মেঘ বালিকা ৩য় খন্ড

Comments · 6 Views

মেয়ে মানুষ মানেই মানিয়ে চল।

পরের দিন দশটার দিকে মামার বাসায় রওনা হলাম আমি নুর ও আমাদের গাড়ির ড্রাইভার। নুর একাই বকবক করছে ও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

 

পিচ্চি নুরের কাছে বলতে গেলে সব কিছুই নতুন। সব কিছুর দিকে বিস্ময় নিয়ে পর্যবেক্ষক করছে। বার বার বলছে এটা কি। এটা কত সুন্দর

 

রাস্তার মাঝে গোল চত্তরে থাকা পাখি কিংবা ফুলকে দেখে বলছে। এগুলো এলো কিভাবে, এখানে রাখলো কে আরও কত কি।

 

শেষমেশ বারোটার দিকে পৌছলাম মামার বাসায়। কলিং বেল দিতেই রিয়া এসে দরজা খুলে দিল। দরজার বাইরে আমাকে দেখে জড়িয়ে নিয়ে বলল

 

- হৃদ ভাইয়া তুমি এখানে

 

- হ্যাঁ আমি। শুধু আমি না নুরও এসেছে

পরের কথাটি নুরের দিকে তাকিয়ে বললাম। নুর দুচোখ ছোট ছোট করে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

 

রিয়াকে আবার বললাম

 

- এখন ছাড়ো আমাকে ভিতরে যেতে দিবে না না-কি। 

 

- ওহ্ সরি আসো ভিতরে আসো।

 

- এখন বল কেমন আছো

 

- আগে ভালো ছিলাম না। কিন্তু এখন অন্নেক ভালো আছি

 

- কেন কেন

 

- এটা বলা যাবে না। সিক্রেট 

 

- ওকে

 

রান্না ঘরে কাটাকাটির আওয়াজ শুনে বললাম

 

- মামনী কোথায় দেখছি না যে

 

- আম্মু তো দুপুরের জন্য রান্না করছে

 

- ওকে তোমরা কথা বল আমি মামনীর কাছে থেকে আসছি

 

- ওকে

 

রান্না ঘরে ডুকে দেখি মামনী চুলোয় রান্না বসিয়ে সবজি কাটছেন। পিছনে থেকে দু'হাতে চোখ আগলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

 

আমার হঠাৎ করা কাজে মামনী হয়তো ভয় পেয়েছে কি বুঝলাম না। মামনী আমার হাত সরানোর চেষ্টা করে বলল

 

- হৃদ।

 

মামনীর চোখ থেকে হাত সরিয়ে বললাম

 

- কি করে বুঝতে পেলে। এটা আমি

 

মামনী হেসে দিয়ে বললেন

 

- কেন বুঝবো না। আমি তোমাকে পেটে না ধরলেও মায়ের মতই আদর যত্ন করেই বড় করেছি। তাই তোমাকে ছুয়েই বুঝতে পেরেছি এটা আমার হৃদ।

 

মামনীকে আলতো ভাবে জড়িয়ে নিয়ে বললাম

- আমি জানি তুমি আমাকে অন্নেক ভালোবাসো। তাইতো ছুটি পেতেই তোমার কাছে ছুটে এলাম।

 

- কখন এসেছো

 

- মাত্রই আসলাম। আর এসেই তোমার কাছে আসলাম দেখা করতে

 

- ভালো করেছো। একাই এসেছো না কি আরও কেউ সাথে এসেছে

 

- আমি ও নুর এসেছি। ড্রাইভার এসেছিল আমাদের রেখে ফিরে গিয়েছে। 

 

- ও। নিলা কেও নিয়ে আসতে

 

- আসলে মামনী তুমি তো জানই আপুর সামনে পরিক্ষা তাই আসতে পারে নি।

 

- ওকে। অনেক কথা হয়েছে। এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমাদের জন্য দুপুরের লান্স পাঠিয়ে দিচ্ছি। 

 

- হুম।

 

রুমে এসে দেখি মহারানী বিছানার উপর বসে আছে কোন হেলদোল নেই। টাওয়াল হাতে নিয়ে বললাম 

 

- ফ্রেশ হয়েছিস

 

কোনো জবাব নেই নুরের তাই আবারও বললাম

 

- উত্তর দিচ্ছিস না কেন

 

- কি বলব

 

- এতদুর যে জার্নি করলি ফ্রেশ হওয়া লাগবে না

 

- জানি না

 

বুঝলাম মহারানী কোনো কিছু নিয়ে চটে আছে। ওকে বিছানা থেকে নামার জন্য বললাম তবুও নামছে না। তাই জোর করে নামিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলাম।

 

ওকে সাওয়ার করিয়ে পোশাক পরিয়ে আমি সাওয়ার নিয়ে বাইরে এলাম। বেরিয়ে দেখি মামনী লান্স পাঠিয়ে দিয়েছে।

 

টাওয়াল বারান্দায় শুকাতে দিয়ে এসে দেখি যেভাবে ওকে রেখে গেলাম ঠিক সেভাবেই বসে আছে। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

 

নুরকেও খেতে বললাম। কিন্তু নুর খাচ্ছে না। তাই বললাম

 

- কি হলো খাচ্ছিস না কেন

 

- খেতে ভালো লাগছে না তাই খাব না।

 

- মার খেতে না চাইলে খেয়ে নে

 

- বললাম না, খাব না। তোমার খেতে ইচ্ছে হলে যত খুশি খাও আমি খাব না, খাব না, খাব না। এটাই শেষ কথা

 

নুর ওর কথা শেষ করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরল। কি হলো ব্যাপার টা। যাইহোক ওকে টেনে তুললাম। আমার পাশে বসিয়ে ওর দুগালে চুমু দিয়ে বললাম

 

- লক্ষি বোন আমার। এরকম করে না। একটু খাও নয়তো তোমার পেট ব্যাথা করবে। তখন তোমার অনেক কষ্ট হবে খেয়ে নাও লক্ষিটি

 

- ছাড় আমায় যত্তসব ঢং। আমার সাথে ঢং না করে ওই রিয়া টিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাও, আদর কর।

 

বুঝলাম মহারানীর রাগের কারণ। বললাম

 

- বড়দের নাম নিতে মানা করেছি না। আমি যেমন তোমার ভাই হই তেমনি রিয়ার ভাই আমি। জড়িয়ে ধরেছে তাতে কি হয়েছে তুমিও তো একই কাজ কর 

 

- আমি একশোবার বলব রিয়া-টিয়া, রিয়া-টিয়া

 

- ওকে সরি। নাও খেয়ে নাও

 

- খাইয়ে দাও

 

- ওকে

রাত সারে আটটা কি ন'টা। এখনো মামা বাসায় ফেরেন নি। টিভিতে সাউথ সিনেমা দেখছি আমি ও রিয়া। নুর আমার পাশে বসে আমার ফোনে গেমস খেলতে ব্যস্ত।

 

কলিং বেল বাজার শব্দে টিভির স্কিন থেকে দৃষ্টি চলে যায় দরজার দিকে। মামনী রাতের রান্না করায় ব্যাস্ত থাকায় আমাদের ভিতর থেকেই কাউকে কাউকে দরজা খুলে দিতে হবে।

 

রিয়া উঠতে যাবে ওকে মানা করে শেষ মেষ আমিই গেলাম উদ্দেশ্য দরজার বাহিরে কে তাকে দেখার জন্য। দরজা খুলতেই দেখলাম মামা ঘামার্থ শরীরে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন।

 

আমাকে দরজা দেখে বাসার ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলেন।

 

- তুমি কেন এলে। তোমার মামনী কোথায় 

 

- মামনী তো রান্না ঘরে রান্না করে। তাই আমিই খুলে দিলাম

 

- ভালো করেছো। দেখছোই তো এখন ফ্রেশ হতে হবে

 

- হুম।

 

____________

 

রাতের ডিনার শেষে নুরকে রিয়ার রুমে শুইয়ে দিয়ে মামা মামনী ও রিয়ার সাথে আড্ডা দিয়ে ১১ টায় আমার রুমে এলাম ঘুমনোর জন্য।

 

ঘুমোতে ঘুমোতে সারে এগারো টা বেজে গেছে। মাঝ রাতে মনে হলো কেউ আমার উপর সুয়ে আছে। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি নুর আমার সাথে একদম চিপকে আছে।

 

নুরকে এখানে দেখে আমি পুরাই অবাক। নুরকে রেখে এলাম রিয়ার রুমে। তাহলে নুর এখানে কখন আসলো। যাগগে সেসব কথা। 

 

অতসব সাতপাঁচ না ভেবে সুয়ে পরলাম।

 

ঘুম ভাঙলো পাখির কিচির মিচির শব্দে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রিয়াদের বাসার বাইরে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান রয়েছে।

 

সেখানে এলাম কিছু সময় হাটাহাটি করার উদ্দেশ্য। সবশেষে একটু বেয়াম করে নিলাম। এটা আমার দৈনন্দিন কাজের রুটিনের ভিতরই অন্তর্ভুক্ত উচ্চ শিক্ষায় লাভের উদ্দেশ্যে লাভের উদ্দেশ্য আজ দেশ ছেড়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাবার ই সিদ্ধান্ত। সবাইকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও যেতে তো হবেই।

 

সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে নুরের জন্য। বার বার ওর কান্না মাখা মায়াবী মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আজ যখন আসছিলাম তখন আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কতই না কান্না করছিল।

 

যাকে কখনো কেউ কান্না করতে দেখেনি। আজ তার কান্নায় সমস্ত বাসা যেন বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিল যেন। শুধু বার বার বলেছিল আমি যেন কোথাও না যাই।

 

কিন্তু আজ ওর কথা শোনার মত কেউ ছিল না। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষার নাম করে আমাকে যে ওর থেকে দুরে রাখার জন্যই পাঠানো হচ্ছো।

 

সে কথা কি নুর কখনো বুঝবে। বুঝবেই বা কি করে, ওর ঐটুকুন মাথায় এসব কি আর ভাবার সময় আছে। না নেই। হয়তো কখনোই আসবে না।

 

বিলেতে আসার আজ কেটে গেছে কয়েক টি মাস। নুরকে দেখতে খুব করে ইচ্ছে করছে। চাইলেই ফোনে দেখা সম্ভব ওকে। কিন্তু তাতে কি চোখে শান্তি মিলে।

 

সব সময় ওকে মিস করি। মিস করি ওর বাচ্চামি সভাব গুলো, মিস করি ওর করা দুষ্টুমিকে তার থেকে বেশি মিস করি আস্ত নুরটাকেই।

 

- নুর

হ্যালো

কথা বলছো না কেন

 

- হুম

 

- আমার সাথে কথা বলবি না

 

- কি বলব

 

- কেমন আছো

 

- অনেক ভালোই আছি

 

কথাটি বলতে না বলতেই কান্না জুড়ে দিল নুর। যখন থেকে এখানে এসেছি এ যেন ওর নিত্যদিনের কাজ। এত করে বলি কান্না না করতে। তবুও কান্না করবেই।

 

যাকে সবসময় হাসি খুশি রাখতাম। আজ সে আমার অনুপস্থিতিতে চোখের জল ফেলতে একটু ভাবে না।

 

- নুর কান্না বন্ধ কর

 

- তুমি ফিরে আসো ভাইয়া। কত দিন হয়ে গেল তোমাকে দেখি না। শুধু একবার এসে যাও। আবার না হয় ফিরে যেও। কখনো আর আসতে বলব না।

 

- এটা হয় না। আর একটু অপেক্ষা কর ঠিক ফিরে আসব।

 

- নিলা আসতে এত লেট করলে যে কোনো সমস্যা হয়নি তো আসতে

 

নিলা পার্কের ভিতর তাদের দেখা করার স্থানে আসতেই নিশান ওকে উক্ত কথাটি বলে উঠে

 

- আর বলিও না। তুমি তো জানোই হৃদ বিলেতে গেছে। হৃদ যখন ছিল কোন সমস্যাই ছিল না। এখন হৃদ নেই হয়েছে আমার জ্বালা। 

 

নুর সারাদিন ঠিক মত না খেয়ে বিছানায় পরে থাকে। বড় বাবা বাসায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই। যখনই অফিসের কাছে বেরবেন ওমনি মেয়ে মাথায় উঠে বসে পরে।

 

মা বড় মাও কিছুইতেই ওকে খাওয়াতে পারে না। আমি কত ভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে খাওয়াই আমিই জানি। কিন্তু আজ সব কিছু একদম বিগড়ে গেছে।

 

মেয়ে কিছুতেই খাবে না। কত ঝানাই পানাই দিয়ে খাওয়ালাম ওকে। একদম গায়ের ঘাম ছুটিয়ে দিছলো আমার।

 

- এখন ওসব বাদ দাও।

 

- হুম

 

- কখন এসেছো

 

- বেশি সময় হয়নি। এই হবে হয়তো পাঁচ মিনিট। 

 

- আমিতো ভেবেছিলাম আজ আসতে অনেক লেট করেছি। কিন্তু না একদম ঠিক সময়ই এসেছি।

 

- হুম। ভাগ্যিস রিক্সা পেতে লেট হয়েছে নাহলে অপেক্ষা করতে হতো আমার

 

অভিমানের সুরে নিলা বলল

 

- আমি লেট করলে তুমি চলে যেতে বলে মনে হচ্ছে 

 

- এ কথা আমি কখন বললাম

 

- বল নি ঠিকই। কিন্তু আমি সবই বুঝি। আগের মত বাচ্চাটি নেই আমি

 

- কে বলেছে তুমি বাচ্চা নেই এখন।

 

- আমিই বলছি অন্য কাউকে কেন বলতে হবে।

 

নিলার নাকে আঙুল দিয়ে টেনে বললাম

 

- তুমি এখনো সেই সতেরো বছর বয়সী নিলার মতই রয়েছো। যে আমার উপর অভিমানের পাহাড় চুড়া বানিয়ে ফেলে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সে চুড়াকে দুমরে মুচড়ে শেষ করে দিই।

 

বুনন করি আমার ভালোবাসার তাজ মহল। ভালোবাসি নিলা। সেই প্রথম দিনের ন্যায়।

 

- আমিও ভালোবাশি।

 

Comments
Read more