শীতের সকাল,

শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসে সূর্যের মৃদু কিরণ আর গরম চায়ের কাপে থাকে এক অন্যরকম প্রশান্তি।

শীতের সকাল আমাদের জীবনের এক মিষ্টি অনুভূতি বয়ে আনে। চারদিকে কুয়াশায় ঢাকা পরিবেশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর জমাট বেঁধে থাকা হিম পরিবেশে শীতের সকাল অন্যরকম এক সৌন্দর্য এনে দেয়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলে দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ রূপ। চারদিকে ছড়িয়ে থাকে শিশিরের বিন্দু, যা ঘাসের উপর মুক্তোর মতো ঝলমল করে। দূরে কোথাও দেখা যায় গাছপালায় সূর্যের আলো আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে, যেনো নতুন দিনের আগমন বার্তা নিয়ে এসেছে।

 

এই সময় প্রকৃতি থাকে যেনো একেবারে নীরব। পাখিদের কিচিরমিচির ধ্বনি শীতের সকালকে আরও স্নিগ্ধ করে তোলে। মানুষ শীতের সকালে একটু বেশি গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে চায়। তাই খুব সকালে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম থাকে। যারা প্রাতঃভ্রমণে বের হন, তারা মোটা শীতবস্ত্র পরিধান করে ঠাণ্ডাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। শীতের বাতাস মুখে লাগলে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভূত হয়।

 

গ্রামবাংলার শীতের সকাল যেন আরও মনোমুগ্ধকর। গ্রামীণ পরিবেশে মাটির ঘর, ধানের খেত, আর সবুজের মাঝে শীতের প্রভাব যেন বেশি করে অনুভূত হয়। গ্রামের নারীরা খুব সকালে উঠেই শীতের কুয়াশা কাটিয়ে মাঠে কাজ করতে বেরিয়ে পড়েন। শীতের সময়ে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য নারকেল গাছের মতো খেজুর গাছের মাথায় উঠে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই রস দিয়ে পিঠাপুলি তৈরি করা হয়, যা শীতের সময়ের অন্যতম আকর্ষণ।

 

শহরের শীতের সকাল আর গ্রামের শীতের সকালে কিছু পার্থক্য থাকলেও, উভয়ের মধ্যেই এক ধরণের প্রশান্তি বিরাজ করে। শহরের মানুষজন একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে এবং শীতের সকালে একটু বেশি আরামদায়ক থাকার চেষ্টা করে। সকালে কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে অফিস বা স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। হাতে গরম কফির কাপ কিংবা চায়ের কাপ শীতের সকালে তাদের উষ্ণতার অন্যতম উৎস হয়ে ওঠে।

 

শীতের সকালে রাস্তার পাশে দোকানগুলোতে ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠার ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। পিঠার এই গন্ধ যেন শীতের সকালের সাথে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। পথচারীরা সেই দোকানের ধারে দাঁড়িয়ে পিঠা খেয়ে শীতের সকালকে আরও মধুর করে তোলে।

 

শীতের সকালে সূর্যের কিরণ খুব ধীরে ধীরে উঁকি দেয়, যেন শীতের সাথে এক প্রাকৃতিক খেলা চলছে। আকাশ থাকে মেঘলা, কখনো আবার নীল আকাশের কোলে সাদা মেঘের ভেলা দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের আলোতে কিছুটা উষ্ণতা আসে, তবে শীতের তীব্রতা তাতে কমে না। দুপুরের পর শীত কিছুটা কমে এলেও, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আবার ঠাণ্ডা অনুভূত হতে শুরু করে।

 

শীতের সকালে বসে বই পড়া, কম্বলে জড়িয়ে এক কাপ চা হাতে নিয়ে প্রকৃতি দেখা—এইসব আমাদের জীবনের ছোট্ট কিন্তু মূল্যবান মুহূর্তগুলোকে আরও বিশেষ করে তোলে। শীতের সকাল যেমন ঠাণ্ডা, তেমনই শান্ত। আর এই শান্ত সকালে প্রকৃতি যেন নিজেই এক কবিতা হয়ে ওঠে, যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়।

 

এমন শীতের সকাল আমাদের মনে দীর্ঘদিন ধরে থাকে। কারণ এর প্রশান্তি, এর সৌন্দর্য, আর এর অনুভূতি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।


Sagor Hajong

69 Blog posts

Comments