বড় খালার বাসা থেকে ইফতারি করে বাসায় যাওয়ার সময়, শপিংমলের সামনে থেকে
একটা মেয়ে হঠাৎ করে ডেকে উঠলো, -'এই আশিক ভাইয়া, আশিক ভাইয়া শুনছেন?'
আমি থমকে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটাকে কি আমি চিনি? সম্ভবত না।
আমাকে থামতে দেখে মেয়েটা এগিয়ে এসে বললো?
-'আপনি 'আশিক মাহমুদ' তাই না? ফেসবুকে রম্য গল্প লিখেন। আপনার লেখা গল্পগুলো প্রায়-ই পড়ি আমি। আপনি বেশ দারুণ লিখেন।'
আমার ছায় পাশ আর অখাদ্য হিজিবিজি লেখা যে কারও মনে ধরতে পারে তা নিজ কানে শুনে বেশ ভালোই লাগছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম, -'ধন্যবাদ। তা আপনার আইডি নাম কী?'
মেয়েটা হেসে উত্তর দিলো, -' মোনালিসা। '
নামটা শুনে মোটেও অবাক হলাম না। কারণ মেয়েটা দেখতে শুনতে মোনালিসার মত ওতটা সুন্দরী না হলেও কোনো অংশে কমও নয়।
কয়েকদিন ধরে বেঁধে গ্রুমিং ক্লাসে পাঠিয়ে দিলে মোনালিসার চায়তে কোনদিক দিয়ে পিছিয়েও থাকবে না।
ভাবতেই অবাক লাগছে এমন সুন্দরী একটা মেয়ে যে কি না আমার গাঁজাখুরি গল্পের পাঠিকা। গর্বে বুকের ছাতি ফুলে ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা।
আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বললাম, -' তা এইখানে কি, নিশ্চয় শপিং করতে এসেছেন?'
-'জ্বী। তবে আপনাকে একটু আমার সাথে ভিতরে যেতে হবে।'
-'কেন?'
-'শপিং করবো। অবশ্য আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে।'
এমন সুশ্রী মেয়ে যদি কাটাবনে নিয়ে যায়,তারপরও চোখ বন্ধ করে চলে যেতে রাজি হয়ে যাবে যে কেউ। সেখানে আমি শপিংমলে যেতে দোষের কি?
-'কিছু বললেন?
আমি ঠোঁট কামড়ে বললাম, -'না না। আপত্তি কেন থাকবে। '
-'তাহলে চলুন।'
মেয়েটা মনে হয় আমাকে পছন্দ করে। এতদিন আমার লেখার প্রেমে পড়েছিলো। আজ হয়তো আমার! আশিক তোর কপাল খুলতে চলেছে।
আনন্দে বাক-বাকুম করতে করতে ভিতরে ঢুকলাম। মেয়েটা আমাকে সাথে করে একটা দোকানে গিয়ে বললো, -'ভাইয়া কয়েকটা সুন্দর দেখে পাঞ্জাবি দেখান তো।'
মেয়েটার কথা শুনে তো আমি থ মেরে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। শুনেছি এ-যুগের মেয়েরা একটু এডভান্স। তাই বলে এতটা!
প্রথম দেখাতেই পাঞ্জাবি গিফট করবে! ভাবা যায়। এমন একটা প্রেয়সির জন্যই হয়তো জন্মের পর থেকে সিঙ্গেল আছি।
আজ আমার সিঙ্গেল জীবন সার্থক। চিৎকার করে সেই সব বন্ধুদেরকে বলতে ইচ্ছা করছে যারা এতদিন আমাকে নানান রকম টিটকারি দিয়ে কথা শুনিয়েছে।
মোনালিসাকে তাদের সামনে নিয়ে গিয়ে যদি বলতে পারতাম, -'এই দেখ,প্রেমিকা হতে হবে এমন। প্রথম দেখাতেই প্রেমিক কে পাঞ্জাবি গিফট করবে। তোদের প্রেমিকারা কেউ করেছে?করেনি। আর করবেও না।'
এ কথা শোনার পর ওদের রাগে, হিংসাতে জ্বলে যাওয়া মুখটা কেমন হতো,তা যদি দেখতে পেতাম। আহ্ শান্তি লাগতো। তৃষ্ণার্ত আত্মাটা কিছুটা হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলতো।
এসব ভাবতে ভাবতে মোনালিসা আবার বোলে উঠলো, -' এই পাঞ্জাবিটা মনে হয় দারুন লাগবে। একটা বার ট্রায়াল দিয়ে আসুন তো। '
এত খুশি রাখবো কোথায়? ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ঘন্টা দু-এক কান্না করি। তাতে যদি এতদিনের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।
কিন্তু পুরুষ মানুষ কাঁদলে বেমানান দেখায়,তাই চোখের পানি চেপে রেখে ট্রায়াল রুমে চলে গেলাম পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে।
ট্রায়াল রুমে পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে এদিক সেদিন ঘুরে খানিকক্ষণ নিজেকে দেখলাম।
আজকে যেন নিজেকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। লাগবেই বা কেন,এমন সুন্দরী মেয়ের আগমন ঘটেছে কি না। লাগাটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু মেয়েটা যেহেতু আমাকে পাঞ্জাবি দিচ্ছে আমারও তো উচিত প্রথম দেখাতে তাকে কিছু একটা দেওয়া।
কিন্তু কপাল খারাপ,ব্যাচেলরদের মাসের শেষে এসে যা হয়। মানিব্যাগে কয়েকটা ছারপোকা ছাড়া কিছুই নাই।
ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে এসে মুখে লাজুক লাজুক ভাব নিয়ে মোনালিসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
মোনালিসা তার সরু ভুরু জোড়া উঁচুনিচু করে মুখে হাত দিয়ে বললো, -'ওয়াও। আপনাকে তো অন্নেক সুন্দর লাগছে। তারমানে রাকিবকেও খুব সুন্দর লাগবে।'
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করলাম, -'রাকিব আবার কে?'
-'কে আবার আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর হাইট আর শরীরের গঠন অনেকটা আপনারই মতন।
তাই তো আপনাকে মলের বাহিরে থেকে নিয়ে আসলাম। আসলে বুঝতে পারছিলাম না,ওর শরীরে কোন পাঞ্জাবিটা ফিট খাবে।'
মেয়েটার কথা শুনে মূহুর্তে আমার সব স্বপ্নগুলো হাত থেকে পড়া কাঁচের গ্লাসের মত ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেলো।
কালবিলম্ব না করে সোজা ট্রায়ালরুমে গিয়ে পাঞ্জাবিটা খুলে এনে মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, -' পরের বার কোনকিছু কিনলে, যার মাল তাকেই নিয়ে আসবেন কেমন? রাস্তা থেকে এমন হুটহাট সিঙ্গেল ছেলেদেরকে ডেকে এনে মনটা ভেঙ্গে দিবেন না।
উপরওয়ালা ক্ষমা করবে না।'
কথাগুলো বলে পাঞ্জাবিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোজা বেরিয়ে আসলাম।
ইচ্ছা করছে শপিংমলের বাহিরে এসে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করি খানিক্ষন। পরক্ষণেই আবার মনে হলো কেউ যদি ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করে দেয়,তাহলে ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে মান সম্মান আর কিচ্ছু থাকবে না।