ফিউশন জিলাপি
মারিয়া আফরিন নুপুর
রোজার মাস... মিলি বিকাল থেকে রান্না ঘরে খুঁটুর খাঁটুর করতেছে, কাউকে ঢুকতেই দিচ্ছে না। খালা শুধু হুমকি দিয়ে এসেছে, কোন আকাম কুকাম যদি করে মাইর নাকি একটাও মাটিতে পড়বে না। বড় আপু সেও একবার ট্রাই করেই ফিরে এসেছে। মুখ ঝাকিয়ে গম্ভীর স্বরে আমাকে বলল,
*বুঝলি বাবু, নির্ঘাত কিছু করতেছে ওই বজ্জাতটায়।"
আ
বড় আপুর বলার আগেই বুঝেছিলাম কিছু তো একটা করতেছেই। ইফতারের সময় অযু করতে যেয়ে টের পেলাম খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসতেছে রান্না ঘর থেকে। মনে মনে আরো আগ্রহ বেড়ে গেল মিলি কি করতেছে জানার জন্য। কিন্তু মিলি তো মিলিই, তার সারপ্রাইজ সে রিভিল করার আগে কেউ জানতেই পারে না। রুমে ফিরে এসে দেখি মিলি জিমিরে কল দিছে,
" হ্যালো জিমি তাড়াতাড়ি আয়, হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি। অত কথা বলিস না তো তাড়াতাড়ি আয়। ইফতারের আর বেশিক্ষন বাকি নাই। "
এটুকু বলেই ফোন কেটে আমার দিক তাকাতেই মিলিকদ বললাম,
" দেখ রোজা রমজানের দিন, যদি কোন ফাউ কিছু করার প্লান করিস তাহলে আগেই বল। শুধু পানি দিয়ে ইফতার করব ঘরে বসেই।"
" বাবু আপু ট্রাস্ট মি। আজকের পর থেকে আমার উপরে তোমাদের গর্ব হবে। বলবে যে, মিলি দ্যা মাস্টার শেফ।"
মিলি বুক ফুলিয়ে কোমরে হাত দিয়ে কেমন জানি অন্যরকম ভঙ্গিতেই বলল। বড় আপু দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
" মেডাম শেফ যদি উনিশ বিশ কিছু হইছে তাহলে পিঠে ছালা বাঁধার জন্য রেডি হইস"।
ইফতারের টেবিল ঘুরে সবাই বসে আছি। খালা খালু জয় ভাইয়া আমরা সব বোনেরা খুব আগ্রহের সাথে টেবিলে ঢেকে রাখা প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছি।
" কি রে যা রান্ধিছিস তা কি খেতে দিবি না কি ঢেকেই রাখবি "
জয় ভাইয়া কথাটা বলতেই মিলি সবার প্লেটে লম্বা লম্বা মোটা দড়ির মতন তাও আবার পিস পিস করা কি একটা জানি দিল। খালু দুই আঙ্গুলের মাঝে জিনিসটা তুলে নিয়ে বলল,
" আম্মাজান কি এটা?"
" আব্বু এটা জিলাপী। তুমি যে কি জিলাপীও চেনো না।"
মিলি ঝমটা মেরে কথা বলার সাথে সাথেই আমি চমকে উঠলাম। তিন ইঞ্চি লম্বা আধা ইঞ্চি চওড়া প্লেটে পড়ে থাকা জিনিসটাকে দেখলে কোন এংগেল দিয়ে জিলাপী মনে হয় সেটাই যেন বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
" আমার তো মনে হয় না আমার বাপের দাদা তার জন্মে এমন জিলাপি খাওয়া তো দূরের কথা দেখছে কি না"।
ভাইয়া গভীর মনোযোগ দিয়ে জিলাপী দেখতে দেখতে বলল। বড় আপু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, " মিলি জিলাপি কি হলুদ কালারের হয় নাকি?"
" বড় আপু ওইটাই তো সারপ্রাইজ "।
খুব আগ্রহের সাথে বলল মিলি। আজান দেওয়ার সাথে সাথেই খেজুর আর পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গার পরেই আড় চোখে তাকালাম টেবিলের বাকিদের দিকে। খালু খুব চেষ্টা করতেছে জিলাপী নামক জিনিসটা ভাঙ্গার কিন্তু কেন জানি সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ভাইয়া দুই আঙ্গুল দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতেছে মিলির জিলাপিকে। ঠোঁট উল্টিয়ে মিলি তখনই বলল,
" সবাই খালি দেখতেছেই খাচ্ছে না কেন?"
মিলির মন রাখতেই সবাই মিলে প্রায় একত্রেই লম্বা জিলাপিতে কামড় দিলাম।
হঠাৎ মনে হলো আমার সামনের উপর নিচের ছয়টা দাঁত যেন মাড়িকে আলবিদা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিল। সেটা তো মানা যায়।কিন্তু জিব্বা যেন আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল৷ ঝাল আর মিষ্টির ভয়াবহ এক কম্বিনেশন আমার জন্মের পরে কখনও এই ভয়াবহ স্বাদ আমার জ্বিব্বাকে অনুভব করতে দেই নাই। তাড়াতাড়ি জিলাপি নামক ভয়াবহ জিনিস প্লেটে ছুঁড়ে ফেলে এক লিটারের মতন পানি খেয়ে সামনে তাকাতেই দেখি ভাইয়া কাঁদো কাঁদো চেহারায় মিলির দিকে তাকিয়ে আছে। মিলির উৎসুক স্বরে জানতে চাইলো হইছে কেমন,
" আচ্ছা মিলি তুই আগে বলতো এই জীবনে তুই কোনদিন ঝাল মিষ্টি জিলাপি খাইছত?"
কোলা ব্যাঙ্গের স্বরে ভাইয়া মিলিরে প্রশ্ন করল। " ভাইয়া এটা একটা ফিউশন রান্না, জিলাপির সিরায় গোল মরিচ দিয়ে তারপর এটাকে বানাইছি।"
_
" মনডায় কইতেছে তোরে ছাদে নিয়া উপরের থন নিচে পাক্কা মারি। কিন্তু দাঁতের যন্ত্রণা পারতাছি না। এখন ক এই জিলাপির মধ্যে কি লোহার গুঁড়ি মিশাইছিলি?"
ভাইয়া পানি খেতে খেতে প্রশ্ন করল। মিলি অবাক হয়ে বলল, " জিলাপির মধ্যে কি কেউ লোহার গুঁড়া দেয় নাকি? আমি তো জিলাপি আটা দিয়ে বেলছি"।
" বইনরে তুই জিলাপি বেলছত? কি দিয়া বেলন পিঁড়ি দিয়া? আর তুই বানানোর প্রসেস কইস না সহ্য করতে পারতেছি না। এই জীবনের প্রথম শুনলাম কেউ বেলন পিঁড়ি দিয়ে জিলাপি বলে বেলে। আল্লাহ রে আমারে কেউ ঢাকা মেডিকেল দিয়া আসো, মনে হয় না আর টিকমু।"
ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে ফ্লোরেই শুয়ে পড়ল এ কথা বলে। মিলির কথা শুনতে শুনতে আমারও যেন মাথা চক্কর মারতে লাগলো। বড় আপু তখন মিলিরে জিজ্ঞেস করল,
" কি রে মিলি এটা দিয়ে এত হলুদ হলুদ গন্ধ আসতে কেন।"
" বড় আপু রেসিপিতে ছিল হলুদের গুঁড়া মিশাতে হবে জিলাপির আটায়। তাই দিয়েছিলাম আর কি।"
খালু চুপ করে উঠে কোন কথা না বলেই হাঁটা শুরু করল। খালা জিজ্ঞেস করল,
" কই যান আপনি, আপনার গুনধর মেয়ে জিলাপি রান্না করছে, না খেয়ে যান কই "।
" ওয়াই ফাই এর রাউটার খুলতে যাই। বাঁচতে হলে নেট মোবাইল সব বন্ধ করে দিতে হবে। আজকে খাইলাম বেলা জিলাপি, কালকে দেখা যাবে ঝাল মিষ্টির রেসিপি। "