোদিন বাসার না আসতে পারে তাহলে আমাকে কখনোই ফোন দিয়ে বলেনা,যে আমি আজকে আসতে পারবোনা তুমি খেয়ে নিও। আমি তার আসতে দেরি দেখে কল দিলে, তখন বলে আমি আজকে বাসায় আসতে পারব না। তার থেকে দূরে কোথাও গেলে একটু ফোন দেয়না। 

 

সে একসময় সমকামী ছিল। মেয়েরা তার স্বামীর সাথে কোন নারী দেখলে চিন্তায় পড়ে। আর আমি....তার সাথে কোন ছেলেকে দেখলেই উন্মাদের মতন হয়ে যাই। আচ্ছা এই টাইপের মানুষগুলো কি আসলেই নারীর প্রতি টান অনুভব করেনা ? যদি অনুভব নাইই করে, তাহলে আমার সাথে সে যেভাবে সংসার করে, সেটাকে কি বলে???  

 

এখন অনেকেই বলে তাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু আমার পক্ষে তাকে ছেড়ে দেয়া অসম্ভব, কারণ সে আমার সন্তানের পিতা। আমার সন্তান বাবা মা উভয়কেই খুব ভালবাসে। আর আমি আমার সন্তানের উপর থেকে বাবার আদর, পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করতে চাইনা বলেই তাকে ছাড়তে পারিনা। আমি চাই আমার সন্তান তার বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখে বড় হোক। আমাদের মধ্যকার কোন ঝামেলা কোনোদিনই যেন ওর কচি মনে প্রভাব ফেলতে না পারে। আমি এখন নিজেকে দোষারোপ করতে শুরু করেছি হয়তো আমি তার মন মত হতে পারিনি তাই এমন অবহেলা।

 

নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আমি বহুবার তাকে বুঝাতে চেয়েছি স্বামী স্ত্রীর একে অপরের প্রতি কেমন হওয়া উচিত। আমার জীবনের প্রথম পুরুষ সে। অনেক ভালোবাসি তাকে। কিন্তু আমার এই ভালোবাসা আস্তে আস্তে শেষ করে দিচ্ছে সে। রোবটিক এক জীবন আমার। 

 

তার কাছে আমার কোন আবদার গ্রহনযোগ্য হয়নি কখনোই। আমার নিজেই সেলাই করে, নিজের যাবতীয় ভরণ পোষণ বহন করি। আমার পেছনে যদি সে খরচ করে তবে সেটা প্রতি ঈদে, তাও সব সময় না। এক কথায় তার কাছে আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই, মনে চাইলেও নিজেকে মানিয়ে রাখি। শুধু চাই একটু ভালোবাসা, যত্ন, মায়া। 

 

কি করতে পারি আমি বলতে পারেন? কি করলে সে আমার প্রতি মায়া, ভালোবাসা দেখাবে? একজন পুরুষ স্ত্রীর কাছে কি আশা করে? আমার কি কোথাও কোন কিছুতে ভুল আছে, জীবনটা এত কঠিন কেন আমার জন্য? না পেলাম বাবার বাড়ির আদর, না পেলাম স্বামীর ভালোবাসা। এখন মনে হয় সবাই ভালো, শুধু আমিই খারাপ। তা না হলে অন্তত একদিকের ভালোবাসা তো আমি পেতাম। জীবনটা আমার থমকে গিয়েছে, আত্মা মরে গিয়েছে অনেক আগেই, শুধু শরীরটা বেঁচে আছে আমার। সন্তান না থাকলে হয়তো নিজের উপায় নিজেই করে নিতাম। কিন্তু নাড়ী ছেড়া ধনের বাঁধনে জড়িয়ে গিয়েছি।

Comments
Read more