আমার স্বভাব হচ্ছে আল্লাহর দুনিয়ার যত ছিঁড়া বা ত্যানা জাতীয় কাপড় আছে সেগুলা পরা। আমার খালার ভাষ্যমতে আমি নাকি মানুষের ফেলে দেওয়া কাপড় চেয়ে চেয়ে পরি। বাসার আলমারি ভর্তি নতুন কাপড় কিন্তু কেন জানি না চার পাঁচ বছরের পুরানো থ্রিপিস, গেঞ্জি, ঢোলা পায়জামা গুলারেই আত্নার আত্মীয় মনে হয়৷ খালা কেন জানি না ডেইলি আমার আলমারির কাপড় গুলার উপরে কু দৃষ্টি দেয় আর আগুন দিয়ে জ্বালায়ে দিতে চায়।
সে যাই হোক, একদিন সকাল সকাল খালা ডাকতেছে, না না সেটারে ডাকা বললে ভুল হবে। সে প্রথমে দুই ডাক দেয় খুব কোকিল কন্ঠি স্বরে, পর মূহুর্তেই সে দাড়াশ কাকের মতন কা কা করে চিল্লায়, আর হুমকি দেয়। আল্লাহ মালুম আমার নানী যে তারে কি খাওয়ায়ে বড় করছিলো। এত চিল্লায় মাগার ক্লান্ত হয় না। আমার সাথে চিল্লানো শেষ হলে, ভাইয়ার পার্ট শুরু তারপর আসে মিলির পার্ট। সব পার্ট শেষে যদি দেখে, না এহে চিল্লানোতে কাজ হচ্ছে না, তখন সে তার বিখ্যাত ডাল ঘুটনি জারি করে।
সেদিন খালার দুই ডাকেই মোটামুটি সোলজার স্ট্যাইলে উঠে বসলাম। আমার আবার বিশাল গুন আছে, আমি বসে বসে ঘুমাতে পারি। সেই বিখ্যাত গুন প্রয়োগ করার আগেই কোকিলের গলার স্বর হঠাৎ কাকের ডাকে রুপান্তর হলো। কথা না বাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সটান দিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে হাজির। আমারে দেখেই খালা কেমন জানি চোখ মুখ কুঁচকে তেলাপোকা দেখার মতন করে তাকালো। অবশ্য আমি তাতে পাত্তা না দিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম,
খালা ডাকতেছিলেন আমারে?".
আমার প্রশ্ন শুনে খালা কেন জানি না অলওয়েজ রেগে যায়।ভালো কথা বললেও রাগে, আর খারাপ কথা কখনও বলে দেখি নাই তার কি রিএকশন হয়। তবে বিশাল এক সুপ্ত ইচ্ছা আছে এই পরিক্ষাটা করার। যাই হোক এবারও তার ব্যতিক্রম না হয়ে, খালা বলল,
" আহারে নবাবাজাদা সগীরউদ্দিন খাঁ এর নাতনিরে আমি সকাল সকাল ডেকে উঠাইছি, আমি অতি দু:খিত জাঁহাপনা।"
বেডি মানুষ যে জাঁহাপনা হয় না, আর সগীর উদ্দিন খাঁ নামের কারো কথা যে আমি কোন বইতে পড়ি নাই, সে কথা আর খালাকে বললাম না। কারণ এখন দুই ঠোঁট ফাঁক করা পিঠের জন্য হানিকারক।আমি মাথা নিচু করে পরবর্তী আক্রমনের অপেক্ষায় চুপ করে দাঁড়ায়ে রইলাম। খালা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
" শোন আজকে বাসা পরিষ্কার করবো, তুই আমারে লগে থাকবি।"
খালার অর্ধেক বাক্য শোনার আগেই মাথা ঘুরাচ্ছিলো, আর পুরাটা শোনার পর মনে হচ্ছি বুক চাপড়ায়ে হাউমাউ করে কান্না করি। আজকে প্রিয়া, হিমি ওদের সাথে দুপুরে বাইরে খাওয়ার প্রোগ্রাম। অলরেডি নয়টা বেজে গেছে এখনই আর সেখানে আমার সকিনা বুয়া সেজে ঘর পরিষ্কার করতে হবে৷ এসব ভাবতে ভাবত নিজের অজান্তেই মনে হয় মাথা নাড়িয়ে ফেলেছিলাম৷
কিরে ঘেডির ইঞ্জিনের পাইপ কি লুস হয়ে গেছে নাকি, এমন করে মাথা নাড়াচ্ছিস।"
খালার কথায় হুঁশ আসতেই বললাম,
খালা আজকে আমার একটু কাজ আছে, এই পরিষ্কার কালকে...... "
আমার কথা এতটুকুতে আসতেই খালার কান্না শুরু। সে মনে হয় দুই বালতি পানি ভরে চোখের কোনায় রিজার্ভ করে রাখে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই যে কারো চোখে পানির ফোয়ারা বইতে পারে, সেটা তারে না দেখলে আমার ধারনাই হতো না। সে যাই হোক, তার কথা হইলো ছোট বেলায় আমার বিছানা পরিষ্কার করছে, এখন আমি তার কথা অমান্য করতেছি। আরো বহুত বহুত কথা, তার সে জানে তার এই মোক্ষম অস্ত্রে পোলাপান নামক ব*লদরা ঘায়েল হবেই।
শুরু হইলো মিশন ঘর বাড়ি পরিষ্কার, বাসা পরিষ্কার করতে করতে কত জিনিস যে আবিষ্কার করলাম। ভাইয়ার রুম থেকে পাওয়া গেল সব চেয়ে বেশি জিনিস । ওয়ারড্রবের পিছন থেকে মিলির চুরি হওয়া ছোট ফ্যানটা উদ্ধার করার পর মনে মনে এত রাগ হলো তা বলার মতন না। কয়েকদিন আগে এটা হারানো পরে, মিলির কান্নাকাটি দেখে ভাইয়া নিজেই চোররে যে কি শাপ শাপান্ত করছিলো আর বলার মতন না। এই জিনিস ওর রুমে দেখে খালারে ডাকতে যাবো, তার আগেই খালা বেশ জোরে সোরে বলল,
" বাবু দুইকাপ চা নিয়ে আয়, তোর আন্টি আসছে "।
বুয়াগিরি করতে করতে গরমে ঘেমে নেয়ে এমনিতেই অবস্থা খারাপ, এখন আবার নতুন ফরমায়েশ। ভদ্রলোকের মতন চায়ের পানি চুলায় দিয়ে ভাবতেছি, আমাদের বাসার বুয়া এক কাজ ১২০০ টাকায় করে, মিনিমান সে পাঁচ বাসায় ১০ কাজ করে। মাসে ১২০০০ হাজার ফিক্সড, আর এক্সাট্রা কাজে আলাদা টাকা তো ফিক্সড। ইশশ রে বুয়া হইলেও মাসে ২০ হাজার টাকা ফিক্সড। এসব হাবিজাবি চিন্তার মধ্যেই খালা আবার হাঁক দিলো,
" কি রে চা বানাতে যেয়ে ঘুমালি নাকি, তাড়াতাড়ি আয়। "
খালার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ট্রেতে চায়ের কাপ নিয়ে সোজা চললাম ড্রইংরুমের পানে।
রুমে ঢুকেই দেখে নতুন একজন মহিলা, সে প্রায় খালার বয়সী, মুখ ভর্তি পান টুকটুকে লাল ঠোঁট৷ মনে হয় আমাদের পাশের ফ্লাটে নতুন এসেছে। আমারে দেখেই সে চোখ কুঁচকে তাকায়ে থাকলো কতক্ষন। এরপর খালা মনে হয় আমারে পরিচয় করায়ে দিতে যাচ্ছিলো, এমন সময় সেই মহিলা বলে উঠলো, " আপা আপনে কি বান্দা বুয়াও রাখেন। আর এত সেয়ানা মেয়ে রাখেন কেন? এখনকার যে জামানা"!.
মহিলার কথা শুনে আমি তো ভালোই খালা পর্যন্ত জমে গেলো। খালা তাড়াতাড়ি আবারও বলার চেষ্টা করার আগেই মহিলা বলল,
" কত্তবড় ঢিঙ্গি মাইয়া, ইমুন ঢোলা পায়জামা, আর গেঞ্জি পইয়া ঘোরে। এই মাইয়া দুই পায়ে দুই জুতা পরে ঘুরো কেন "।
মহিলার কথা শুনে হঠাৎ পায়ের দিয়ে তাকায়ে দেখি, এক পায়ে মিলির লাল হলুদ মেশানো স্যান্ডেল আর এক পায়ে আমার লোটোর কালো স্যান্ডেল৷ হঠাৎ করেই কেমন জানি হাত পা আমার ঝিম ঝিম করা শুরু করলো, এর মধ্যেই খেয়াল করলাম গেঞ্জি এক কোনায় ফুটা ছিলো, এখন বেশ বড় আকারে ছিঁড়ে সে জায়গাটা ঝুলে উল্টায়ে গেছে। প্লাজুর বা পাশের পায়ের নিচের অংশের সেলাই ছুটে দুইটা দুইদিকে উড়তেছে। নিজেই নিজেরে কল্পনায় দেখতেছি আর ভাবতেছি নির্ঘাত আমারে নারী পাচারকারী দলের সদস্য মনে হইতেছে। এই মহিলা তো ভালোই যে, বুয়া মনে করছে। সালার কাপড়চোপড়ও আজকে বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করেছে। অন্যদিন তো অল্পের উপর দিয়ে যায়, আজকে নির্ঘাত গুরুচরন আছে কপালে। খালার চোখের দিকে তাকায়ে বুঝলাম, কোন ওয়েতে যদি আগুন বের করার অপশন থাকতো, নির্ঘাত সেই আগুনে আমারে পোড়ায়ে কাবাব বানায়ে লবন দিয়ে সার্ভিং করতো। এখন রুম আটকায়ে বসে আছি। বান্ধরিরা ব্যাক টু ব্যাক কল দিতেছে। তারা নাকি আমারে ছাড়া খাইতে যাবে না।অন্যদিকে খালা একটু পর পর খালা দরজা বাইড়াইতেছে। সে নাকি ভাইয়ারে পেট্রোল আনতে বলছে৷ অন্যদিন তো শুধু কাপড় জ্বালাইতে চায়, আজকে নাকি আলমারি সহ জ্বালায়ে দেবে৷ বান্ধবিগোরে কেমনে বুঝাই, আজকে খাইতে গেলে আমারে নাগা সন্ন্যাসী সাজা লাগবে।