নুর এই তো কয়েক দিন আগেই সতেরোতে পা রাখলো। এখন নিজেই নিজের কাজ করতে পারে। কাউকে আর খাইয়ে দিতে হয় না।
বিছানা গুছিয়ে দিতে হয় না। হৃদের কাছে আর বায়না করে না ভাইয়া আজ তোমার কাছে ঘুমাবো। একা ঘুমাতে পারি না ভয় করছে।
এখন নুর আগের তুলনায় স্বাভাবিক। সব কিছুই বুঝতে শিখছে। আগের মত আর বাচ্চামি করে না। ভালোমন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে।
এখন আর কেউ সেই ছোট্ট নুরের বাচ্চামিতে মেতে উঠে না। হৃদের অভাব এই বাচ্চা নুরকে সব কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে।
বাগান করা নুরের বেশ পুরনো অভ্যেস। হৃদকে অনেক বার করতে দেখেছিল। হৃদের চলে যাওয়ার পর হৃদের বাগানকে বড়োই যত্নে রেখেছে নুর।
বাগান করা আজ কাল নুরের একটু বেশিই প্রিয়। তাইতো হৃদয়কে প্রশান্তি দিতে সকাল সকাল ছুটে এসেছে বাগানে থাকা গাছগাছালির কাছে।
বাগানে আসতেই নুর লক্ষ করল বাগানের এক কোনো বেশ বড় একটি গোলাপ ফুটেছে। যা দেখে এক আকাশ সম প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় নুরের বক্ষ জুড়ে।
এরই মাঝে নিলা ওর বেলকনি থেকে ডেকে বলল হৃদ কল করছে। হৃদের কল করার কথা শুনে সব কিছুকে ফেলে দ্রুত হাতে-মুখে পানি দিয়ে ছুটলো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সাথে কথা বলার উদ্দেশ্য।
হৃদ কল করলেই ফোন নিয়ে হৃদের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে চুপিসারে কথা বলে নুর। যেন কেউই শুনতে না পারে বুঝতে না পারে কি হচ্ছে হৃদ-নুরের কথপোকথন। যেন সবকিছুই খুবই গোপন কিছু নিয়ে কথা বলছে ওরা। কেউ শুনে ফেললেই বিপদ।
প্রতিবারের মতই এবারও ফোন কানে ধরেই হৃদের রুমের দিকে ছুটতে লাগলো নুর। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ছোটাছুটির ফলে হাঁপাতে হাঁপাতে নুর বলে
*কেমন আছো
*ওই আগের মতই। তুমি কেমন আছো
*তোমার সাথে কথা বলছি তাই ভালো আছি।
* নাস্তা করেছিস
*হুম। তুমি খেয়েছো
*মাত্রই রাতের খাবার খেলাম।
*ভালো করেছো। আজ কি হয়েছো জানো
*বল নি তো
-তাইতো। বলছি তাহলে শুনো
*হুম বলো
*হুম। আজ বাগানে বিশাল বড় লাল টুকটুকে গোপাল ফুটেছে। তুমি যদি থাকতে তুমিও দেখতে পেতে।
বলতে বলতে নুরের হাসি হাসি মুখে দুঃখের ছায়া নেমে এলো।
*আসবো খুব দ্রতই আসবো
*তুমি তো বার বার একই কথা বল। আসো নি তো কখনো
*এবার সত্যিই আসব
হৃদের বিলেত যাওয়ার আজ বেশ কয়েকটি বছর চলে গিয়েছে। ফিরবো ফিরবো করে আর ফিরে আসা হয়নি। ওখানেই রয়ে গেছে সকলের আড়ালে।
* রিয়া আর কতক্ষণ লাগবে তোর
-*এই তো আমি রেডি।
*বাহ তোকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
* ধন্যবাদ। তাছাড়া সুন্দর তো লাগতেই হবে।
* তা তো লাগবেই তোর মত ঘন্টার পর ঘন্টা মেক-আপ করলে পেত্নীকেও বিশ্ব সুন্দরী লাগবে।
*চুপকর শাঁক*চুন্নি। শুধু কি আমিই মেক-আপ ব্যবহার করি তুই কি ধোঁয়া তুলশি পাতা।
*আমি এমনিতেই অনেক সুন্দর দেখতে তাই আমাকে ওসব মেক-আপ দিতে হয় না।
* আর হাসাসনা আমাকে। কেউ যদি দোর এসব কথা শুনে পাগল ভেবে তখন না আবার তোকে পাবনায় রেখে আসে।
*হয়েছে বোন আমাকে এবার মাফ কর। এখন চল লেট হয়ে যাচ্ছে।
*হুম চল
ঢিলেঢালা বোরকা পরিহিত এক রমনি নিরালায় কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে হেটে চলেছে। হাতে পায়ে গ্লাভস। মাথায় হিজাব চোখ দুটোই বাহির হতে দৃশ্যমান।
এ আর কেউ নয় নুর। হৃদ বাইরে যাওয়ার পর নুর বার বার বলার পরও হৃদ ফিরেও আসে নি আর না ভিডিও কলে দেখা দিয়েছে নুর কে।
যে কারণে নুরও শপথ নিয়েছে ওর ফেইসও আর কাউকে দেখাবে না। বাবা-মায়ের হাজারো জোড়াজুড়ির পরও নুর হার মানে নি। তখন থেকেই এভাবেই চলে যাচ্ছে।
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডায় মত্ত নুর ও ফাইজা। ফাইজা নুরের একমাত্র ফ্রেন্ড। গালস্ স্কুলে পড়ার কারণে ছেলে ফ্রেন্ড হয়ে উঠেনি।
তাছাড়া নুর এমনিতেই ছেলেদের থেকে দুরে দুরে থাকে। হৃদ ছেলেদের থেকে দুরে থাকতে বলায় তা আরও দৃঢ় ভাবে মেনে চলছে।
তখনি কয়েকজন ছেলে ওদের পাশে চেয়ার টেনে বসে নুরের উদ্দেশ্যে বলে
*হাই সুইটি
ছেলেগুলোকে সুবিধার মনে হচ্ছে না নুরের তাই নুর ফাইজার হাত ধরে চলে যেতে নিচ্ছিলো। তখনি ওদের ভিতরে থাকা নুরকে যে ছেলেটি কথা বলেছিল সে বলে
*আরে যাচ্ছো কোথায় নাম তো বলে যাও
নুর কথা না চেয়ার থেকে উঠে এসে রাস্তা আগলিয়ে দাঁড়ায়। যা দেখে নুর ভয় পেয়ে যায়। কাপা কাপা গলায় বলে
*রাস্তা থেকে সরুন। আমাদের যেতে হবে
*আরে এত তারা কিসের
*দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু
*খারাপের এখনো কিছুই করিনি।
নিজের গলায় হাত দিয়ে কয়েকবার স্পর্শ করে আবারো বলে
* এখন তুমি যদি চাও
*চুপ আর একটাও বাজে কথা বলবেন না
সামনে এগিয়ে মাথা ঝুঁকে মুখের কাছাকাছি এনে বলে
*সুন্দরী আমি কি বাজে কথা বলতে পারি। তোমার ওই নেশালো চোখে মাথাল আমি। তোমার চোখে চোখ রেখে হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
ভেবে দেখিও। এই নিরবকে একবার কাছে পাওয়ার জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে থাকে। আর আমিতো তোমাকে আমার রানি করে রাখতে চাই।
তুমি রাজি থাক কিংবা না থাক। তোমাকে আমার করে ছাড়বোই মাথায় রেখো।
সামনে থাকা মানুষটির এসব নোংরা কথা কানে যেতেই চোখ দিয়ে পানি বইতে লাগলো। ছুটে চলে এলাম ওখান থেকে। কি সব জঘন্য কথা বলছিল।
ওগুলো না শোনার আগে মরণ হলো না কেন।
* সরি
*এতক্ষণে বেরোনোর সময় হলো তোমার।
*খুবই ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিল আজ তাই মিটিং শেষ করেই ছুটে এলাম আমার জানটার কাছে।
*হয়েছে।
- তুমি কি রাগ করেছো
* না।
* তাহলে আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন।
*এই যে তাকালাম হয়েছে।
*কি হয়েছে বলতো। তুমিতো এমন কখনো করনি
*আমাদের বয়সের দিকে খেয়াল আছে
*হুম আছে তো। ক'দিন পর আমার সাতাশ হবে তোমার বয়স উনত্রিশ।
* তাহলে বিয়ে কি করতে হবে না
* আহা এত বিয়ে নিয়ে তাড়া কিসের।
* তো তাড়া থাকবে না। আর কখন বিয়ে করব বুড়ো হয়ে যাওয়ার পর।
* হতে পারে
* এই এরদম মজা করবে না। আমি সিরিয়াস।
*আমি কখন বললাম আমি মজা করছি। আমিও তো সিরিয়াস।
হাসতে হাসতে কথাটি বলল নিলা
* তোমার যা মন চায় কর। এদিকে বাসায় মা বাবা মেয়ে দেখতে শুরু করে দিয়েছে। আর তুমি আছো তোমার মজা নিয়ে।
* মেয়ে দেখছে ভালো কথা বিয়ে করে নাও। তারপর তোমার গুলুমুলু বাবুরা এসে আমায় আন্টি বলে ডাকবে। আমি আদর করে চকলেট কিনে দিব। ওরা মজা করে খাবে। কতই না মজা হবে।
- নিলা। তোমাকে দিব একচর। বেয়াদব। অন্য মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কি তোমায় ভালোবেসেছি। একসঙ্গে সারাজীবন পথ চলব বলেই এ হাত দুটি আকরে নিয়েছি।
মৃত্যুর আগে ছাড়ছি না। বাবা-মাকে সামনে সপ্তাহে তোমাদের বাসায় যাব বিয়ের কথা বলার জন্য মনে রেখ।
- তোমাকে আমি আগেই বলেছি হৃদকে ছাড়া আমি বিয়ে করতে পারব না।
- আর কতদিন বল। হৃদ গেছেতো গেছেই আসার কোনো নাম নেই। আর কতদিন বল।
যত দিন হৃদ আসছে না ততদিন।
আল্লাহ কি কপাল দিলে বলোতো। আগে জানতাম প্রেমিকা তার প্রেমিককে বিয়ের জন্য প্রেসার দেয়। আর এদিকে প্রেসার দিচ্ছি আমি। এই ছিলো আমার কপালে।
ওলে ওলে আমার বাবুটা রে। রাগ করে না। এই যে আদর করে দিচ্ছি।
বলেই ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম।