সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছোট বোনের ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটার আগে তাকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। দেখলাম তিন-চারজন মিলে এক ছেলেকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেন পেটাচ্ছে জানতে চাইলে ওই যুবকরা বললেন, ছেলেটা ছাত্রলীগ করে। মোবাইলে সব প্রমাণ আছে।
আমি বললাম কেউ ছাত্রলীগ করলেই কি আপনারা মারতে পারেন? ও যদি কোন অপরাধ করে থাকে আপনারা আইনের আশ্রয় নেন। পুলিশকে খবর দেন। আপনারা কেন মারধর করছেন। তারা আমার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে চেঁচামেচি করে ছেলেটাকে মারতে মারতে দেব পাহাড়ের দিকে নিয়ে গেলো। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় যিনি ছিলেন তিনি ওই ছেলের মোবাইল চেক করতে থাকেন। সেখান থেকে ছবিও তুলে নেন তিনি। আমি তাদের হাত থেকে ছেলেটাকে ছাড়াতে পারিনি।
বোনের পরীক্ষা আধঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাই কলেজ গেইটে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর ছেলেগুলো আসলো। তারা আমার পরিচয় জানতে চাইলো। কলেজে কেন এসেছি জানতে চাইলো। আমি ভদ্রভাবে সব উত্তর দিলাম। তারা বললেন, আপনি ছাত্রলীগকে বাঁচাতে চাইলেন কেন? আমি বললাম, আমি একজন মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছি। ওরা বললো, ‘ও ছাত্রলীগ। মানুষ না। ছাত্রলীগ মানুষ হয় না। আমরা কারফিউ ভেঙ্গে সরকার পরিবর্তন করেছি। আমরা পেটাতেও পারবো। ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাস করবো।’ গত ১৫ বছর তারা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, র্যা গের নামে নির্যাতন করা হতো, ১৫ বছর এসবের প্রতিবাদ করেছি কিনা, লিখেছি কিনা তারও কৈফিয়ত চাইলেন।
আমি জানি ওদের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। একপর্যায়ে ওরা আমাকে ছাত্রলীগের দালাল আখ্যায়িত করে পরনের গেঞ্জির কলার ধরে আমাকে টানা হেঁচড়া শুরু করলেন। আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করেন। জীবন বিপণ্ন হচ্ছে দেখে নিজের পরিচয় দিলাম। আইডি কার্ড দেখতে চাইলেন। তাও দেখালাম। আমার স্ত্রী কলেজটির শিক্ষক তাও জানালাম। তারা আইডি কার্ড হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। মোবাইল কেড়ে নিয়ে তন্ন তন্ন করে চেক করলেন। আমার স্ত্রী শিক্ষক হয়েছে তাতে কি হয়েছে? বলে মারমুখী আচরণও করলেন।
একপর্যায়ে গেঞ্জির কলার ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন ভিডিও করা শুরু করলেন। ভিডিওতে তারা আমাকে বারবার ‘ছাত্রলীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন আমি কলেজে ছাত্রলীগকে প্রবেশ করাতে এসেছি। এছাড়াও নানাভাবে ব্লেম দিয়ে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করলেন। ‘আমি ছেলেটাকে চিনি। তাকে আমার সঙ্গে কলেজে নিয়ে এসেছি।’ এসব কথাও বললেন। অনেকক্ষণ আমাকে কলার ধরে টানা হেঁচড়ার পর একজন এসে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে চলে যেতে বললেন।
আমি গেইটের একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কলেজের এক শিক্ষার্থী আমাকে চিনতে পেরে কাছে এলেন। তিনি আমার স্ত্রীর বিভাগের ছাত্র। তিনি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানাচ্ছেন বলে চলে গেলেন। আমি তাকে নিষেধ করেছি। এরমধ্যে এক সহকর্মীকেও ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রীর বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া এক শিক্ষার্থী এলেন। তিনি নিজেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
অবশ্য কিছুক্ষণ আগে ইনিই বলেছিলেন ‘কারফিউ ভেঙ্গে সরকার হটিয়েছেন, ছাত্রলীগও পেটাতে পারেন।’ আমি শুধু বলেছি যেভাবে আগে শিবির আখ্যা দিয়ে পেটাতো। আজকে আমার সঙ্গেও আপনারা একই আচরণ করেছেন। নিপীড়নের সংস্কৃতি জারি রেখেছেন।
এরপর চুপ থেকেছি। যেসব মজুর, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন তাদের আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রাণ দিয়েছে তারা, তাদের সেই স্বপ্ন ইতিমধ্যে ফিকে হতে চলেছে। পুরনো শকুন ওৎপেতে আছে সবখানে, সবজায়গায়।
এই জুলুমের বিচার চাইতে এসব লিখিনি। যেখানে মব জাস্টিসে মানুষ খুন হচ্ছে, সেখানে আমার মতো তুচ্চ মানুষের হেনস্থাতো সাধারণ বিষয়।
তবে পেশাগত দায়িত্বপালনে গেলে আমার অফিস ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সহায়তা নিতাম। যেহেতু ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছি দেশের অন্য দশজন যেভাবে নানাভাবে জুলুমের শিকার হচ্ছেন, আমিও তাই হয়েছি। দুর্বল বলে কপালের লিখনও মেনে নিয়েছি। সবল হলে এই জুলুমের বিচার চাইতে অন্তত আইনের আশ্রয় হলেও নিতাম।
তবে একটা উপলব্ধির কথা বলি। এই শহরের রাজনীতির মোড়কে থাকা সবগুলো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর অনেকগুলো নিউজ করেছি। অনেক নিউজ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও গেছে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি-অনিয়মের নিউজও করেছি। তাদের কেউ গায়ে হাত তোলাতো দূরের কথা, হুমকি-ধমকিও দেননি। হেনস্থা করেনি। কোন কোন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে হয়তো একদুটো হুমকি-ধমকি পেয়েছি, সেগুলোকে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি।
শুধু এতটুকু মনে রাখবেন, আপনাদের ভাষায় ‘নতুন বাংলাদেশে’ একটা মানুষকে না মারতে বলায় শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছি।
তবে এই জুলুমের ন্যায্য বিচার একদিন হবে, অবশ্যই হতে হবে। ইনশাআল্লাহ। আপনাদের চেহারাগুলো মনে রাখবো।
ঘটনাস্থল: সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে গেইট।
সময়: দুপুর ২টা।
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছোট বোনের ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটার আগে তাকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। দেখলাম তিন-চারজন মিলে এক ছেলেকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেন পেটাচ্ছে জানতে চাইলে ওই যুবকরা বললেন, ছেলেটা ছাত্রলীগ করে। মোবাইলে সব প্রমাণ আছে।
আমি বললাম কেউ ছাত্রলীগ করলেই কি আপনারা মারতে পারেন? ও যদি কোন অপরাধ করে থাকে আপনারা আইনের আশ্রয় নেন। পুলিশকে খবর দেন। আপনারা কেন মারধর করছেন। তারা আমার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে চেঁচামেচি করে ছেলেটাকে মারতে মারতে দেব পাহাড়ের দিকে নিয়ে গেলো। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় যিনি ছিলেন তিনি ওই ছেলের মোবাইল চেক করতে থাকেন। সেখান থেকে ছবিও তুলে নেন তিনি। আমি তাদের হাত থেকে ছেলেটাকে ছাড়াতে পারিনি।
বোনের পরীক্ষা আধঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাই কলেজ গেইটে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর ছেলেগুলো আসলো। তারা আমার পরিচয় জানতে চাইলো। কলেজে কেন এসেছি জানতে চাইলো। আমি ভদ্রভাবে সব উত্তর দিলাম। তারা বললেন, আপনি ছাত্রলীগকে বাঁচাতে চাইলেন কেন? আমি বললাম, আমি একজন মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছি। ওরা বললো, ‘ও ছাত্রলীগ। মানুষ না। ছাত্রলীগ মানুষ হয় না। আমরা কারফিউ ভেঙ্গে সরকার পরিবর্তন করেছি। আমরা পেটাতেও পারবো। ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাস করবো।’ গত ১৫ বছর তারা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, র্যা গের নামে নির্যাতন করা হতো, ১৫ বছর এসবের প্রতিবাদ করেছি কিনা, লিখেছি কিনা তারও কৈফিয়ত চাইলেন।
আমি জানি ওদের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। একপর্যায়ে ওরা আমাকে ছাত্রলীগের দালাল আখ্যায়িত করে পরনের গেঞ্জির কলার ধরে আমাকে টানা হেঁচড়া শুরু করলেন। আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করেন। জীবন বিপণ্ন হচ্ছে দেখে নিজের পরিচয় দিলাম। আইডি কার্ড দেখতে চাইলেন। তাও দেখালাম। আমার স্ত্রী কলেজটির শিক্ষক তাও জানালাম। তারা আইডি কার্ড হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। মোবাইল কেড়ে নিয়ে তন্ন তন্ন করে চেক করলেন। আমার স্ত্রী শিক্ষক হয়েছে তাতে কি হয়েছে? বলে মারমুখী আচরণও করলেন।
একপর্যায়ে গেঞ্জির কলার ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন ভিডিও করা শুরু করলেন। ভিডিওতে তারা আমাকে বারবার ‘ছাত্রলীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন আমি কলেজে ছাত্রলীগকে প্রবেশ করাতে এসেছি। এছাড়াও নানাভাবে ব্লেম দিয়ে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করলেন। ‘আমি ছেলেটাকে চিনি। তাকে আমার সঙ্গে কলেজে নিয়ে এসেছি।’ এসব কথাও বললেন। অনেকক্ষণ আমাকে কলার ধরে টানা হেঁচড়ার পর একজন এসে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে চলে যেতে বললেন।
আমি গেইটের একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কলেজের এক শিক্ষার্থী আমাকে চিনতে পেরে কাছে এলেন। তিনি আমার স্ত্রীর বিভাগের ছাত্র। তিনি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানাচ্ছেন বলে চলে গেলেন। আমি তাকে নিষেধ করেছি। এরমধ্যে এক সহকর্মীকেও ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রীর বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া এক শিক্ষার্থী এলেন। তিনি নিজেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
অবশ্য কিছুক্ষণ আগে ইনিই বলেছিলেন ‘কারফিউ ভেঙ্গে সরকার হটিয়েছেন, ছাত্রলীগও পেটাতে পারেন।’ আমি শুধু বলেছি যেভাবে আগে শিবির আখ্যা দিয়ে পেটাতো। আজকে আমার সঙ্গেও আপনারা একই আচরণ করেছেন। নিপীড়নের সংস্কৃতি জারি রেখেছেন।
এরপর চুপ থেকেছি। যেসব মজুর, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন তাদের আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রাণ দিয়েছে তারা, তাদের সেই স্বপ্ন ইতিমধ্যে ফিকে হতে চলেছে। পুরনো শকুন ওৎপেতে আছে সবখানে, সবজায়গায়।
এই জুলুমের বিচার চাইতে এসব লিখিনি। যেখানে মব জাস্টিসে মানুষ খুন হচ্ছে, সেখানে আমার মতো তুচ্চ মানুষের হেনস্থাতো সাধারণ বিষয়।
তবে পেশাগত দায়িত্বপালনে গেলে আমার অফিস ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সহায়তা নিতাম। যেহেতু ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছি দেশের অন্য দশজন যেভাবে নানাভাবে জুলুমের শিকার হচ্ছেন, আমিও তাই হয়েছি। দুর্বল বলে কপালের লিখনও মেনে নিয়েছি। সবল হলে এই জুলুমের বিচার চাইতে অন্তত আইনের আশ্রয় হলেও নিতাম।
তবে একটা উপলব্ধির কথা বলি। এই শহরের রাজনীতির মোড়কে থাকা সবগুলো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর অনেকগুলো নিউজ করেছি। অনেক নিউজ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও গেছে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি-অনিয়মের নিউজও করেছি। তাদের কেউ গায়ে হাত তোলাতো দূরের কথা, হুমকি-ধমকিও দেননি। হেনস্থা করেনি। কোন কোন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে হয়তো একদুটো হুমকি-ধমকি পেয়েছি, সেগুলোকে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি।
শুধু এতটুকু মনে রাখবেন, আপনাদের ভাষায় ‘নতুন বাংলাদেশে’ একটা মানুষকে না মারতে বলায় শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছি।
তবে এই জুলুমের ন্যায্য বিচার একদিন হবে, অবশ্যই হতে হবে। ইনশাআল্লাহ। আপনাদের চেহারাগুলো মনে রাখবো।
ঘটনাস্থল: সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে গেইট।
সময়: দুপুর ২টা।
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছোট বোনের ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটার আগে তাকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। দেখলাম তিন-চারজন মিলে এক ছেলেকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেন পেটাচ্ছে জানতে চাইলে ওই যুবকরা বললেন, ছেলেটা ছাত্রলীগ করে। মোবাইলে সব প্রমাণ আছে।
আমি বললাম কেউ ছাত্রলীগ করলেই কি আপনারা মারতে পারেন? ও যদি কোন অপরাধ করে থাকে আপনারা আইনের আশ্রয় নেন। পুলিশকে খবর দেন। আপনারা কেন মারধর করছেন। তারা আমার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে চেঁচামেচি করে ছেলেটাকে মারতে মারতে দেব পাহাড়ের দিকে নিয়ে গেলো। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় যিনি ছিলেন তিনি ওই ছেলের মোবাইল চেক করতে থাকেন। সেখান থেকে ছবিও তুলে নেন তিনি। আমি তাদের হাত থেকে ছেলেটাকে ছাড়াতে পারিনি।
বোনের পরীক্ষা আধঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাই কলেজ গেইটে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর ছেলেগুলো আসলো। তারা আমার পরিচয় জানতে চাইলো। কলেজে কেন এসেছি জানতে চাইলো। আমি ভদ্রভাবে সব উত্তর দিলাম। তারা বললেন, আপনি ছাত্রলীগকে বাঁচাতে চাইলেন কেন? আমি বললাম, আমি একজন মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছি। ওরা বললো, ‘ও ছাত্রলীগ। মানুষ না। ছাত্রলীগ মানুষ হয় না। আমরা কারফিউ ভেঙ্গে সরকার পরিবর্তন করেছি। আমরা পেটাতেও পারবো। ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাস করবো।’ গত ১৫ বছর তারা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, র্যা গের নামে নির্যাতন করা হতো, ১৫ বছর এসবের প্রতিবাদ করেছি কিনা, লিখেছি কিনা তারও কৈফিয়ত চাইলেন।
আমি জানি ওদের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। একপর্যায়ে ওরা আমাকে ছাত্রলীগের দালাল আখ্যায়িত করে পরনের গেঞ্জির কলার ধরে আমাকে টানা হেঁচড়া শুরু করলেন। আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করেন। জীবন বিপণ্ন হচ্ছে দেখে নিজের পরিচয় দিলাম। আইডি কার্ড দেখতে চাইলেন। তাও দেখালাম। আমার স্ত্রী কলেজটির শিক্ষক তাও জানালাম। তারা আইডি কার্ড হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। মোবাইল কেড়ে নিয়ে তন্ন তন্ন করে চেক করলেন। আমার স্ত্রী শিক্ষক হয়েছে তাতে কি হয়েছে? বলে মারমুখী আচরণও করলেন।
একপর্যায়ে গেঞ্জির কলার ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন ভিডিও করা শুরু করলেন। ভিডিওতে তারা আমাকে বারবার ‘ছাত্রলীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন আমি কলেজে ছাত্রলীগকে প্রবেশ করাতে এসেছি। এছাড়াও নানাভাবে ব্লেম দিয়ে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করলেন। ‘আমি ছেলেটাকে চিনি। তাকে আমার সঙ্গে কলেজে নিয়ে এসেছি।’ এসব কথাও বললেন। অনেকক্ষণ আমাকে কলার ধরে টানা হেঁচড়ার পর একজন এসে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে চলে যেতে বললেন।
আমি গেইটের একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কলেজের এক শিক্ষার্থী আমাকে চিনতে পেরে কাছে এলেন। তিনি আমার স্ত্রীর বিভাগের ছাত্র। তিনি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানাচ্ছেন বলে চলে গেলেন। আমি তাকে নিষেধ করেছি। এরমধ্যে এক সহকর্মীকেও ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রীর বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া এক শিক্ষার্থী এলেন। তিনি নিজেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
অবশ্য কিছুক্ষণ আগে ইনিই বলেছিলেন ‘কারফিউ ভেঙ্গে সরকার হটিয়েছেন, ছাত্রলীগও পেটাতে পারেন।’ আমি শুধু বলেছি যেভাবে আগে শিবির আখ্যা দিয়ে পেটাতো। আজকে আমার সঙ্গেও আপনারা একই আচরণ করেছেন। নিপীড়নের সংস্কৃতি জারি রেখেছেন।
এরপর চুপ থেকেছি। যেসব মজুর, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন তাদের আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রাণ দিয়েছে তারা, তাদের সেই স্বপ্ন ইতিমধ্যে ফিকে হতে চলেছে। পুরনো শকুন ওৎপেতে আছে সবখানে, সবজায়গায়।
এই জুলুমের বিচার চাইতে এসব লিখিনি। যেখানে মব জাস্টিসে মানুষ খুন হচ্ছে, সেখানে আমার মতো তুচ্চ মানুষের হেনস্থাতো সাধারণ বিষয়।
তবে পেশাগত দায়িত্বপালনে গেলে আমার অফিস ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সহায়তা নিতাম। যেহেতু ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছি দেশের অন্য দশজন যেভাবে নানাভাবে জুলুমের শিকার হচ্ছেন, আমিও তাই হয়েছি। দুর্বল বলে কপালের লিখনও মেনে নিয়েছি। সবল হলে এই জুলুমের বিচার চাইতে অন্তত আইনের আশ্রয় হলেও নিতাম।
তবে একটা উপলব্ধির কথা বলি। এই শহরের রাজনীতির মোড়কে থাকা সবগুলো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর অনেকগুলো নিউজ করেছি। অনেক নিউজ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও গেছে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি-অনিয়মের নিউজও করেছি। তাদের কেউ গায়ে হাত তোলাতো দূরের কথা, হুমকি-ধমকিও দেননি। হেনস্থা করেনি। কোন কোন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে হয়তো একদুটো হুমকি-ধমকি পেয়েছি, সেগুলোকে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি।
শুধু এতটুকু মনে রাখবেন, আপনাদের ভাষায় ‘নতুন বাংলাদেশে’ একটা মানুষকে না মারতে বলায় শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছি।
তবে এই জুলুমের ন্যায্য বিচার একদিন হবে, অবশ্যই হতে হবে। ইনশাআল্লাহ। আপনাদের চেহারাগুলো মনে রাখবো।
ঘটনাস্থল: সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে গেইট।
সময়: দুপুর ২টা।