মা আমাকে বিয়ে করাতে চাচ্ছেন। অথচ বিয়েতে আমার কোনো মত নেই। সে কারণে চাইলেও মা বিয়েটা করাতে পারছেন না। ঘটক রোজ নিয়ম করে বিভিন্ন পাত্রীর বায়োডাটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসা, যাওয়া করে।
মা যে পাত্রীই দেখেন, সে পাত্রীই আমার জন্য পছন্দ করেন। এই পর্যন্ত যে কত মেয়েকে মা আমার স্ত্রী হিসাবে কল্পনা করেছেন, সেটার কোনো হিসাব নেই।
আমি রাজিব। আমার দুই ভাই , এক বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বয়স আটাশ বছর নয় মাস এগারো দিন। পড়াশোনা মাদ্রাসে থেকে দাখিল ফেল করেছি পাঁচ বিষয়ে।
মাদ্রাসায় কিন্তু আমি প্রথম শ্রেণি থেকে পড়িনি। ছোটবেলা থেকে আমি ভালোই ছিলাম, সুস্থ, স্বাভাবিক, হাসি, খুশি, প্রাণোচ্ছল একটা ছেলে। পড়াশোনা, কাজে কর্মে, খেলাধুলায়ও বেশ ভালো ছিলাম।
দশ বছর বয়সে একদিন রাতেরবেলা বাজার থেকে ফেরার পথে অন্ধকারে একটা কালো বিড়াল দেখে ভয় পেয়েছিলাম। ভয়াবহ ধরনের ভয়। সেদিন রাতেরবেলা আমার জ্বর এসেছিল। ভীষণ জ্বর। টানা সাতদিন আমি বিছানায় পড়ে ছিলাম বেহুশের মতো হয়ে। মা অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। কোনোভাবে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।
পরে ডাক্তারের আশা ছেড়ে দিয়ে ওজা, বৈদ্য, কবিরাজ সবার শরণাপন্ন হয়েছেন।
একটা সময় আমার জ্বর ভালো হয়ে, আমি সুস্থ হয়ে যাই। কিন্তু সুস্থ হলেও সাতদিনের জ্বরে আমি শরীর থেকে পাঁচ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এরপর থেকে আমি একা চলতে পারতাম না, অনেক ভয় পেতাম। শুধু মনে হতো আবার সেই ঝলমলে চোখের কালো বিড়ালটা এসে আমার সামনে দাঁড়াবে। বিকৃত মুখভঙ্গি করে আমাকে ভয় দেখাবে। রাতেরবেলা ঘুমের মধ্যে আমি চিৎকার দিয়ে উঠতাম।
আমাকে ভয়ের হাত থেকে বাঁচাতে তিন বছর বয়সে বিছানা আলাদা করা ছেলেকে নিয়ে মা আবার একসাথে ঘুমাতে শুরু করলেন।
আমি ছোট শিশুটি হয়ে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমাতাম। তখন আমার আর ভয় করত না। সেসময় আমি পঞ্চম শ্রেনির ছাত্র ছিলাম।
তখন আমার বয়স দশ বছর। সত্যি কথা বলতে কি! শুক্রবারে মাঝেমধ্যে বাবার সাথে জুমার নামজ পড়তে যাওয়া ছাড়া ঠিকমতো নামাজ পড়তাম না।
মক্তবে কুরআন পড়া শিখেছি সাত পারা পর্যন্ত। পরে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরিক্ষা দেয়ার অজুহাতে আর মক্তবে পড়তে যাইনি।
ভয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মা আমাকে নিয়মিত মসজিদে পাঠাতেন। কুরআন তেলাওয়াত করাতেন। রাতেরবেলা শোয়ার সময় গল্প করতে করতে আয়াতুল কুরসিসহ অনেকগুলো সুরাও শিখিয়ে ফেলেছেন।
নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা ও অজুর সহিত থাকার ফলে একটা সময় আর আমি ভয় পেতাম না।
তবে সে যে জ্বরের সাথে আমার ওজন কমেছে আর কোনো ভাবেই আমার ওজন বাড়াতে পারিনি।
এবার মা আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন। হঠাৎ করে বাংলা মাধ্যেম থেকে আরবি মাধ্যেমে গিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম।
এত এত আরবি বই অথচ আমি কিছুই বুঝি না। ক্লাসে পড়া না বুঝার কারণে মাদ্রাসার প্রতি আমার অনাগ্রহ সৃষ্টি হলো। আমি ফাঁকি দেয়া শুরু করলাম পড়াশোনায়। ঠিকমতো মাদ্রাসায় যেতাম না, পড়তে বসতাম না।
বাবা, মা দেখতেন, বুঝতেন তারপরও কখনো আমায় শাসন করতেন না। উল্টো প্রশ্রয় দিতেন।
" তোমার ইচ্ছে না করলে পড়তে হবে না। তুমি যে বেঁচে আছে সেটাই বড় কথা। আমার যা আছে সেটা দিয়ে একটা ছেলে বসে খেতে পারবে।"
অল্প বয়সী তরুণ আমি বাবার কথা শুনে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। বই পুস্তক টেবিলে যত্ন করে সাজিয়ে রেখে আমি আড্ডায় মনোযোগী হলাম।
এদিকে আমার বড় ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। বড় আপা এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পায়।
আমি ইচ্ছে হলে পড়ি, ইচ্ছে হলে পড়ি না ছেলেটা দাখিল পরিক্ষায় পাঁচ বিষয়ে ফেল করি।
তারপরও বাবা মা আমাকে কিছু বলেন না।
আমি কিন্তু তখন সম্পূর্ন সুস্থ। শুধু দৃশ্যমান সমস্যা বলতে আমার ওজন বাড়ছিল না। যেমন আমার বয়সি ছেলেদের ওজন পঞ্চাশ হলে আমার চল্লিশ।
গা, গতরে কিন্তু শক্তি, মাথায় বুদ্ধি কোনো কিছুর অভাব ছিল না।
তারপরও বাবা মা আমাকে সব কাজে অনুৎসাহিত করতেন।
"তুমি পারবে না। তুমি অসুস্থ। "
এই একটা বুলিই ছিল তাদের আমার প্রতি। না পারতে পারতে এমন এক অবস্থা হয়েছে, আমি সাইকেল পর্যন্ত চালাতে শিখিনি।
মা আমি হাঁফিয়ে যাব, আমার গায়ে শক্তি নেই এই অজুহাতে আমাকে কারো সাথে ফুটবল পর্যন্ত খেলতে দিতেন না।
কেউ আমায় খেলায় নিতোও না সেকারণে।
বাবা, মায়ের অতিরিক্ত আদর ও প্রশ্রয়ের কারণে আমি সুস্থ সবল, স্বাভাবিক একটা ছেলে সব দিকে পিছিয়ে গেলাম।
মা আমাকে আঁচলের নিচে রেখে বড় মাছের টুকরো, মুরগির রান, ডিম, দুধ খাওয়াতেন একসময়। হাত খরচের জন্য টাকা না চাইলেও মা পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিতেন।
তখন বাবার আয় ছিল, মায়ের হাতে সংসার ছিল।
একটা সময় আমি বড় হলাম। আমার খরচ বাড়তে লাগল। আমি হাত খরচের জন্য বাবা, মায়ের কাছে হাত পাততাম। যতক্ষণ ছিল বাবা- মা না করেননি। একসময় বাবার বয়স বাড়ল। তিনি কর্মহীন হয়ে অবসরে গেলেন। আমাকে হাত খরচের জন্য ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হতো।
আগে বাবার কাছে একশ টাকা চাইলে তিনি দুইশ টাকা দিতেন। ভাইয়ের কাছে পঞ্চাশ টাকা চাইলে সে বিশ টাকা দেয়।
আস্তে অাস্তে মায়েরও বয়স বড়ল, তিনি সংসারের কাজ আর আগের মতো করতে পারেন না।
বাবা, মা তাদের উচ্চশিক্ষিত, বড় চাকরিজীবী ছেলেকে বিয়ে করালেন। ছেলের যোগ্যতা অনুযায়ী মেয়েও ভালো পররিবারের চাকরিজীবী সুন্দরী পেয়ে গেলেন।
মা সংসার ভাবীর হাতে ছেড়ে দিলেন। ঘরের সব কাজের সিদ্ধান্ত ভাবীর, বাইরেরগুলো ভাইয়ার। জায়গা, জমি, টাকা পয়সা, দলিলপত্র সব ভাইয়ার কাছে থাকে। প্রায় সমবয়সী হওয়ার পরও বাড়ির কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাকে ডাকা হয় না।
মা অসুস্থ। চাকরিজীবী ভাইয়ের ছেলেটাকে দেখে রাখতে পারেন না। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন আমায় বিয়ে করাবেন। আমার বউ সংসারের কাজ করবে। আমি বাজার সদাই করব।
বড় ভাবীর সাথে পাল্লা দিয়ে বাবা চান তার ছোট ছেলের বউও শিক্ষিত ও চাকরিজীবী হবে।
মায়ের কথা বউ চাকরিজীবী হলে বড় ভাবীর মতো সংসারী হবে না। তিনি আমাকে সুন্দরী ও সংসারী মেয়ে বিয়ে করাতে চান।
ভাবী চান শিক্ষায়, সৌন্দর্যে, বংশে কোনো ভাবেই যেন তার উপরে উঠতে না পারে নতুন বউ।
ভাইয়া নাখোশ বাবার প্রতি
" বেকার ছেলেকে আপনারা কী চিন্তা করে বিয়ে কারাচ্ছেন। সবাই মিলে খরচ দিয়ে বিয়ে করিয়ে দিলেন। পরে বেকার ছেলের বউকে খাওয়াবে কে?"
স্কুল শিক্ষিকা বোনকে বাবা আমার জন্য একটা পাত্রী দেখার কথা বললে, সে বিরক্ত হয়। প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় না উঠিয়ে একটু পড়তে বললে তো গ্র্যাজুয়েটটা পাশ করত। তখন একজায়গায় বলতে পারতাম বেকার হলেও ছেলে শিক্ষিত। মেয়ের পরিবার কী দেখে ওর কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে। আমাকে এসবে জড়াবেন না কেউ।
এভাবে এক এক জনের এক এক চাওয়া পাওয়ার ভীড়ে পড়ে এলাকার সব মেয়েই আমার জন্য দেখা হয়ে যায়। অথচ কোথাও কেউ আমায় বিয়ে করাত পারলেন না।
আমিও জোর দিয়ে কিছু বলতে পারি না, কারণ বেকার ছেলের কথার কোনো দাম নেই।
একদিন সবার ইচ্ছে, অনিচ্ছের তোয়াক্কা না করে বাবা মোটামুটি দুর্বল পরিবারের একটা শিক্ষিত মেয়েকে আমায় বিয়ে করিয়ে আনলেন।
অথচ আমি মিনমিন করে কতবার বলছি,
"কোনো শিক্ষিত মেয়ে আমি বিয়ে করতে চাই না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া একটা মেয়ে হলেই হবে। যে আমাকে ভালোবাসবে, আমার মাকে সম্মান করবে। আমার সুবিধা-অসুবিধা বুঝে আমার সাথে সংসার করবে।"
অথচ বাবা আমার কথা কানেও তুলেননি।
ফুলশয্যার ঘরে নতুন বউ আমাকে প্রথমেই বলল,
" তোমার ভাইয়ের বউয়ের কোনো ফুটফরমাইশ আমি খাটতে পারব না। তোমার ভাবীর চেয়েও আমি কোনো অংশে কম না।"
আমি ভয়ে মিনমিন করতে লাগলাম। কারণ সকালে ভাবী বাচ্চাটাকে রেখে অফিসে যাবে। তখন যদি নতুন বউ বাচ্চাটাকে রাখতে না চায়!
কয়েকদিন পর হঠাৎ করে নতুন বউ ঘরের দক্ষিণ পাশের বড় রুমটায় থাকার বায়না করল। কারণ গরমের সময় আমার রুমে থাকা যায় না। এরুমে বারান্দা নেই। অনেকটা খুপরি ঘরের মতো রুমটা।
অথচ দক্ষিণ পাশের রুমটা ভাইয়া নিজের ছেলের জন্য ঠিক করে রেখেছেন। ছেলে বড় হলে তাকে ঐ রুমে দেবেন। এখন এটা ওর প্লে -গ্রাউন্ড।
ঐ রুমটা আমারও পছন্দের ছিল। কোনোদিন সাহস করে বলতে পারিনি। আজ নতুন বউয়ের সাহস দেখে সবাই বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।
ভেবেছে হয়তো আমিই তাকে ঐ রুমে থাকতে বলেছি। আমি লজ্জা পেয়ে নতুন বউকে বারন করায়, সবার মতো সেও আমায় ঝাড়ি দিল।
" তুমি চুপ করো! বাবার ছোট ছেলে হিসাবে তো ঘরটা তোমারই। অথচ একটা পছন্দমতো রুমে তুমি বউ নিয়ে থাকতে পারবে না!"
মা,বাবা যেরকম ধমক দিয়ে আজীবন থামিয়ে দিয়েছে, এবার বউও ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।
মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন। ভাবী আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমি নতুন বউয়ের উপর রাগ করি
" তুমি এভাবে কথা বলতে পার না।"
" কেন পারি না। আছো তো বেকার হয়ে। কথা বলতে পর্যন্ত পার না। পার কেবল বউকে ধমকাতে।"
শুক্রবার সকালে ভাইয়া আমাকে টাকা দিয়ে কেনাকাটা করার জন্য বাজারে পাঠান। অথচ সেদিন আমার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল।
নতুন বউ এসে আমার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বড় ভাইয়ার হাতে দিয়ে বলল,
" ভাইয়া আজ শুক্রবার। অফিস বন্ধ। আজ বাজারটা আপনি করে আনেন। রাজিব আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাবে।"
নতুন বউয়ের কথা শুনে ভাইয়ার ভিমরি খাওয়ার মতো অবস্থা। কারণ ছোটবেলা থেকে তিনি কখনো বাজার করেননি। একসময় পড়াশোনা ছিল, পরে চাকরি হলো। বাজার মূলত আমিই করি। বেকার ছেলে একটা কিছু করে তো খেতে হবে। বাজার-সদাই করলেও ভালো, ওদের উপকার হতো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাইয়া অপমানিতবোধ করে যদি কোনো প্রতিক্রিয়া করেন।
আমার হাত খরচের টাকা দেয়া যদি বন্ধ করে দেন। এখনতো আর আমি একা নয়। ঘরে নতুন বউ আছে।
আমি নতুন বউয়ের উপর ভীষণ ক্ষেপে গেলাম। তার উদ্ধত্যপূর্ণ আচরনে আমি মনঃক্ষুণ্ণ হলাম।
" কী ব্যাপার! তুমি এত বাড়াবাড়ি করছ কেন? তুমি হয়তো জানো না ভাইয়া কখনো বাজার করেননি। আমি একটু বাজার করলে কী হতো? তোমাদের বাড়িতে একটু পরেও যাওয়া যেত।"
" তুমি অবশ্যই বাজার করবে। কিন্তু শুধুমাত্র বাজার তুমি করবে না। ভাইয়া আগে বাজার করেননি, এখন করবেন। বাজার করা কোনো ছোট কাজ নয়।"
" বাজার আমি করব! টাকা পাব কোথায়? "
"কেন তুমি বেকার বলে? তোমার কী হাত পা নেই? সবাইকে চাকরি করতে হবে? ব্যবসা কেউ করে না? তুমি আজ থেকে ব্যবসা করবে। আমি তোমার সঙ্গে থাকব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পুরো জীবন কাটানো সম্ভব নয়। আমি তোমার পাশে আছি, পাশে থাকব। ভাবি চাকরি করছেন, আমিও করব। তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি ডিগ্রী পাশ করেছি। তুমি শুধু আমাকে সাপোর্ট দিও। আমি কোনো অন্যায় মেনে নিব না।"
নতুন বউয়ের কথা শুনে আমার সাহস বেড়ে গেলো। আসলেই তো পড়াশোনা করিনি বলে কি আমি কোনো কাজ করতে পারব না? বাবা-মা আমাকে কাজ করতে দেননি। আমি করব। তখন আমি একা ছিলাম। এখন আমার বউ হয়েছে, সংসার হয়েছে, সন্তান হবে।
বিকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে ফেরার পর মা মাটির ব্যাংকে জমানো তার টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আমার হাতে তুলে দিলেন।
" রাজিব তোমার বাবা শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করিয়ে, তোমাকে ঠিক কাজটাই করেছেন। আমি অল্প কিছু পুঁজি দিলাম। তুমি কোনো একটা কাজ শুরু করে দাও।"
পাঁচবছর পর নতুন বউ চাকরি করে। ও নতুন বউয়ের নাম বলা হয়নি। আমার নতুন বউয়ের নাম হচ্ছে সুরভী। সুরভী একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে। শহরে আমার একটা বড় হার্ডওয়ারের দোকান হয়েছে। চার জন কর্মচারী কাজ করে আমার অধীনে।
এখন আর আমি জানালাবিহীন খুপরি ঘরে থাকি না। বাবার পুরনো ঘরেও না। ছোট্ট একটা ঘর দিয়েছি, চার রুমের।
এক রুমে বাবা-মা থাকেন। আরেক রুমে সুরভী আর আমি। আরেকটা রুমে আমাদের পুচকু। এ পাঁচ বছরে, সুরভীর চাকরি হলো,আমার ব্যবসা হলো, আমাদের একটা পুচকুও হলো। বাবা-মা আমাকে ভালোবাসেন, আমার চাইতে বেশি ভালোবাসেন সুরভীকে।
আমি ভীতু মানুষটির জীবন সালমা বদলে দিয়েছে। সে যদি সাহস নিয়ে প্রথম থেকে এভাবে প্রতিবাদ না করত, তাহলে হয়তো ভাইয়ের সংসারে বাজার করে, ফুটফরমাশ খেটে আমরা ছাড়া জীবন চলে যেত।
কিন্তু না প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। তাদের আলাদা অস্তিত্ব আছে। আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে। শুধু পড়াশোনা না করলেই যে মানুষ ছোট হয়ে যায় সেটা কিন্তু না। পড়াশোনা ছাড়াও অনেক কাজ আছে। ইচ্ছে করলে সেটাও করা যায়। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়।
কখনো বাজার না করা আমার ভাইটা এখন প্রতি শুক্রবার আমার সাথে বাজারে যায়। সংসারের যাবতীয় কেনাকাটা করে। সে তার সংসারের জন্য, আমি আমার সংসারের জন্য। ভাইয়া বড় দুটি ইলিশ মাছ কিনে। একটা আমার ঘরের জন্য, একটা উনার ঘরের জন্য। আমিও সবকিছু সমান সমান কিনি।
তাদের দুই জায়ের মধ্যেও বেশ ভাব। একসাথে শপিং করে, একসাথে বসে আড্ডা দেয়। ভাবী ব্যাংকে চাকরি করে, সুরভী স্কুলে। আমার পুরো পরিবার সুরভী কাছে রকৃতজ্ঞ। তার উৎসাহে আমার নবজন্ম হলো। সে যদি এভাবে আমার জীবনের হাল না ধরতো, তাহলে হয়তো অন্যরকম হতো জীবনের গল্প। ভীষণ কঠিন। সেটা আমি ভাবতে চাই না।