মেঘবালিকা ২পর্ব

Comments · 4 Views

জীবন কতভাবে মোড় ঘুরে

দুদিন পর হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে চাচিকে। বাসা নিয়ে আসার কয়েকদিন পর ওর নাম রাখা হয়েছে। বড় ভাই হিসেবে আমাকেই ওর নাম দিতে হলো।

 

আমি ওর নাম দিলাম আবরার সিদ্দিকা নুর। আমাদের নুর। ধিরে ধিরে কথা বলতে শিখলো। যতই বড় হচ্ছিলো ততই আমার কাছাকাছি আসছিল।

 

যেন আমাকে ছাড়া ওর চলেই না। সব সময় আমার পিছুপিছু ঘুরতো। আমার হাতেই খাওয়া, রাত হলে আমার সঙ্গে ঘুমানো। আমিই ওর একমাত্র খেলার সাথি। যদিও আমাদের সাথে নিলা আপুও খেলতো।

 

সবাই ভেবেছিলো একটু বড় হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই কিছুদিন আগে ওর জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু নুর সেই পিচ্চটাই রয়ে গেছে। নিজের অভ্যাসে পরিবর্তন হয়নি এখনো।

 

সবাই এত করে বুঝাই ওর রুমে থাকার জন্য কিন্তু ও শুনলে তো। রাত হলে ও ওর মত এসে আমার সঙ্গে সুয়ে পরবে। শুধু কি তাই।

 

প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ওকে একটা করে চুমু দিতে হবে আবার আমার গায়ের উপর হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে দেধার্সে ঘুমোবে। না হলে কিছুতেই ঘুমোবে না। যা ছোট বেলা থেকেই করে আসছে।

 

এসএসসি দেওয়ার পর ফ্রী সময় কাটাচ্ছিলাম ভাবলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসতে। বাবাকে জানালে তিনিও আর না করেন নি। তাই আমার সব কিছু গোছাতে শুরু করলাম।

 

কিন্তু বাধ সাধলো নুর। আমার ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে কোথা থেকে যেন কান্না করতে করতে ছুটে এলো। এসেই জড়িয়ে নিলো আমায় খুব শক্ত করে।

 

যা বোঝার বুঝে গেছি। আমার ঘুরতে যাওয়া আর হলো বুঝতে আর বাকি নেই। ওকে কান্না করতে মানা করলাম। তবুও ও কান্না করেই যাচ্ছে। 

 

কান্না মাখা কন্ঠে বলল

 

- তুমি কোথাও যাবে ভাইয়া

 

- মামার বাসায় যাব ঘুরতে।

 

- আমিও যাব।

 

- তুমি গিয়ে কি করবে

 

- কি করব না করব সেটা আমার ব্যাপার তোমার কি। আমি যাব বলছি যাব

 

বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিচ্ছিলো। আমি পিছনে থেকে ডেকে বললাম

 

- আমি কোন পঁচা মেয়েকে নিয়ে যাব না।

 

ও আমার দিকে ফিরে পুরাই গুন্ডি লুক নিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে এসে মারতে শুরু করে আর বলতে থাকে

 

- আমি পঁচা না। তুমি পঁচা তোমার বাবা পঁচা তোমার মা পঁচা তোমরা সবাই পঁচা। আমি একাই ভালো

 

- তুমি আবার ভালো।

 

- তা নয়তো কি।

 

- চুপ একটা কথাও বলবা না

 

- বলব একশো বার বলল তাতে তোমার কি পিচ্চি 

 

চলে যেতে নিয়েও আবার ফিরে এসে বলে

 

- আমাকে একদম পিচ্চি বলবা না বলে দিলাম হুহ্ 

 

রাতে সকালে একসঙ্গে বসে খাবার খাচ্ছি। নুর বারবার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারা করছে। কিছু বুঝতে না পেরে আমি খাবার খেতে মন দিলাম।

 

খাওয়া শেষে চলে যেতে নিলাম নুর বলল

 

- বাবা ভাইয়া তোমাকে কি যেন বলতে চেয়েছিল।

 

নুরের কথার প্রতিত্তোরে চাচ্চু বললেন 

 

- হৃদ কি বলবে বাবা। বল না বলে চলে যাচ্ছো কেন

 

কখন কি বলতে চাইলাম চাচ্চুকে জানি না তো। এদিকে চাচ্চুও বলার জন্য জোর করেই যাচ্ছে। তাই নুরের দিকে তাকিয়ে বললাম

 

- আমি কখন তোমাকে বললাম চাচ্চুকে কিছু বলার আছে আমার। যদি থাকতো তাহলে আমি নিজেই বললাত।

 

- বাবা দিন দিন হৃদ ভাইয়া অনেক মিথ্যে বলা শুরু করে দিয়েছে

 

বাবা নুরকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কোলে তুলে আদর করতে করতে বললেন

 

- হৃদ কি মিথ্যে বলছে মা। আমাকে বল আমি ওকে এক্ষুনি বকে দিচ্ছি

 

আদরের দুলালি আদর পেয়ে কথার সুর তুলে বলল

 

- বড় বাবা বিকেলে ভাইয়া ভাইয়া আমাকে নিয়ে মামার বাসায় যেতে চেয়েছিল। সে কথা বাবাকে বলতে চেয়েছিল। যেন আমাকে নিয়ে যেতে পারে।

 

আর এখন যখন বলার কথা ছিল। ভাইয়া না বলে চলে যাচ্ছে। তাহলে বল ভাইয়া মিথ্যে বলা শিখছে না।

 

আমি ছাড়া সবাই ওর কথা শুনে হেসে দিল। বুঝতে পেলাম সবাই ওর মতলব সবাই বুঝতে পেরেছে। বাবা ওর কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললেন।

 

- হুম। ঠিকই তো বলেছো। হৃদ মিথ্যে বলছে তোমাকে।

 

আমার দিকে তাকিয়ে বাবা রাগের অভিনয় করে বলল

 

- হৃদ তুমি একদম ঠিক কাজ কর নি। এক্ষুণি কান ধরে বল আর মিথ্যে কথা বলবে না কখনো

 

আমিও বাবার সাথে তাল মিলিয়ে কান ধরার অভিনয় করে বললাম

 

- আমার ভুল হয়েছে। আর কখনো মিথ্যে বলব না।

 

বাবা নুর কে বলল

 

- হৃদ কানে ধরেছে। এখন ঠিক আছে

 

- হুম ঠিক আছে।

 

- এখন গিয়ে পড়তে বস। হৃদ তোমাকে পড়াবে

 

- বড় বাবা আজ পড়ব না

 

- কেন পড়বে না মামনি

 

- পড়তে আমার ভালো লাগে না

 

- এ কথা তো বললে হবে না। তুমি যদি না পড় সকলে তোমাকে পঁচা বলবে। তুমি কি চাও সবাই তোমাকে পঁচা বলুক।

 

- না চাইনা।

 

- তাহলে লক্ষি মেয়ের মত পড়তে বস ঠিক আছে 

 

- জী বড় বাবা

 

বাবার কাছে থেকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে রুমের দিকে চলে যেতেই বাবা বললেন

 

- কি হয়েছে বলতো

 

- কি আবার হবে। নুর আমার সাথে যেতে চাইছে। 

 

- তা তো ভালো কথা যেতে চাচ্ছে যাবে। সমস্যা কোথায় 

 

- কিন্তু বাবা নুর ওখানে গিয়ে কি করবে।

 

- যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাও। আর কোনো কথা নয়

 

- ওকে বাবা।

 

- নিলা তুমিও ওদের সাথে যাও। তোমারও ভালো লাগবে 

 

- না বড় বাবা। তুমি তো জানোই সামনে ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা তাই ওরাই যাক। আমি না হয় পরিক্ষার পরে যাব।

 

- তুমি যা ভালো মনে কর।

 

- ধন্যবাদ বড় বাবা

 

নুরের পড়া শেষে ওকে ওর রুমে সুইয়ে দিয়ে আসতে নিব। নুর ডেকে বলে

 

- কিচ দিবে কে

 

হতাশ হয়ে আবারো ফিরে গেলাম তারপর ওর কপালে চুমু দিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। চোখে ঘুমঘুম ভাব চলে এসেছে এমন সময় অনুভব করলাম কে যেন আমার কম্বলের ভিতর ডুকে আমায় জড়িয়ে নিলো। 

 

বুঝতে পারলাম নুর চলে এসেছে। বললাম

 

- নুর

 

- হুম

 

- তোমাকে না তোমার রুমে রেখে এলাম

 

- হুম

 

- তাহলে এখানে কি

 

- একা থাকতে ভয় করছে তাই আজ তোমার সাথে থাকব।

 

- নিলা আপুর কাছে গিয়ে ঘুমাও

 

- না। আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো। এখন চুপ

 

- হয়েছে বাবা আর একটা কথাও বলব না।

 

আমাকে কথা বলতে মানা করে নুর একাই হাজার টা কথা বলে যাচ্ছে। এটাও ওর পুরনো অভ্যেস বলা যায়।

 

আমাকে কথা বলতে না দেখে আমার দুগালে হাত রেখে নরম গলায় বলল

 

- ভাইয়া তুমি কি রাগ করছে

 

ওর সাথে কথা না বলে এখনো চুপ রইলাম। নুর ওর চোখে মুখে কান্নার ভাব এনে বলল

 

- ভাইয়া

 

- হুম

 

- কথা বলনা কেন

 

- এই তো বলছি

 

আমার মতই আমার কপালে চুমু দিয়ে বলে

 

- এখন ঠিক আছে ঘুমাও আমিও ঘুমাই।

 

- হুম।

Comments
Read more