ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর
এক পাটি জুতো। ভাঙা হাতঘড়ি। কফি মেশিন, হাতে-আঁকা ছবি, ঘরের চাবি। ভালবাসার সম্পর্কের সঙ্গে অজান্তে জড়িয়ে যায় যে সব তুচ্ছ জিনিস, তারাই স্থান পেয়েছে এখানে। সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় যে কুড়ুলটা দিয়ে এই ধ্বংসলীলা হয়েছিল সেটিকে নিয়ে কী করা উচিত? জাদুঘরে রাখা উচিতসব কিছু ঠিকঠাক যাচ্ছিল না। মেয়েটা ভেবেছিল হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু হল না। এক সকালে ছেলেটা হঠাৎ জানাল, সে আর এক জনকে ভালবাসে। শুধু তা-ই নয়, সে দিনই ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে গেল অন্য মেয়েটির সঙ্গে থাকবে বলে। বাড়িটা ছেলেটারই, আসবাবও তারই কেনা। ছেলেটা বলে গেল, ইচ্ছে করলে মেয়েটা সেখানে থাকতে পারে। মেয়েটার হাতের কাছে একটা কুড়ুল ছিল, সেটা হাতে নিয়ে বহু আসবাব ফালাফালা করে দিল সে। কয়েকদিন পর নাকি ছেলেটা এসেছিল আর সমস্ত ভাঙা কাঠ সযত্নে গুছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।যে কুড়ুলটা দিয়ে এই ধ্বংসলীলা হয়েছিল সেটিকে নিয়ে কী করা উচিত? জাদুঘরে রাখা উচিত? বাস্তবে তা-ই হয়েছে। যে সে জাদুঘর নয়, বিশেষ এক সংগ্রহশালা। নাম ‘মিউজ়িয়ম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস’— ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর। সেখানেই শোভা পাচ্ছে এই কুড়ুল, সঙ্গে উপরের গল্পটুকু। অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রতীরে, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত দেশ ক্রোয়েশিয়া, তারই রাজধানী জাগ্রেব এই জাদুঘরের ঠিকানাচলচ্চিত্র প্রযোজক ওলিঙ্কা ভিসটিকা ও ভাস্কর দ্রাজেন গ্রুবিসিক-এর চার বছরের সম্পর্ক ভেঙে যায় ২০০৩ সালে। বিচ্ছেদের বেদনার মধ্যেই তাঁরা মজা করে বলেছিলেন, তাঁদের সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা জিনিসপত্র নিয়ে একটা সংগ্রহ করলে বেশ হয়। গোড়ায় সেটা ছিল নেহাতই কথার কথা, কিন্তু বছর তিনেক পরে সত্যিই নড়েচড়ে বসেন দু’জনে। বন্ধুদের কাছে চাইতে থাকেন এমন কোনও জিনিস যার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বেশ কিছু জিনিস জুটেও গেল, আর তা প্রদর্শিত হল জাগ্রেবের এক আর্ট গ্যালারিতে।?