প্যারাডক্স ও অসীম লুপ

একটি স্ববিরোধী সমস্যা।

চলুন আপনাদেরকে একটা গল্প বলি।

এক রাজ্যের রাজার ছেলে খুন হয়ে গেছে। রাজা তো ভয়ংকর রকমের অস্থির ও রাগান্বিত । তিনি তার সৈনদের নির্দেশ দিলেন, রাজ্যের প্রবেশ পথে সকল লোক কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। সাথে এটাও বলে দিলেন, কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে তাহলে তাকে সাথে সাথে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে আর সত্যি বললে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।

এখন রাজ্যের প্রবেশপথে সৈনিকেরা যাকেই জিজ্ঞাস করে সে খুন করেছে কিনা যেই বলে আমি খুন করিনি। আর সৈন্যরা ভাবে এই ব্যাটা মিথ্যা কথা বলতেছে। এই ভেবে ফাসি দিয়ে দেয়। এরকম সময় একটা লোককে জিজ্ঞাসা করা হলো সে খুন করেছে কিনা? লোকটি উত্তরে বলল- হ্যাঁ, সেই খুন করেছে।

এখন রাজার সৈন্যরা তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গেল। তখন হঠাত একজন বলল সত্যি কথা বললে তো ফাঁসি দেওয়া যায় না। তারমানে লোকটাকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু লোকটাকে ছেড়ে দিলে তো তার কথা মিথ্যা হয়ে যাবে। আর সে মিথ্যা কথা বললে তো তাকে অবশ্যই ফাঁসি দেওয়া লাগবে। কিন্তু ফাঁসি দিলে আবার তার কথা সত্যি হওয়ার কারণে তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। উহ, কি ঝামেলা.....................

সত্য , মিথ্যার এই খেলা কোনদিনও শেষ হবে না । এই রকম অবস্থাকে বলে প্যারাডক্স। যার কোন সমাধান নেই। যে নিজেই ন নিজের বিরোধী।

কেন এই প্যারাডক্স তৈরি হয়?

  • বিপরীত শর্ত: এই প্যারাডক্সের মূলে রয়েছে দুটি বিপরীত শর্ত:
    • সত্য বললে ছেড়ে দেওয়া হবে।
    • মিথ্যা বললে ফাঁসি দেওয়া হবে।
  • স্ব-পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী: যখন কেউ স্বীকার করে যে সে হত্যা করেছে, তখন সেই বিবৃতি নিজেই নিজের বিরোধী হয়ে পড়ে।
  • অসীম লুপ: এই প্যারাডক্সে, যুক্তি একটি অসীম লুপে আটকে পড়ে এবং কোনো নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায় না।

এই প্যারাডক্সের গুরুত্ব:

  • দ্বৈততা: এই প্যারাডক্স আমাদেরকে সত্য এবং মিথ্যা, বিশ্বাস এবং সন্দেহের মতো দ্বৈততার প্রতি আলোকপাত করে।
  • যুক্তির সীমাবদ্ধতা: এটি দেখায় যে যুক্তি সবসময়ই সঠিক উত্তর দিতে পারে না।
  • ভাষার অস্পষ্টতা: ভাষার অস্পষ্টতা এবং ব্যাখ্যার ভিন্নতা এই ধরনের প্যারাডক্স সৃষ্টি করতে পারে।

এই প্যারাডক্স আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে যে সত্য এবং মিথ্যা কখনো কখনো এত জটিল হয়ে উঠতে পারে যে আমরা তা সহজেই বুঝতে পারি না। এটি আমাদেরকে সতর্ক করে যে, যুক্তি এবং তর্ক সবসময়ই আমাদেরকে সঠিক উত্তর দিতে পারে না।


Adeel Hossain

242 Blog posts

Comments