অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি আমি বাবা-মা, ছোট চাচ্চু ও নিলা আপু। ছোট চাচির অপারেশন চলছে ঘন্টা খানেক হবে। বাইরে সকলে চিন্তায় শেষ।
নিলা আপুর জন্ম হওয়ার সময় চাচির একটা জটিল রোগ ধরা পড়ে। যে কারণে পরবর্তী সময়ে বাচ্চা হলেও তার প্রাণ ঝুঁকি হতে পারে। কিন্তু চাচি সে কথা শুনেন নি।
চাচ্চুকে না জানিয়ে তিনি কনসিভ করেন। যখন চাচ্চু এ কথা জানতে পারেন তখন বেশ দেরি হয়ে গেছিল। চাচির সাথে অনেক রাগারাগিও করেছিলেন।
কিন্তু চাচ্চু চাচিকে এতটাই ভালোবাসেন যে কিছু সময় যেতে না যেতেই তার রাগ গলে পানি হয়ে গেছিল। এরপর থেকে চাচির সব দিকেই বিশেষ খেয়াল রাখতেন।
চাচিকে কোনো কাজই করতে দিতেন না। এই ভয়ে যে চাচির যেন কিছু না হয়। আজ যখন চাচির তল পেটে পেইন শুরু হলো তখন থেকেই চাচ্চুর ভয়ের শেষ নেই।
সেই ভয়ের কারণেই চাচ্চু অঝোর ধারায় কান্না করেই চলছে। সবাই ওকানে কতই না বুঝালো চাচির কিছু হবে না কিন্তু তিনি বুঝলে তো।
যাইহোক বাচ্চার কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছু সময় যেতেই একটি নার্স বাবুটিকে চাদরে মুরে আমাদের দিকে নিয়ে এলেন আমি দৌড়ে গেলাম ওকে কোলে নেওয়ার জন্য।
কোলে নিয়েই ওর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম। ও কেমন করে জানি হেঁসে উটলো। যা দেখে আমি সহ সকলেই হেসে উঠলেন। শুধু মাত্র চাচ্চু ছাড়া। চাচ্চুর চোখে মুখে এখনো চিন্তার ছাপ বিদ্যমান।
ডক্টরকে বের হতে দেখে চাচ্চু ডক্টরের দিকে ছুটে গেলেন। ডক্টর চাচ্চুর অবস্থা দেখে চাচ্চুর কিছু বলার আগেই বললেন
- চিন্তার কোনো কারণ নেই রোগীকে বেডে শিফট করা হচ্ছে জ্ঞান ফিরলেই সকলেই দেখা করতে পারবেন। কেবিনে আসুন কিছু ওষুধপত্র লিখে দিচ্ছি নিয়ম মাফিক খাওয়ালেই দুদিনে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
চাচ্চু ডক্টরের পিছু পিছু যেতে নিচ্ছিলেন বাবা এগিয়ে এসে চাচ্চুকে থাকিয়ে বললেন
- তোমার ওখানে গিয়ে কাজ নেই তুমি এখানেই থাক। যা যা প্রয়োজন আমি নিয়ে আসছি
চাচ্চু আর গেলেন না। বাবার কথায় হয়তো খুশিই হলেন। কিন্তু তাকে এখনো শান্ত বলে মনে হচ্ছে না।
আরও ঘন্টা খানেক কেটে গেছে হয়তো এখানেই। এখন সুযোগ মিললো চাচিকে দেখতে পাওয়ার। আরও অনেক সময় আগে চাচিকে কেবিনে শিফট করা হলেও তিনি তখনও ঘুমি ছিলেন তাই তার কাছে যাওয়ার অনুমতি কারও ছিল না।
যাইহোক সবাই একসঙ্গে যেতে নিচ্ছিলো চাচির কাছে বাবা চোখের ইশারায় সকল কে থামিয়ে দিয়ে চাচ্চুকে একাই পাঠিয়ে দিলেন।
তিনিও কোনো কথা ছাড়াই ভিতরে প্রবেশ করলেন। আমরা সকলে বাইরেই অপেক্ষায় করলাম আরও কিছু সময়। পিচ্চি বাবুটা তখনও আমার কাছেই ছিল।
সবাই ওকে নিতে চাচ্ছিল। কেউই বেশি সময় রাখতে পারে নি ওকে। বার বার কান্না করে দিচ্ছিলো তাই ওকে আমার কাছে রেখে ছিলাম।
মজার বিষয় হলো অন্য সকলের কাছে গলেই কান্না করছে শুধু মাত্র আমার কাছে ছাড়া। আমার কাছে এলেই যেন ওর মুখে একটা অন্যরকম হাসি লেগেই থাকে।
ওকে আলতো করে নিয়ে কেবিনের দরজার দিকে গেলাম। দরজা একটু ফাঁক করে ভিতরে তাকিয়ে দেখি চাচ্চু চাচির হাত ধরে কান্না করছেন।
চাচি বার বার ওনাকে থামতে বললেও কাজ হচ্ছে না। চাচি চাচ্চুকে বললেন
- এই আর বাচ্চাদের মত কেদনা তো।
চাচির কথার প্রতিত্তোরে চাচ্চু বললেন
- আমি কান্না করব না কি হাসবো সেটা আমার ব্যাপার তোমার কি। তুমি তো আরাম করে সুয়ে আছো আর এদিকে আমার জান বেরিয়ে আসছিল তোমার টেনশনে।
- এত টেনশনের কি আছে
- কি নেই তাই বল। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত
- হয় নি তো। আর যদি হয়েও যেত তাতে কি
- তাতে কি বলছ। তোমাকে ছাড়া আমি আমিও যে মরে যেতাম
- তোমার ঢংয়ের কথা বন্ধ কর। আজ মরলেই কাল নতুন বউ নিয়ে আসতা আবার বলে কি-না তোমাকে ছাড়া মরে যাব। যত্ত সব ঢং
- এই একদম উল্টো পাল্টা কথা বলে রাগা বা না বলে দিলাম
- যাওতো এখান থেকে। আমার সোনা মা টাকে পাঠিয়ে দাও
- তুমি কি করে জানলে আমাদের মেয়ে বাবু হয়েছে।
- না জানার কি আছে কিছুদিন আগেই তো ডক্টর পরিক্ষা করে বলল আমাদের মেয়ে বাবু হবে ভুলে গেলে। ভুলে যাবেই তো পারতো শুধু ঢংগি মেয়েদের মত কান্না করতে।
- হয়েছে তোমার। তুমি থাক তোমার মেয়েকে নিয়ে। আর থাকবো না এখানে। চলে যাব। আর আসবো না।
বলতে বলতে দরজা খুলে আসতে নিলেন। আমাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে দেখে বললেন
- ওকে তোমার চাচির কাছে দাও।
আমিও সম্মতি প্রকাশ করে ভিতরে দিয়ে এলাম ওকে।
চাচি ওকে বুকে নিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। চাচিকে বললাম ওকে খাইয়ে দিতে। বেশ অনেকটা সময় হলো এখনো খাওয়া হয়নি ওর।
চাচিও আমার কথায় সম্মতি প্রকাশ করলেন। ওকে চাচি খাওবে তাই ওখানে না থেকে বাইরে চলে এলাম। আমারও কিছু খাওয়া প্রয়োজন। এখন রাত এগারোটা। খেয়েছি সেই দুপুরে আর কিচ্ছুটি খাওয়া হয়নি।
বাইরে এসে দেখলাম বাবা সকলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে ওখান থেকে কিছুটা আমিও খেয়ে নিলাম। এখন অনেক টা ভালো লাগছে।
চলুন সেই খুশিতে আপনাদের কাছে আমার পরিচয় দিয়ে নিই। আমি হৃদ আবরার। আমার বাবার নাম রিয়াদ আবরার। আমার মায়ের নাম লিজা বেগম।
আমার ছোট চাচ্চুর নাম নিয়াজ আবরার। তার স্ত্রী মানে আমার চাচির নাম রেহানা পারবিন ও ওনার বড় মেয়ের নাম নিলা আবরার এবং তাদের সদ্য জন্ম লাভ করা বাচ্চাটিকে নিয়েই আমাদের যৌথ পরিবার।
আমার বয়স সবে মাত্র আটের কোটা পেরিয়েছে। নিলা আপু আমার থেকে দু বছরের বড় মানে ওনার বয়স দশ। আমাদের পারিবারিক বিজনেস আছে। আবরার গ্রুপ অ্যাড ইন্ডাস্ট্রিসের মালিক আমার বাবা ও চাচ্চু।