বা পাজরের হাড়

Comments · 8 Views

আমরা মুরব্বিদের কাছে শুনে আসছি আল্লাহ তা'আলা ছেলেদের বা পাজরের হাড় দিয়ে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি হয়।

"আমার বুকের বাঁ পাজরের একটা হাড়ে নিয়ে গিয়ে কি করেছিস সেটার উত্তর আগে দে!" নাক মুখ ফুলিয়ে মোটামুটি মারদাঙ্গা অবস্থায় যেয়ে রাসেল ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো। কি বলব, কি যে বলব না সেটাই মনে মনে হাতড়াচ্ছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে মনে মনে কথা খুঁজতে লাগলাম। আমাকে এমন করে তাকাতে দেখে রাসেল ভাই চোখ ছোট ছোট করে দুপাশে তাকিয়েই আমাকে বলল,

 " এমন করে একবার এদিক আরেক বার ওদিক তাকাচ্ছিস কেন?"

 " কই না তো আমি তাকাই নি!"

 " তা ঠিক বলেছিস, তুই তো তাকাস না তাকায় তোর চোখ, তাই না রে....?"

এই মানুষটার সামনে আমি সহজে কখনও পড়তে চাই না, আর বিশেষ করে একা, সেটা তো আরো আগে চাই না। এই লোকটা আমাকে একা পেলেই ভয়ানক রুপ ধারণ করে ঠিক যেন আলিফ লায়লার মুখবির জ্বিনের মতন। কিন্তু কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়, এই প্রবাদটা আমার বেলায় সব সময়ই কার্যকর হয়। যেমন আজকে, ভদ্রলোকের মতন হেঁটে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ মনে হলো ভাইয়া কি করে দেখে যাই। আর তাতেই হলো কাল, রুমে ঢুকেই দেখি রাজা বাদশাহর মতন ঠ্যাং ছড়িয়ে পা মেলে বসে টিভি দেখছে রাসেল ভাই। উনাকে দেখেই ইউ টার্ণ মেরে যেই না বের হতে যাবো ঘর থেকে , এমন সময়ই ডাক দিল আমাকে,

" নুপুর কি রে তোর জ্বালায় কি শান্তি একটু আসাও যাবে না? কি যে যন্ত্রণা, যেখানেই যাই পিছে পিছে হাজির হয়ে যাস।"

আমি হাঁ করে উনার কথা গিলেই যাচ্ছি। আসলে কথা শোনা ছাড়া তো আর কোন উপায়ই নেই। আর যদিও বা কিছু বলি সেটা উনি অন্য মিনিং বের করবে। তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়। তারই ফলশ্রুতিতে বুকের হাড্ডি গায়েব করার অপবাদ পর্যন্ত শুনতে হচ্ছে। 

 " আপনার বুকের হাড্ডি দিয়ে আমি কি করব শুনি? আপনার হাড় আমার বুকে ফিট হবে না ঠিক মতন। আর আল্লাহ আমারে সব হাড় দিয়েই দিয়েছে, তাই অন্যকারো হাড়ের দরকার নেই আমার।"

আমার উত্তর শুনে দেখার মতন হলো রাসেল ভাইয়ের মুখ, উনাকে দেখে মনে হতে লাগল মুখের মধ্যে যেন কোলাব্যঙ ঢুকেছে। বিশাল খুশি হলাম,যাক এতদিনে একটা কাজের কাজ করতে পেরেছি। রাসেল ভাই ঘড়ঘড় শব্দ তুলে বলল,

 " এক সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়া হয়ে যা আমার সামনে থেকে, না হলে তোর বুকের সব হাড় গুঁড়ো করে ফেলবো "।

এক সেকেন্ডের অর্ধেকের মধ্যেই সটকে পড়লাম ওখান থেকে, কিন্তু ঘটনা হলো মানুষটা এত ক্ষেপে গেল কেন। যাই হোক আমি তো ভাল কথাই বলেছিলাম তারপরও এই লোকটা ক্ষেপে যায়। পরের দিন স্কুলে যেয়ে ঘাড় থেকে ব্যাগ নামাতেই প্রিয়া এসে হাজির। ও হলো আমার জানের জান দোস্ত,আই মিন বেষ্টু যারে বলে আর কি। আমাকে দেখেই প্রিয়া একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল,

" দেখ নুপুর, সজিব এটা দিয়েছে আমাকে!"

ওর মুখে হালকা লাল আভা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পিঠে চাপড় মেরে বললাম,

 " যাক এতদিনে বান্দার মুখে বুলি ফুটলো তা হলে। দেখি দেখি কি লিখেছে"।

ওর হাত থেকে কার্ড নিয়ে খুলতেই চোখে পড়লো দুটো লাইন,

 " বুকের বা পাশের হাড়টা হারিয়ে গিয়েছে,

   আর সেটা এখন অন্য কারো কাছে...."

ধক করে মনের মধ্যে যেন খুব জোরে একটা চাপ পড়লো। প্রিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে বললাম, " বুকের হাড় হারিয়ে গেছে মানে? এই কথাটার মিনিং কি "?

 " আহা নুপুর হাতটা তো আগে ছাড়বি।"

হাতটাকে টানতে টানতে বলল প্রিয়া। আসলেই খুব জোরে চেপে ধরেছিলাম, হাতটা ছেড়ে দিতেই প্রিয়া ঝাড়ি মেরে বলল,

 " বাতাসে বড় হয়েছিস নাকি হ্যাঁ, জানিস না ছেলেদের বুকের বাঁ পাজঁরের হাড় দিয়ে মেয়েদের বানায়।"

" মানে কি! "

 " মানে হলো তোর বরের বুকের বাঁ পাঁজরের হাড় দিয়ে তোরে বানাইছে এবার বুঝছিস? যা তো জ্বালাইস না আমারে। সুন্দর একটা ফিলিংসে ছিলাম দিছে ফিলিংসের ২২ টা বাজাইয়া।"

আমার কানে যেন প্রিয়ার কোন কথাই যাচ্ছে না, বারবার রাসেল ভাইয়ের কথাটা মনে হচ্ছে। উনার বুকের পাঁজরের হাড় কালকে উনি আমার কাছে খুঁজতেছিলেন কেন। এবার লজ্জায় রক্ত জমাট বাঁধা শুরু হয়েছে আমার দুই গালে। 

এর পরে যখনই বুঝতাম রাসেল ভাই এসেছে, কখনও বেরই হতাম না রুম থেকে। পর্দার আড়াল থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতাম, কিন্তু কেন জানি না সামনে যাওয়ার সাহসই হতো না। আগে পেতাম ভয় এর পরে যোগ হয়েছে লজ্জা নামক বস্তু। কিন্তু বুঝতাম মানুষটা আমাকে দেখার জন্য এদিকে সেদিকে তাকাতো। উনি যখন চলে যেত, তখন দৌড়ে বারান্দায় চলে যেতাম শুধু এক পলক তাকে দেখার জন্য। এভাবেই যাচ্ছিল দিন....এক প্রকার নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিলাম মানুষটার কাছ থেকে। কিন্তু রাসেল ভাই তো রাসেল ভাইইই এত সহজে কি আমার লুকোচুরির কাছে হার মানবে। 

রাতে বারান্দায় দাঁড়ানো আমার খুব ভালো লাগার একটা কাজ। আর যদি হয় বৃষ্টি তাহলে তো কথাই নেই। পড়া শেষ করে উঠতে উঠতে প্রায় দেড়টার মতন বেজে গেল, পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বারান্দায় যেতেই দেখি ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ বৃষ্টির হালকা ছাট এসে মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে পরম আনন্দে। দুই হাত বের করে দিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার আস্বাদ নিতে যেয়ে হঠাৎ খেয়াল হলো কে জানি দাঁড়িয়ে আছে ল্যামপোষ্টের নিচে। ভাল করে খেয়াল করতেই যেন আমার সারা শরীর বরফের মতন হয়ে গেল৷ এত রাতে রাসেল ভাই এই বৃষ্টির মধ্যে আমাদের এখানে কি করছে৷ কিছুতেই যেন হিসাব মিলাতে পারছি না, চোখে চোখ পড়তেই হাত দিয়ে ইশারা করলাম চলে যেতে। ঝুম বৃষ্টিতে মানুষটা যেন হুশ ভুলে ভিজেই যাচ্ছে। আমার ইশারা পেয়ে সুন্দর করে মাথা নাড়ালো, মানে সে যাবে না। মন চাচ্ছিল যেয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু আমার আবার এত সাহসটা কই, উনার সামনে গেলে তো বিড়ালও আমাকে দেখে হাসবে... কিছু না বলেই অনেকটা রাগ করে ভেতরে চলে আসি। রুমে এদিক সেদিক হাঁটছি আর ভাবছি মানুষটাতো ভিজতেছে বৃষ্টিতে। পাগলের মতন লাগতে লাগলো। নিজেকে যেন আর ধরেই রাখতে পারছিলাম না, কোন চিন্তা ভাবনা না করে আমার ছাতাটা নিয়েই সোজা চললাম নিচে। 

 

হাঁপাতে হাঁপাতে তার মাথার উপর ছাতি ধরতেই, আড় চোখে তাকিয়ে বলল,

" এত রাতে নেমেছিস কেন, বুদ্ধিশুদ্ধি কি সব ঘাস কাটতে গেছে নাকি? যা যা বাসায় যায়!"

রাসেল ভাইয়ের কথা শুনেই যেন প্রথমে চোখ দুটো বিদ্রোহ করে বসলো, বারবার যেন পানি উথলে উঠতে লাগল। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে বললাম,

" এই ছাতি নিয়ে বাসায় চলে যান রাসেল ভাই, এত বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে!"

" লুকাচ্ছিলি কেন আমার কাছ থেকে আগে সেই উত্তর দে?"

" কই লুকাচ্ছিলাম? "

এটুকু বলতেই হাতের ছাতিটা খপ করে ধরেই উড়িয়ে ফেলে দিল রাসেল ভাই। বৃষ্টির ফোঁটায় সারা শরীর ভিজতে শুরু করলো। মাথার চুল বেয়ে, ঘাড় বেয়ে পানির ধারা বইতে শুরু করলো। তখন শুনতে পেলাম কানের খুব কাছে ফিসফিসিয়ে একজন বলছে,

 " বুকের বাঁ পাজরের হাড় এমনই হয়। একজন ভিজলে আরেকজনও ভেজে। যদি ভাল নাই বা বাসবি তাহলে এমন করে ছুটে আসলি কেন বলতো! "

কোন কিছু না বলে শুধু চুপ করে মাথা নিচু করে রাখলাম,কারণ অনেক সময় শত কথা বলেও অনেক কিছু বোঝানো যায় না। যা নিরবতা বুঝিয়ে দেয় এত স্পষ্ট করে। 

 

Comments
Read more