জলদবালা বুদ্ধিমতী ও কর্মপটু। পার্বতীর পরিবর্তে সংসারের অনেক কাজ সে-ই করে। পার্বতী এখন অন্যদিকে মন দিয়াছে। আজ পাঁচ বৎসর হইল তাহার বিবাহ হইয়াছে, কিন্তু সন্তান হয় নাই। নিজের ছেলেপুলে নাই বলিয়া পরের ছেলেমেয়েদের উপর তাহার বড় টান। গরীব-দুঃখীর কথা দূরে থাক, যাহাদের কিছু সংস্থান আছে, তাহাদিগের পুত্র-কন্যারও অধিকাংশ ব্যয়ভার সে-ই বহন করে। ইহা ভিন্ন ঠাকুরবাড়ির কাজ করিয়া, সাধু-সন্ন্যাসীর সেবা করিয়া, অন্ধ-খঞ্জের পরিচর্যা করিয়া তাহার দিন কাটিতেছে। স্বামীকে প্রবৃত্তি দিয়া পার্বতী আর একটা অতিথিশালা নির্মাণ করাইয়াছে। সেখানে নিরাশ্রয়, অসহায় লোক ইচ্ছামত থাকিতে পারে-জমিদার-সংসার হইতেই তাহার খাওয়া-পরা মিলে। আর একটা কাজ পার্বতী বড় গোপনে করে, স্বামীকেও তাহা জানিতে দেয় না। দরিদ্র ভদ্র-পরিবারে লুকাইয়া অর্থ সাহায্য করে। এটি তাহার নিজের খরচ। স্বামীর নিকট হইতে প্রতি মাসে যাহা পায়, সমস্তই ইহাতে ব্যয় করে। কিন্তু যেমন করিয়া যাহাই ব্যয় হউক, সদর-কাছারির নায়েব-গোমস্তার তাহা জানিতে বাকী থাকে না। নিজেদের মধ্যে তাহারা বলাবলি করিতে থাকে। দাসীরা লুকাইয়া শুনিয়া আসে যে, সংসারে ব্যয় আজকাল ডবলের বেশী বাড়িয়া গিয়াছে; তহবিল শূন্য-কিছুই জমা হইতেছে না। সংসারে বাজে-খরচ বৃদ্ধি পাইলে দাসদাসীর যেন তাহা মর্মান্তিক হয়। তাহাদের কাছে জলদ এ-সব কথা শুনিতে পায়। একদিন রাত্রে সে স্বামীকে কহিল, তুমি কি এ বাড়ির কেউ নয়?
মহেন্দ্র বলিল, কেন বল দেখি?
স্ত্রী কহিল, দাসদাসীরা দেখতে পায়, আর তুমি পাও না? কর্তার নতুনগিন্নী-অন্ত প্রাণ, তিনি ত আর কিছু বলবেন না; কিন্তু তোমার বলা উচিত।
মহেন্দ্র কথাটা বুঝিল না, কিন্তু উৎসুক হইয়া উঠিল; জিজ্ঞাসা করিল, কিসের কথা?
জলদবালা গম্ভীর হইয়া স্বামীকে মন্ত্রণা দিতে লাগিল-নতুন মার ছেলেমেয়ে নাই, তাঁর কেন সংসারে টান হবে, সব উড়িয়ে দিলেন, দেখতেও পাও না?
মহেন্দ্র ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া কহিল, কি করে!
জলদ কহিল, তোমার চোখ থাকলে দেখতে পেতে। আজকাল সংসারের দ্বিগুণ খরচ-সদা ব্রত, দান-খয়রাত, অতিথি-ফকির। আচ্ছা, তিনি যেন পরকালের কাজ করচেন; কিন্তু তোমারও ত ছেলেমেয়ে হবে? তখন তারা খাবে কি? নিজের জিনিস বিলিয়ে দিয়ে কি শেষে ভিক্ষে করবে নাকি?
মহেন্দ্র শয্যার উপর উঠিয়া বসিয়া কহিল, তুমি কার কথা বলচ, মার কথা?
জলদ কহিল, আমার পোড়া কপাল যে এ-সব আবার মুখ ফুটে বলতে হয়।
মহেন্দ্র কহিল, তাই তুমি মার নামে নালিশ করতে এসেচ?
জলদ রাগ করিয়া বলিল, আমার নালিশ-মকদ্দমার দরকার নেই। শুধু ভেতরের খবরটা জানিয়ে দিলুম, নইলে শেষে আমাকেই দোষ দিতে।
মহেন্দ্র অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া কহিল, তোমার বাপের বাড়িতে রোজ হাঁড়ি চড়ে না, তুমি জমিদারের বাড়ির খরচের ব্যাপার কি বোঝ?
এবার জলদও রাগিয়া উঠিল; বলিল, তোমার মার বাপের বাড়িতেই বা ক’টা অতিথিশালা আছে শুনি?
মহেন্দ্র আর তর্কাতর্কি না করিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। সকালে উঠিয়া পার্বতীর কাছে আসিয়া কহিল, কি বিয়ে দিলে মা, একে নিয়ে সংসার করাই যে যায় না। আমি কলকাতায় চললুম।
পার্বতী অবাক হইয়া কহিল, কেন বাবা?
তোমাদের নামে কটুকথা বলে-ওকে ত্যাগ করলুম।
পার্বতী কিছুদিন হইতেই বড়বৌয়ের আচরণ লক্ষ্য করিয়া আসিতেছিল; কিন্তু সে ভাব চাপা দিয়া হাসিয়া বলিল, ছিঃ বাবা, সে যে আমার বড় ভাল মেয়ে! তার পর সে জলদকে নিভৃতে ডাকিয়া কহিল, বৌমা, ঝগড়া হয়েচে বুঝি?
সকাল হইতেই জলদ স্বামীর কলিকাতা-যাত্রার আয়োজন দেখিয়া মনে মনে ভয় পাইয়াছিল, শাশুড়ীর কথায় কাঁদিয়া ফেলিয়া বলিল, আমারই দোষ মা। কিন্তু ঐ দাসীরাই খরচপত্রের কথা নিয়ে বলাবলি করে।
পার্বতী তখন সমস্ত শুনিল। নিজে লজ্জিত হইয়া বধূর চোখ মুছাইয়া দিয়া কহিল, বৌমা, তুমি ঠিক বলেচ। কিন্তু আমি মা তেমন সংসারী নই, তাই খরচের দিকটা আমার স্মরণ ছিল না।
তাহার পর মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, বাবা, বিনাদোষে রাগ করো না-তুমি স্বামী, তোমার মঙ্গলচিন্তার কাছে স্ত্রীর আর সব তুচ্ছ হওয়া উচিত। বৌমা তোমার লক্ষ্মী।
কিন্তু সেইদিন হইতে পার্বতী হাত গুটাইয়া আনিল। অতিথিশালার ঠাকুরবাড়ির আর তেমন সেবা হইল না; অনাথ, অন্ধ, ফকির অনেকে ফিরিয়া যাইতে লাগিল। কর্তা শুনিয়া পার্বতীকে ডাকিয়া কহিলেন, কনেবৌ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কি ফুরাল নাকি?
পার্বতী সহাস্যে উত্তর দিল, শুধু দিলেই চলবে কেন? দিনকতক জমা করাও ত চাই-দেখচ না, খরচ কত বেড়ে গেছে!
তা যাক। আমার আর ক’দিন। দিনকতক সৎকর্ম করে পরকালের দিকটা দেখা উচিত।
পার্বতী হাসিয়া কহিল, এ যে বড় স্বার্থপরের মত কথা গো! নিজেরটাই দেখবে, আর ছেলেমেয়েরা কি ভেসে যাবে? দিনকতক আবার চুপ করে থাকো, তার পর আবার সব হবে। কাজ মানুষের ত আর ফুরিয়ে যায় না!
কাজেই চৌধুরী মহাশয় নিরস্ত হইলেন।
পার্বতীর এখন কাজ কমিয়াছে, তাই ভাবনাটা কিছু বাড়িয়াছে। কিন্তু সমস্ত ভাবনারই একটা ধরন আছে। যাহার আশা আছে, সে একরকম করিয়া ভাবে; আর যাহার আশা নাই, সে অন্যরকম ভাবে। পূর্বোক্ত ভাবনার মধ্যে সজীবতা আছে, সুখ আছে, তৃপ্তি আছে, দুঃখ আছে, উৎকণ্ঠা আছে; তাই মানুষকে শ্রান্ত করিয়া আনে-বেশীক্ষণ ভাবিতে পারে না। কিন্তু আশাহীনের সুখ নাই, দুঃখ নাই, উৎকণ্ঠা নাই, অথচ তৃপ্তি আছে। চোখ দিয়া জলও পড়ে, গভীরতাও আছে-কিন্তু নিত্য নূতন করিয়া মর্মভেদ করে না। হালকা মেঘের মত যথা-তথা ভাসিয়া চলে। যেখানে বাতাস লাগে না, সেখানে দাঁড়ায়; আর যেখানে লাগে, সেখান হইতে সরিয়া যায়; তন্ময় মন উদ্বেগহীন চিন্তায় একটা সার্থকতা লাভ করে। পার্বতীর আজকাল ঠিক তাই হইয়াছে। পূজা-আহ্নিক করিতে বসিয়া অস্থির, উদ্দেশ্যহীন হতাশ মনটা চট্ করিয়া একবার তালসোনাপুরের বাঁশঝাড়, আমবাগান, পাঠশালা-ঘর, বাঁধের পাড় প্রভৃতি ঘুরিয়া আসে। আবার হয়ত এমন কোন স্থানে লুকাইয়া পড়ে যে, পার্বতী নিজেকেই খুঁজিয়া বাহির করিতে পারে না। আগে হয়ত ঠোঁটের কোণে হাসি আসিয়াছিল, এখন হয়ত একফোঁটা চোখের জল টপ্ করিয়া কোষার জলের সঙ্গে মিশিয়া যায়। তবু দিন কাটে। কাজ করিয়া, মিষ্ট কথাবার্তা কহিয়া, পরোপকার, সেবাশুশ্রূষা করিয়াও কাটে, আবার সব ভুলিয়া ধ্যানমগ্না যোগিনীর মতও কাটে। কেহ কহে, লক্ষ্মীস্বরূপা অন্নপূর্ণা! কেহ কহে, অন্যমনস্কা উদাসিনী! কিন্তু কাল সকাল হইতে তাহার অন্য এক রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়াছে। যেন কিছু তীব্র, কিছু কঠোর। সেই পরিপূর্ণ থমথমে জোয়ার-গঙ্গায় যেন হঠাৎ কোথা হইতে ভাঁটার টান ধরিয়াছে। বাড়ির কেহ কারণ জানে না, শুধু আমরা জানি। মনোরমা কাল গ্রাম হইতে একখানা পত্র লিখিয়াছে। যাহা লিখিয়াছে, তাহা এইরূপ-
পার্বতী, অনেকদিন হইতে দু’জনের কেহ কাহাকেও পত্র লিখি নাই, সেজন্য দোষটা উভয়তঃ হইয়াছে। আমার ইচ্ছা একটা মিটমাট হইয়া যায়। দু’জনেই দোষ স্বীকার করিয়া অভিমানটা কম করি। কিন্তু আমি বড়, তাই আমি মানভিক্ষা চাহিয়া লইলাম। ভরসা করি, শীঘ্র উত্তর দিবে। আজ প্রায় একমাস হইল এখানে আসিয়াছি। আমরা গৃহস্থঘরের মেয়েরা শারীরিক ভালমন্দ তেমন বুঝি না। মরিলে বলি, গঙ্গায় গিয়াছে; আর বাঁচিয়া থাকিলে বলি, ভাল আছে। আমিও তাই ভাল আছি। কিন্তু এ তো গেল নিজের কথা, বাজে কথা। কাজের কথাও এমন যে কিছু আছে, তাও নয়। তবে একটা সংবাদ দিতে বড় ইচ্ছা হইয়াছে। কাল হইতে ভাবিতেছি দিব কিনা। দিলে তোমার কেশ হইবে, না দিলেও আমি বাঁচি না-যেন মারীচের দশা হইয়াছে। দেবদাসের কথা শুনিয়া তোমার ত দুঃখ হইবেই, কিন্তু আমিও যে তোমার কথা মনে করিয়া না কাঁদিয়া থাকিতে পারি না। ভগবান রক্ষা করিয়াছেন, না হইলে তুমি যে অভিমানিনী, তার হাতে পড়িলে এতদিন হয় জলে ডুবিতে, না হয় বিষ খাইতে। আর তার কথা আজ শুনিলেও শুনিবে, দু’দিন পরে হইলেও শুনিবে, কেননা, যে কথা সংসারসুদ্ধ লোকে জানে, তার আর চাপাচাপি কি?
আজ প্রায় ছয়-সাতদিন হইল, সে এখানে আসিয়াছে। তুমি ত জান, জমিদারগৃহিণী কাশীবাসী হইয়াছেন, আর দেবদাস কলিকাতাবাসী হইয়াছে। বাড়ি আসিয়াছে শুধু দাদার সহিত কলহ করিতে, আর টাকা লইতে। শুনিলাম, এমন সে মধ্যে মধ্যে আসে; যতদিন টাকার যোগাড় না হয়, ততদিন থাকে,-টাকা পাইলেই চলিয়া যায়।
তাহার পিতা মরিয়াছেন আজ আড়াই বছর হইল। শুনিয়া আশ্চর্য হইবে, এইটুকু সময়ের মধ্যে সে নাকি তাহার অর্ধেক বিষয় উড়াইয়া দিয়াছে। দ্বিজদাস নাকি বড় হিসাবী লোক, তাই কোনমতে পৈতৃক সম্পত্তি নিজে রাখিয়াছে, না হইলে এতদিনে পাঁচজন লুটিয়া লইত। মদ ও বেশ্যায় সর্বস্বান্ত হইতেছে, কে তাহাকে রক্ষা করিবে? এক পারে যম! আর তারও বোধ হয় বেশী দেরি নাই। সর্বরক্ষা-যে বিবাহ করেনি।
আহা, দুঃখও হয়। সে সোনার বর্ণ নাই, সে রূপ নাই, সে শ্রী নাই-এ যেন আর কেহ! রুক্ষ চুলগুলা বাতাসে উড়িতেছে, চোখ কোটরে ঢুকিয়াছে, নাক যেন খাঁড়ার মত উদ্যত হইয়া উঠিয়াছে। কি কুৎসিত যে হইয়াছে, তোমাকে আর তা কি বলিব! দেখিলে ঘৃণা হয়, ভয় করে। সমস্ত দিন নদীর ধারে, বাঁধের পাড়ে বন্দুক-হাতে পাখি মারিয়া বেড়ায়। আর রৌদ্রে মাথা ঘুরিয়া উঠিলে বাঁধের পাড়ে সেই কুলগাছটার তলায় মুখ নীচু করিয়া বসিয়া থাকে। সন্ধ্যার পর বাড়ি গিয়া মদ খায়-রাত্রে ঘুমায় কি ঘুরিয়া বেড়ায়, ভগবান জানেন।
সেদিন সন্ধ্যার সময় নদীতে জল আনিতে গিয়াছিলাম; দেখি দেবদাস বন্দুক-হাতে ধীরে ধীরে শুষ্কমুখে চলিয়া যাইতেছে। আমাকে চিনিতে পারিয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইল,-আমি ত ভয়ে মরি! ঘাটে জনপ্রাণী নাই-আমি সেদিন আর আমাতে ছিলাম না। ঠাকুর রক্ষা করিয়াছেন যে, কোনরূপ মাতলামী কি বদমায়েসী করে নাই। নিরীহ ভদ্রলোকটির মত শান্তভাবে বলিল, ‘মনো, ভাল আছ ত দিদি?’
আমি আর করি কি, ভয়ে ভয়ে ঘাড় নাড়িয়া বলিলাম, ‘হুঁ।’
তখন সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, সুখে থাক বোন, তোদের দেখলে বড় আহাদ হয়’। তারপর আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। আমি উঠি ত পড়ি-প্রাণপণে ছুটিয়া পলাইলাম। মা গো! ভাগ্যে হাত-টাত কিছু ধরিয়া ফেলে নাই! যাক তার কথা-সে-সব দুর্বৃত্তের কথা লিখিতে গেলে চিঠিতে কুলায় না।
বড় কষ্ট দিলাম কি বোন? আজিও তাহাকে যদি না ভুলিয়া থাক ত কষ্ট হইবেই। কিন্তু উপায় কি? আর, সেজন্য রাঙ্গা পায়ে যদি অপরাধ হইয়া থাকে ত নিজ গুণে তোমার স্নেহকাক্সিক্ষণী মনোদিদিকে ক্ষমা করিও।
কাল পত্র আসিয়াছিল। আজ সে মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, দুটো পালকি আর বত্রিশ জন কাহার চাই, আমি এখনি তালসোনাপুরে যাব।
মহেন্দ্র আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, পালকি বেহারা আনিয়ে দিচ্চি, কিন্তু দুটো কেন মা?
পার্বতী কহিল, তুমি সঙ্গে যাবে বাবা। পথে যদি মরি, মুখে আগুন দেবার জন্য বড়ছেলেকে প্রয়োজন। মহেন্দ্র আর কিছু কহিল না। পালকি আসিলে দুইজনে প্রস্থান করিল।
চৌধুরী মহাশয় শুনিতে পাইয়া ব্যস্ত হইয়া দাসদাসীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কেহই কিন্তু কারণ বলিতে পারিল না। তখন তিনি বুদ্ধি খরচ করিয়া আরও পাঁচ-ছ’জন দরোয়ান, দাসদাসী পাঠাইয়া দিলেন।
একজন সিপাহী জিজ্ঞাসা করিল, পথে দেখা হলে পালকি ফিরিয়া আনতে হবে কি?
তিনি ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, না,তাতে কাজ নেই। তোমরা সঙ্গে যেয়ো-যেন কোনো বিপদ-আপদ ঘটে না।
সেইদিন সন্ধ্যার পর পালকি-দুইটা তালসোনাপুরে পৌঁছিল, কিন্তু দেবদাস গ্রামে নাই। সেদিন দ্বিপ্রহরে কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছে।
পার্বতী কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, অদৃষ্ট! মনোরমার সহিত সাক্ষাৎ করিল।
মনো বলিল, পারু কি দেবদাসকে দেখতে এসেছিলে?
পার্বতী বলিল, না, সঙ্গে করে নিয়ে যাবার জন্যে এসেছিলাম। এখানে তার আপনার লোক ত কেউ নেই।
মনোরমা অবাক হইল। কহিল, বলিস কি? লজ্জা করত না?
লজ্জা আবার কাকে? নিজের জিনিস নিজে নিয়ে যাব-তাতে লজ্জা কি?
ছিঃ ছিঃ-ও কি কথা! একটা সম্পর্ক পর্যন্ত নেই-অমন কথা মুখে এনো না।
পার্বতী ম্লানহাসি হাসিয়া কহিল, মনোদিদি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত যে কথা বুকের মাঝে বাসা করে আছে, এক-আধবার তা মুখ দিয়ে বার হয়ে পড়ে। তুমি বোন তাই এ কথা শুনলে।
পরদিন প্রাতঃকালে পার্বতী পিতামাতার চরণে প্রণাম করিয়া পুনরায় পালকিতে উঠিল।