খেলার শৈশব

Comments · 8 Views

কতশত সৃতি আছে খেলার উৎসবের

কারো শৈশব বা টিনএজার লাইফ কেমন কেটেছে জানি না তবে আমার দুইটা টাইমই ছিল ওয়াও ক্যাটাগরির। কি কি যে করেছি সেই হিসাব বাদ দিয়ে কি কি করি নাই সেই হিসাব করা লাগবে। যেহেতু আমি, মিলি আর বড় আপু একসাথে থাকতাম তাই একজন আকাম করলে খালার হাতের মাইর মোটামুটি সমান ভাগে ডিস্ট্রিবিউশন হইত। সে যাই হোক, আমাদের সবার খুব পছন্দের বিস্কিট ছিল মিষ্টি টোস্ট। ভাইয়া থেকে শুরু করে আমরা তিনবোন ছিলাম এর অন্ধ ভক্ত। দেখা যেত খালু আধা কেজি টোস্ট আনত দুই দিন না যেতেই শেষ। পরে খালা নতুন ট্রীকস আবিষ্কার করলেন। খালু টোস্ট আনলেই ডিব্বায় ভরে আলমারির উপরে উঠিয়ে রাখতেন। তখন বয়স আর হাইট এতই কম ছিল যে চেয়ার দিয়ে আলমারির কাছে দাঁড়ালেও ডিব্বার নাগাল পেতাম না। খালা প্রতিদিন বিকালে খেলতে যাওয়ার আগে সিরিয়ালে চার ভাই বোন কে দাঁড় করিয়ে দুইটা দুইটা টোস্ট বিস্কিট হাতে দিতেন। ঘ্রাণ শুকতাম আর খেতাম। কিন্তু দুইটা টোস্ট এ কি আর মন ভরে। শেষ মেষ উপায় না পেয়ে বিশাল এক ডিসিশন নিলাম তিন বোন। একদিন খালা আমাদের তিন বোনকে ঘুম পড়াতে যেয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আমরা তিনবোন আস্তে করে উঠে পা টিপে টিপে খালার রুমে আসলাম। চেয়ার টেনে আলমারির কাছে নিয়ে মিলিরে আমার ঘাড়ে উঠালাম। বড় আপু চেয়ার ধরে নিচে দাঁড়ালো মিলি আমার ঘাড়ে উঠে ডিব্বার কাছে পৌঁছে গেল। যেই ডিব্বা নামাতে গিয়েছে সেই আমার ব্যালান্স হারালো আর মিলিও নড়ে উঠলো। আর বিস্কিটের ডিব্বা সোজা নিচে। এখানেই শেষ না ডিব্বা পড়বি তো পড় বড় আপুর মাথায়। যেই ডিব্বা বড় আপু মাথায় পড়ল অমনি বড় আপু গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে সোজা ফ্লোরে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। আর বলতে লাগল, " আল্লাহ গো আমার মাথা ফাইট্টা গেছে রে, ওরে আল্লাহ রে আমার মাথা ফাটাইয়া ফালাইছে রে "। একদিকে ডিব্বা পড়ার শব্দ অন্য দিকে আপুর চিল্লানের শব্দে খালা ঘুম থেকে উঠে এসে হাজির। এসে দেখে আমি চেয়ার এর উপরে মিলি আমার কাঁধের উপরে।আপুর মাথায় ডিব্বা পড়ার কারণে এত এত ভয় পাইছিলাম যে খেয়ালই ছিল না চেয়ার থেকে নিচে নামার। আর বড় আপু তো ফ্লোরে শুয়েই আছে টানটান হয়ে। ওই দিন কি মার যে মেরেছিল সেটা আর নাই বা বললাম।

পটুয়াখালী গেলে রাতে সবাই মিলে লুকালুকি খেলতাম। দেখা যেত মাগরিবের আজানের পর থেকে খেলা শুরু করে দিতাম। মাঝে মাঝে ভাইয়াও খেলতো আমাদের সাথে। আমার ভাইয়া মাশাল্লাহ অনেক লম্বা আর বেশ স্বাস্থ্য। খালা মাঝে মাঝে বলে ভাইয়ারে যদি কেউ মারামারিতে নামায়ে দেয় নির্ঘাত ফার্স্ট প্রাইজ নিয়ে আসবে কিন্তু সবার যেমন দূর্বলতা থাকে ওর ও ঠিক তেমনি ভয় হল জ্বীন, ভূতে।বিয়ের আগ পর্যন্ত মাঝে মাঝে রাতে আমাদের রুমের ফ্লোরে ঘুমাতো নিজের রুম বাদ দিয়ে। আচ্ছা যা হোক মাগরিবের আজান দিছে আমাদের পাঁচ বোন আর বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদের এক করেছে সে লুকালুকি খেলবে। সবাই মিলে চোর বানালো ভাইয়াকে। মিনিমান ১২ থেকে ১৩ জন ছিলাম। ভাইয়া যেই চোখ চেপে ধরে এক দুই গোনা ধরল দিলাম সবাই দৌড়। বাড়ির পাশেই ক্ষেতের ধারে বড় এক সফেদা গাছ ছিল। মিলি জিমি তরতর করে সফেদা গাছের মগডালে দুই জন দুই পাশে বসল। আমিও যেয়ে মাঝ বরাবর বসলাম। সন্ধ্যার পরে আলো আধাঁরির খেলায় আবছা আবছা সবই দেখা যাচ্ছিল। বড় আপু আর মানহা আপু কুটোর কুঁড়ের ভেতরে লুকিয়েছে ওখান থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। অন্যান্যরা কেউ অন্য গাছে।কেউ বা কারো ঘরের পেছনে লুকিয়েছিল। মিলি জিমি স্বাভাবিক ভাবেই ফুসফাস শুরু করল তখন দিলাম এক রাম ধমক ঠিক তখন ভাইয়ার পঞ্চাশ গোণা শেষ হল। ভাইয়া যে ঘরেএ দিক থেকে আসতেছে সবাই দেখতেছি। ভাইয়া পা চেপে চেপে সবাইকে খুঁজতেছে। মিলি জিমি সাধারণত একরকম ড্রেস আপ করে সব সময়। ওই দিন দুই জনে সাদা কালারের ফ্রক পরেছি।আর আমি পিংক কালারের একটা ফ্রক পরেছিলাম যার নিচে ছিল গ্লিটারের কাজ করা। অন্ধকারেও ঝকমক করছিল ফ্রকের নিচের পোরশন টা।ভাইয়া এদিক সেদিক খুঁজে ধীরে ধীরে আমরা যে গাছে ছিলাম ওই দিকেই আসতে লাগল। মিলি জিমি আমি তিনজনেই কাঠ হয়ে বসে রইলাম এমনকি নিঃশ্বাস আটকে রাখলাম। ভাইয়া যখন বরাবর আমাদের গাছের নিচে আসল তখন মিলির পা লেগে গাছের ছোট একটা ডাল ভাঙল আর ঠাস করে এক শব্দ হল। ভাইয়া উপরের দিকে তাকিয়েই শুনতে পেলাম স্বশব্দে বলল, " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ " এই বলেই ক্ষেতে দিকে দৌড়। প্রথমে আমরা কিছুই বুঝতে পারি নি পরে জোরে জোরে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা উপর থেকে দেখতে লাগলাম সে দৌড়াচ্ছে আর লুঙ্গী কাঁছা দিচ্ছে। আমরা গাছ থেকে নামতে নামতে ভাইয়া মোটামুটি কোলা পার হয়ে গিয়েছে আর অন্যান্যরা যারা লুকিয়েছিল সবাই এসে হাজির ভাইয়ার চিৎকারের শব্দে। মোটামুটি বাড়ির সবাই হাজির পরে তিন চারজন নেমে গেল টর্চ নিয়ে ভাইয়ারে খুঁজতে।ভাইয়াকে পাওয়া গেল বাড়ি থেকে দেড় কিঃমিঃ দূরে আমাদের এক ফুফু বাড়িতে।এই রাতে সে দৌড়াতে দৌড়াতে ওই বাড়ি যেয়ে উঠেছে।ভাইয়াকে পরে যখন বাড়ি আনা হল খালা জিজ্ঞেস করলেন কি হইছিল ও অমন করে কেন দৌড় দিল। ভাইয়া এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে উওর দিল, " আম্মা আর কইও না সফেদা গাছে এক ভূত বইয়া আছিল,তার বড় বড় সাদা সাদা দুই কান আর দাঁত বেবাকটি ঝিকরাতেছিল "। এর পর থেকে বেশ কিছু দিনের জন্য রাতে খেলা বন্ধ হয়ে গেছিল আমাদের।

মিলি জিমি দুইটারই সিভিটের প্রতি মারাত্মক দূর্বলতা ইভেন এখনও প্রায় দেখি সিভিট খায়। খালার একটা মেডিসিন এর বক্স আছে। ওটার মধ্যে যাবতীয় মেডিসিন থাকে এমনকি সিভিটও।তাই বরাবরের মত দুই জনেই গেছে সেই বক্স থেকে সিভিট গাপিস করতে । বক্স খুঁলেই দেখে নতুন একটা পাতা সিভিট ভেবে সোজা দুই জনে দুইটা করে একসাথে মুখে দিতে সোজা ড্রইং রুমে। মুখে দিয়েই টের পেল এতো অরেঞ্জ ফ্লেভারের সিভিট না সে যাই হোক খালু সামনে বিসা ফেলার উপায় নেই তাই কোত করে গিলে ফেলল দুই জনেই। একটু পরে শুরু হল কাঁপুনি। থরথর করে কাঁপছে দুজনে। বাসার সবাই মোটামুটি একখানে এসে ওদের ঘিরে দাঁড়ালাম। খালার মা সোনা ময়না বলে জিজ্ঞেস করার পরে দুইজনে মেইন কাহিনী বলল, যে সিভিট খেয়েছে। এর পরে খালা কাঁদে আর থাপড়ায় দুইটারে। আমি আর বড় আপু অনেক কষ্টে ছাড়ায়ে এনে মাথায় তেল পানি দিয়ে শোয়ায়ে রাখলাম কাঁথা গায়ে দিয়ে৷ পরে জানা গেল দুই ভদ্র মহিলা যা খেয়েছিলেন তা হল মেয়েদের বিশেষ সময় যে পেটে ব্যাথা হয় তা কমার ট্যাবলেট।

আমার গাড়িতে উঠলে প্রচুর বমি হয়। ঠিক তেমন হল বাড়ি যাওয়ার সময়। মাওয়া পর্যন্ত যেতে যেতে মিনিমাম দশবার বমি করলাম। পরে খালা একটা ট্যাবলেট বের করে দিয়ে বলল, " এটা খা এটা বমি বন্ধের ট্যাবলেট "। পানি দিয়ে টুপ করে গিলে ফেললাম ট্যাবলেটটা। ও আল্লাহ গো এর একটু পর থেকেই দেখে হাত পা ছেড়ে দিচ্ছে আমার। সারারাস্তা মাথা উঠাতে পারি না। ভাইয়া ছিল পাশে সে তো ভয়ে শেষ খালাও দেখি চুপ করে আছে। কি ভাবে যে গিয়েছিলাম বাড়িতে সেটা নিজেও জানি না। ভাইয়া গাড়ি থেকে এক পর্যায়ে কোলে করে নামিয়েছিল আমাকে। বাড়ি যেয়ে যেই ভাইয়া আমাকে বকাবকি করছিল সেই খালা চোরের মত বলল,

_ " ওরে কিছু বলিস না দোষ ওর না "।

 " দোষ ওর না মানে?, "

ভাইয়া প্রশ্ন করল খালাকে। খালা মিনমিন করে বলল,

" বমির ট্যাবলেট ভেবে অন্ধকারে ভুলে হাই প্রেশারের ট্যাবলেট খাওয়ায়ে দিছি ওরে"।

খালার কথা শুনে ভাইয়া তো পুরাই থ। সেই যাত্রায় ডিম দুধ খেয়ে প্রেশার স্বাভাবিক কর‍তে দুইদিন লেগেছিল আমার। 

 এমন আরো হাজারো ঘটনা আছে আমার লাইফে তা যদি লেখতে বসি বিশাল এক উপন্যাস হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে যদি কিছু চেয়ে সাথে সাথে পাওয়ার উপায় থাকে তাহলে আমি দুইটা জিনিস চাইবো।এক আমার আব্বু আম্মু আর অন্যটা হল আমার ছেলেবেলা। আমার পুরোটা ছেলেবেলায় আমার কাছে মনে হয় আমার খেলাবেলা। যার কোন তুলনা আমার কাছে নেই।

 

Comments
Read more